War cemetery Cumilla || ওয়ার সিমেট্রি কুমিল্লা

আসসালামু আলাইকুম। হ্যালো বন্ধুরা ,আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আজকের দিনটি খুবই চমৎকার ।আকাশে কোন মেঘের ছায়া নেই। সূর্য তার আপন মহিমায় আলো চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

যাই হোক, মূল কথায় আসি ।আজ আমি আপনাদের সাথে "ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি "নিয়ে আলোচনা করব। গতবছরের একবারে শেষ দিকে আমি এবং আমার এক কলিগ দুজনে মিলে ওয়ার সিমেট্রি পরিদর্শন করে এসেছিলাম। এটি একটি ইতিহাস নির্ভর দর্শনীয় স্থান ।যা থেকে আমরা অনেক কিছুই জানতে পারি।

ওয়ার সিমেট্রি

20191218_142051.jpg

এটি মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অর্থাৎ ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে তৎকালীন বার্মায় তথা বর্তমান মিয়ানমারে নিহত কমনওয়েলথ সৈন্যদের স্মৃতি রক্ষার্থে তৎকালীন বার্মা তথা বর্তমান মিয়ানমার,আসাম এবং বাংলাদেশে সর্ব মোট নয়টি সমাধি ক্ষেত্র তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওই সময়টাতে বার্মায় প্রায় ৪৫ হাজার সৈন্য নিহত হয় ঐ সকল সৈন্যদের স্মৃতি রক্ষার্থে এই সমাধি ক্ষেত্র তৈরি করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ দুটি ওয়ার সিমেট্রি আছে। এর একটি কুমিল্লাতে এবং অন্যটি চট্টগ্রামে।
MYXJ_20191218141054_fast.jpg

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রির অবস্থান

এটি কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত ময়নামতি সেনানিবাসের কাছেই অবস্থিত। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট তথা ময়নামতি সেনানিবাস থেকে দেবিদ্বার রোডের দিকে 10 মিনিট হাঁটলেই হাতের বাম দিকে ওয়ার সিমেট্রির তথা এই সমাধি ক্ষেত্রের অবস্থান।

স্থানীয়দের কাছে এর পরিচিতি

আমরা একে ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি নামে জানলেও , এটি স্থানীয়দের কাছে ইংরেজ কবরস্থান নামে পরিচিত ।কারণ এখানে যে সৈন্যদের সমাহিত করা হয় ।তাদের অধিকাংশই ব্রিটিশ নাগরিক অর্থাৎ ইংরেজ। আর সে কারণেই এটি স্থানীয়দের কাছে ইংরেজ কবরস্থান নামেই পরিচিত।
FB_IMG_1599457407157.jpg

ওয়ার সিমেট্রিতে প্রবেশ ঘর

প্রথমে ঢুকতেই একটি তোড়ন ঘর আছে ।তারপাশেই এই সমাধি ক্ষেত্রে বর্ণনা একটি বোর্ডে ভালো করে লিখা আছে।
20191218_141401.jpg

কবরের সংখ্যা

এই সমাধি ক্ষেত্রে সর্বমোট ৭৩৬ টি কবর আছে। সংখ্যার দিক দিয়ে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কবর আছে সৈনিকের কবর, তারপরে আছে বৈমানিকের কবর। যারা যুদ্ধে নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই খিষ্টান, হিন্দু এবং মুসলমান। প্রায় সকল ধর্মের সৈন্যই আছেন। গেইটের ভিতরে ঢুকতেই দেখা যায় ২৩ টি কবরে ২৩ জন বিমান সৈনিকের কবর এক জায়গা দেওয়া আছে। আর সেখানে সুন্দর করে লেখা আছে,
**These plaques bear
the names of twenty three Airmen whose remains lie
here in one grave **

কবরের ফলকে সৈন্যদের পরিচিতি

প্রতিটি কবরের ওপরে একটি ফলক আছে। আর সেই ফলকের উপর ওই সৈনিকের নাম, দেশের নাম, জন্ম ও মৃত্যু তারিখ লেখা আছে ।আর খ্রিষ্টান হলে তার কবরের ফলকে ক্রুসেড চিহ্ন এবং মুসলিম হলে আরবি হরফ লেখা থাকে।
এই ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে প্রতিবছরই অনেক মানুষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈন্যদের সম্মান জানাতে ভিড় করে। অনেকেই পরিবার নিয়ে বেড়াতে যান। ওয়ার সিমেট্রিতে শুধুমাত্র সমাধিক্ষেত্র আছে তাই নয়। সমাধি ক্ষেত্রের চারপাশে সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছ লাগিয়ে ,পরিবেশটাকে নান্দনিক রূপে সাজিয়ে তুলেছে ,ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি কর্তৃপক্ষ।
MYXJ_20191218142926_fast.jpg

চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন দৃষ্টিনন্দন সমাধিক্ষেত্র টি এবং সম্মান জানিয়ে আসতে পারেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তৎকালীন বার্মায় নিহত সৈন্যদের প্রতি।আমার কাছে এটি খুবই ভালো লাগার একটি স্থান । আমি এই জায়গাটি অনেকবার পরিদর্শন করেছি।যতবার যাই ততবারই মুগ্ধ হয়ে যাই ।কারণ এখানে যারা ঘুমিয়ে আছেন ।তাদের অধিকাংশই তরুণ বয়সের ছিল।অনেকের কবরের ফলকে দেখলাম যাদের বয়স মাত্র ১৮ বছরের ছিল। আর ১৮ বছরের বয়সের বালকদের শক্তি ,সাহস সবই বেশি থাকে। এই তরুণদের দমিয়ে রাখা যায় না।
1599446209928.jpg

আর এই সমাধি ক্ষেত্রে যতবারই যাই ততোবারই এই ১৮ বছর বয়সের তরুণদের কবরের দিকে তাকালে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের" আঠারো বছর বয়স "কবিতার কথা মনে পড়ে যায়। কারণ এই কবিতাটি আমার ভীষণ পছন্দের একটি কবিতা । এই কবিতাটি আমি অনেক অনেক বার পড়েছি। তাই এই কবিতার কিছু লাইন শেয়ার করলাম।

**আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ
র্স্পধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।

আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়–
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।

এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।

আঠরো বছর বয়স ভয়ঙ্কর
তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা,
এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর
এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা।**

  • সমাধি ক্ষেত্রের সকল সৈন্যদের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা জানিয়ে এখানেই শেষ করলাম।*

কে আমি
MYXJ_20200109171911_fast.jpg

আমি মোঃ কাউছার হাসান। আমি বাংলাদেশী এবং নিজেকে বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি ।কারণ আমি আমার দেশকে অনেক বেশি ভালোবাসি। কারণ এটি আমার মাতৃভূমি।আমি শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছি।আমি যখন আমার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নতুন কিছু শিখাতে পারি ।আমার কাছে তখন অন্য রকম অনুভুতি হয়। আমিও প্রতিদিন নতুন কিছু করতে পছন্দ করি, আমি নতুন নতুন লোকের সাথে মিশতে পছন্দ করি এবং নতুন কিছু শিখতে পছন্দ করি। আমি নিজেকে সর্বদা প্রকৃতির ছাত্র হিসাবে ভাবি। কারণ প্রকৃতি থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমি কেবল শিখার জন্য ছোট চেষ্টা করি। আমি ভ্রমণ করেতে ভালোবাসি. ভ্রমণের মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। শিখতে ও লিখতে ভালোবাসে। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই লিখতে চেয়েছিলাম এবং সে কারণেই আমি প্রায়ই লেখার পিছনে পড়ে যাই। আমি মানুষকে শ্রদ্ধা করার চেষ্টা করি। আপনি যদি কাউকে সম্মান করেন তবে আপনার আত্মমর্যাদা হ্রাস পাবে না বরং বৃদ্ধি পায়।।

সবাইকে বিশেষ ধন্যবাদ।আমাদের এই লেখাতে যদি কোন ভুল থাকে, দয়া করে সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সৃষ্টিকর্তা সকলকে ভাল রাখুক। নিরাপদে থাকবেন, ভাল থাকবেন

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Logo
Center