সরকারি চাকরি, মধুর হাঁড়ি!

রাজনৈতিক স্বৈরাচার ছাড়াও আরো একটা পক্ষ আছে, যারা কোটা-সংস্কার আন্দোলনের ব্যাপারে খুব একটা সোচ্চার না, বরং কটাক্ষই করছে সুযোগে।
কারণ সরকারি চাকরি মধুর হাঁড়ি।
অবাধ দুর্নীতির সুযোগ তাতে। তাই সকলে মধু'র ভাগিদার হইতে এরকম উন্মাদ। রাণীমা মধুর হাঁড়ি থেকে বঞ্চিত করছে বলে তাদের রাগ। মেধাবীদের, দুর্নীতি বিরোধীদের সরকারি চাকরিরতো লোভ হবার কথা না!

চাকরিতে দুর্নীতি সবক্ষেত্রেই আছে, কিন্তু সরকারি চাকরিজীবীদের দুর্নীতির কথায় কেবল উঁচু গলায় আওড়াতে দেখা যায়। অমুকের ড্রাইভার, তমুকের সেক্রেটারি, ২ পয়সা বেতনের কর্মচারি লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক।
কিন্তু আমার প্রশ্ন হইলো এইরকম অবস্থা কত শতাংশ সরকারি চাকুরীজীবির?
দেশে হাজার হাজার সরকারি প্রতিষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি করছে, তার মাঝে কয়জন আবেদ-আলীদের মতো মিলিওনেয়ার?

মানলাম, সরকারি চাকরি মধুর হাঁড়ি, তাই সেটার ভাগ চায় সকলে।
কিন্তু সরকারি চাকরিতো, সমগ্র চাকরির একটা অংশই।
সমগ্র চাকরির ধরণের মধ্যে প্রায় ৪০% এরও বেশী চাকরি, সরকারি চাকরির অধিভুক্ত।
এখন প্রায় অনুন্নত একটা দেশের এইরকম ড্রাস্টিক বেকারত্বের প্রেক্ষাপটে ৪০% চাকরি সম্ভাবনা বাতিল করে দিবে তালিকা থেকে?

আমার ব্যাকগ্রাউন্ডের কথাই বলি, আমার ব্যাচমেটদের ৯০-৯৫% সরকরি চাকরি করে।
আমি নিজে সরকারি চাকরি পছন্দ করিনা বলে কখন সেদিকে পা-ই বাড়াই নাই।
কারণও আছে অবশ্য।
আমি যেদিন রাজশাহী মেডিক্যাল থেকে ইন্টার্ন শেষ করে বেরিয়েছিলাম, আমাদের স্টুডেন্ট হিসাবে শেষ দিন উদযাপন শেষে আমি মেডিক্যালের চিরপরিচিত, শত স্মৃতিচারিত বিল্ডিংকে সেলাম ঠুকে বলেছিলাম, দেশী হাসপাতালে (সরকারি বা বেসরকারি) আমি আর চাকরি করতে যাচ্ছিনা!
বেকারত্ব যেমন কঠিন, একমাত্র প্রাইভেট পাবলিক হাসপাতাল, আর কিছু প্রাইভেট কলেজ ছাড়া এদেশে নার্সিং-স্টুডেন্টদের কোনো ভবিষ্যৎ নাই সরকারি চাকরি ছাড়া।

এমতাবস্থায় তবুও আমাকে দেয়া আমার সে কথা আমি রেখেছি।
অন্তত এখন অব্দি রাখতে পেরেছি।
ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার কথা ভেবে শংকা হয়না তা নয়। ঘাড়ে দায়িত্ব থাকলে সে শংকা রীতিমত সঙ্কট।
কিন্তু আমি যেচে এই সঙ্কটে থাকি,বাঁচি।
কারণ, আমি অনন্য সাধারণ, আমি ব্যক্তিসত্বা হিসাবে ভিন্নরকম। কিন্তু সবাই এরকম না।
কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই সাধারণ, সামাজিক "নরমাল" স্কেলের আওতাভুক্ত। কেউ কেন অনিশ্চিত জীবন বেছে নেবে যেখানে নিশ্চয়তার সুযোগ ষোলোআনা?

প্রাইভেট চাকরির প্রতি এদেশের মানুষের এখনো ভরসা নাই সরকারি চাকরিরি মতো। ব্যক্তিমালিকাধীন এসব প্রতিষ্ঠানে, তা যত বড় আর প্রতিষ্ঠিতই হোক না কেনো, এই গরীব দেশের সমগ্র জনসংখ্যার ৭০-৮০% নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের কাছে একটা নিশ্চিন্তের চাকরি সংসার চালাতে বাঞ্চনীয়।
সরকারি চাকরি সহজে না যাওয়ার ব্যাপারটা তাই সবাইকে তাড়িত করে এই একদম অনিশ্চিত জীবনে একটু নিশ্চয়তার আশায়।
দোষণীয় নয়।

আমরা জাতি হিসাবে আচারে, অভ্যাসে, চিন্তায়, বৃত্তিতে এখনো আদিম, গোঁড়া, কট্টর, আর সহজাত প্রবৃত্তিক।
যাদের চাকরি দরকার, তাদের চাকরিই লাগবে, কারণ ব্যবসার সক্ষমতা নেই, সাবজেক্টিভ কট্টরতায় ভেরিয়েশন নেই রিক্রুটমেন্টে, পার্ট-টাইম কাজ-কর্মের সুযোগ নেই।
সবটারই কারণ দেশে সামগ্রিকভাবে আর্থিক স্বাচ্ছল্য নাই। সমগ্র দেশের অর্ধেক টাকা অধিকারে আছে দেশের ১/৫ জনগোষ্ঠীর কাছে।

সেরকম একটা প্রেক্ষাপটে আসলে, সরকারি চাকরি করতে চাওয়া পেছনে ছোটা ব্যক্তিদের খুব একটা বেশী কাঠগড়ায় দাঁড় করাবার সুযোগ নাই।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
4 Comments