রিমা, কই তুই মা,ঘুমিয়ে পরলি নাকি?
- না বাবা,ঘুমাই নি, পড়ছি,এসো।
- মা তোকে না জানিয়ে একটা কাজ করেছি মা।
- কি করেছ বাবা।
- আমার এক বন্ধুর ছেলের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি।ছেলে ভাল।ভাল জব করে। তুই সুখে থাকবি মা।তোর কোনো আপত্তি নেইতো মা।
- আমার কোনো আপত্তি নেই বাবা।কিন্তু আমি আগে লেখাপড়া শেষ করতে চাই।
- বিয়ের পর পড়বি। ছেলে বলেছে তোকে পড়াবে।আর কথা বাড়ালাম না।বাবাকে কিছু বলে লাভ হবেনা।
- রিমা, উঠ, ৯টা বেজে গেছে।
- হুম,আরেকটু ঘুমাই মা।
- কাল বললি ক্লাস আছে,ডেকে দিতে সকালে।
- অহহহ ,,আরো আগে ডাকলেনা কেন?
- সেই কখন থেকে ডাকছি। আজও দেরি হয়ে গেল। আজও বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে ওই বজ্জাত স্যার (বিড়বিড় করে) ফ্রেশ হতে গেলাম। রেডি হয়ে নাস্তা না করেই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলাম। ধুর একটা রিক্সাও দেখা যাচ্ছেনা। তাড়াহুরোর সময় কিছুই পাওয়া যায়না। অনেকক্ষন পরে রিক্সা পেলাম। অবশেষে কলেজে পৌছলাম।
- মে আই কাম ইন স্যার?
- কটা বাজে মেম?
- ইয়ে মানে ১০ টা বাজে স্যার।
- আর কয় মিনিট বাকি ক্লাস শেষ হওয়ার?
- ১৫ মিনিট স্যার।
- মেম আপনি ১৫ মিনিট বেশি কেন ক্লাস করবেন।আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি যাওয়ার পর ক্লাসে আসবেন কেমন।মুচকি হেসে উনি ক্লাস নিতে লাগলেন।ধ্যাত,নাস্তা করে আসলেই ভাল হত। শুধু শুধু এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আরেকটু দেরি করে আসলে এখানে দাঁড়াতে হতনা।বেটার নাম কত নরম, নিরব ।কত শীতল নাম।আর উনি কঠোর টাইপের মানুষ। বেটাকে একদিন বাগে পাই,দেখাব কত ধানে কত চাল।
- এই যে মেম, আপনি এখন ঢুকতে পারেন। আমার ক্লাস শেষ। আর কাল থেকে দেরি করবেন না কেমন। মুচকি হেসে চলে গেল। রাগে গজগজ করে ক্লাসে গেলাম।ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় ওদের বললাম
- বাবা বলেছে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
- ওহ,গ্রেট নিউজ।ট্রিট বান্ধবী ট্রিট।< ( পিংকি)
- ছেলে কি করে?( আনিকা)
- তোর বিয়েতে পেট ভরে খাব। (নুরী)
- আমি আছি আমার যন্ত্রনায়,আর তোরা আছিস খাওয়া নিয়ে।
- কেন তোর আবার কি হল? (নুসরাত)
- আমি বিয়ে করতে চাইনা।
- কেন তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?(পিংকি)
- আরে ধুর,এরকম হলে তো তোরা জানতি।
- তাহলে সমস্যা কি? (আনিকা)
- আমি আগে পড়াশোনা শেষ করতে চাই। নিজের মত করে জীবন সাজাতে চাই। এখন সংসারে জড়াতে চাইনা।
- তুই ছেলেটার সাথে কথা বলে দেখতে পারিস। (নুসরাত)
- ওকে দেখি কি করা যায়।ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসি।দুপুরে খেয়ে দিলাম এক ঘুম। বিকেলে ঘুম ভাঙল। ভাল
লাগছিলনা তাই ভাবলাম একটু নদীর পাড় থেকে ঘুরে আসি।ফ্রেশ হয়ে পছন্দের জামা পরলাম, হাতে কাচের চুড়ি,পায়ে নুপুর, চোখে কাজল মাখলাম।এগুলাই আমার পছন্দের জিনিস।এগুলার একটা কম হলেমনে হয় সাজ হয়নি। নদীতে বাতাস বইছে।খুব ভাল লাগছিল।গরমের দিনে এরকম পরিবেশ খুব কম ই পাওয়া যায়। - তুমি গনিত বিভাগের রিমা না?
- আরে স্যার আপনি, আমার নাম জানলেন কেমনে?আমি তো ক্লাশে ঠিক সময় আসিনি একদিনও। নামতো বলা হয়নি কখনও।
- স্নিগ্ধা রায় রিমা ।সবায় রিমা ডাকে। রাইট?
- হুম।অবাক হয়ে গেলাম।মনে মনে সুযোগ খুজতে লাগলাম কিভাবে বেটাকে হেস্তনেস্ত করা যায়।ধুর বুদ্ধি আসছেনা।রাগ হল নিজের প্রতি।
- স্যার, আপনি থাকেন আমি বাসায় যাব।
- কেন মন খারাপ নাকি?
- আপনাকে বলার ইচ্ছা নাই।
- কেন?
- এই যে হ্যালো,আমি আপনার ছাত্রী। বান্ধবী নই। যে সব আপনাকে বলতে হবে। যত্তসব। আর হে শুনেন নেক্সট দিন যদি আমায় বাইরে দাঁড় করান খবর আছে আপনার। বাসায় চলে আসলাম। ধুর গেলাম ভাল সময় কাটাতে। আর কি হল। অসহ্য। পরের দিনও স্যার আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। খুব রাগ হল। ক্লাশ শেষ হওয়ার পর দেখি স্যারের গাড়ি রাখা।
- ওই তোরা দাঁড়া আমি আসছি।
- কই যাস?( আনিকা)
- চুপ করে দাঁড়া, আমি আসছি। স্যারের গাড়ির কাছে গেলাম। সাইসাই করে বাতাস বের হচেছ। হিহিহিহিহি
- কাজটা কিন্তু ঠিক করলিনা। (নুসরাত)
- যা করছি ভাল করছি।প্রতিদিন আমায় দাঁড় করিয়ে রাখে আজ বুঝবে মজা।ওই দিন মনের আনন্দে বাসায় ফিরলাম। সন্ধার পর হঠাৎ মনে হল ছেলেটাকে কল দেই। ছেলেটার নাম ও জানিনা। ধুর নাম দিয়ে আমার কি। মায়ের ফোনে নাম্বার আছে। লুকিয়ে মায়ের ফোন থেকে নাম্বার এনে কল দিলাম।
- হ্যালো,আমি রিমা,আপনাকে আমার কিছু বলার আছে।
- এত তাড়াহুরো কিসের আস্তে আস্তে বল।
- আমি এখন বিয়ে করতে পারবনা। আমি লেখাপড়া আগে শেষ করতে চাই।
- বিয়ের পর পড়বা।
- বিয়ের পর না আমি আগেই পড়তে চাই। আপনি এ বিয়ে বন্ধ করেন প্লিজ।
- ওকে, তোমার কথাই থাক। অনার্স শেষ হওয়ার পর বিয়ে।ঠিক আছে।
- হুম। মনে মনে খুশি হলাম যাক, বিয়ের চিন্তা আপাতত দুর হল।বন্ধুদের জানালাম। আর বললাম কাল দেখা করতে।পরদিন ওদের সাথে দেখা করলাম। ডবল খুশির ট্রিটদিলাম ওদের। কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর যে যারমত চলে গেল। আমিও বাসায় যাব কিন্তু রিক্সা পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ দেখি স্যার দাঁড়িয়ে। রিক্সা খুজছে হয়ত। একটা রিক্সা দেখে স্যার এগিয়ে আসলেন। উনার সাথে অনেক জিনিস পত্রও। আমিও এগিয়ে গেলাম। মজা নেওয়ার ধান্দা আসছে মাথায়। রিক্সার কাছে যেতে দেখি উনি রিক্সায় উঠে গেছেন।
- স্যার কেমন আছেন? গাড়ি থাকতে রিক্সায় কেন আপনি?
- আর বলনা গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গেছে।তুমি এখানে কেন এখন?
- বাসায় যাব কিন্তু রিক্সা পাচ্ছিনা। আপনি যদি কিছু না মনে করেন তবে আমি যাই এই রিক্সায়। বাবা কল দিচ্ছে বাসায় যাওয়ার জন্য কিন্তু কি করব বলেন।আমার জরুরি দরকার বাসায়।
- আচ্ছা, ঠিক আছে,তুমি যাও,আমি আরেকটা খুজে নেব।
- ধন্যবাদ স্যার। হিহিহিহি। .বেটা এখন দেখ এই দুপুরে রিক্সা পাস কিনা। খুশি মনে বাসায় আসলাম। বাবা ডেকে বলল, ছেলে জানিয়েছে তোর অনার্স শেষ হওয়ার পর নাকি বিয়ে করবে। আর ওর নাকি খুব পছন্দ হইছে। ওই ছেলে কখন দেখল আমায়। মনে হয় ছবি দেখছে। অনার্স শেষ করে বিয়ে করতে আমার আপত্তি নেই। আজ কয়েকদিন দিন খেয়াল করছি নিরব স্যার আসছেনা কলেজে। প্রথম প্রথম স্যার না আসাতে ভালই লাগল। আমাকে আর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়না।আজ প্রায় ১৫ দিন হয়ে গেল, স্যার আসেনা। মনে মনে খুব খারাপ লাগতে শুরু করে।মিস করতে লাগলাম ওই বজ্জাত স্যারকে। পিংকি কে জিজ্ঞেস করলাম। ও বলল উনি নাকি অন্য কলেজে বদলি হয়ে গেছেন। ওইদিন আর ক্লাস করিনি। বাসায় এসেও শুধু উনার কথা মনে হচ্ছে। উনার মুচকি হাসি বারবার মনে হচ্ছে। উনার দাঁড় করিয়ে রাখাকেও মিস করছি।উনার সাথে কত খারাপ বিহেভ করছি।একবার স্যরি ও বলতে পারলাম না। মনের মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করতে লাগল। এখন আর কলেজে যেতে ইচ্ছে হয়না। আমি কি তাহলে উনার প্রেমে পড়ে গেলাম। ধেত এসব কি ভাবছি। আমার বিয়ে ঠিক এইটা ভুলে যাচ্ছি কেন?এখন কলেজে গেলে মনে হয় এই বুঝি কেউ বলবে এইযে মেম কটা বাজে, ক্লাস শেষ হওয়ার কয় মিনিট বাকি,বাইরে থাকেন। উফফ কিচ্ছু ভাল লাগছেনা। একবার যদি উনার দেখা পেতাম।সরি অন্তত বলতে পারতাম।লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদি। হ্যাঁ ওই বজ্জাত কঠোর স্যারকে আমি ভালবেসে ফেলেছি। কয়েকদিন পর এক বিকেলে ঘুমিয়ে ছিলাম। মা ডেকে বল্ল রেডি হতে।বাবার বন্ধুর বাসায় আজ নাকি দাওয়াত। কয়েকদিন বাইরে যাইনা,তাই আর না করলাম না। আমার প্রিয় সাদা শাড়িটা পরলাম। দুহাতে কাচেরচুড়ি পরলাম, নূপুর পরলাম,গাঢ় করে চোখে কাজল দিলাম। চুলে বেলিফুলের মালা গুজে দিলাম। বাবা উনার বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। উনারা গল্প করতে লাগলেন। আমি বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। খুব সুন্দর বাসা। অনেক গুছাল। হঠাৎ বাবা ডাকলেন। উনার কাছে যেয়ে আমি অবাক হয়ে যাই-
- এ হচ্ছে নিরব।আমার বন্ধুর ছেলে। যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছি। নিরব , তুমি তো রিমাকে চেনো ই,-
- উনি শুধু মুচকি হাসি দিল।তখন রিমার বাবা বললেন-
- নিরব রিমা কে নিয়ে তোর রুমে যা,মেয়েটা একা একা বোর হচ্ছে। রিমা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল-
- চলেন।
- হুম চলেন।উনার পিছে পিছে উনার রুমে গেলাম। গিয়েই দরজা লাগিয়ে দিলাম।
- এইযে, কি পাইছেন আপনি? হে যখন ইচ্ছা বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবেন আবার যখন ইচ্ছা না বলে চলে আসবেন?
- আমি বদলি হয়ে গেছি তাই আর যাইনি ওই কলেজে।
- একবার বলে আসার দরকার মনে করেন নাই।
- আচ্ছা সরি।
- নো সরি।আর আপনি জানতেন আমাদের বিয়ে ঠিক তারপরও আমাকে বলেন নাই কেন??
- আসলে আমি শুধু তোমাকে দেখার জন্য ওই কলেজে ঢুকি।কিন্তু তুমি আমাকে সহ্য করতে পারনা বলেই চলে আসি।
- কচু,আমার কত কষ্ট হইছে যানেন। কোনো ক্ষমা নাই আপনার।
- এই দেখো কান ধরছি।প্লিজ ক্ষমা কর এবারের মত।
- হুম ক্ষমা করব তবে
- তবে আজকেই বিয়ে করতে হবে
- তাই, অনার্স কি আপনার শেষ?
- বিয়ের পরে শেষ হলেই চলবে।
- কেন কেন?
- আমি আর আমার বজ্জাত স্যারকে চোখের আড়াল করতে চাইনা।
- আমিও না আমি সবচেয়ে দুষ্টু ছাত্রীকে সব সময় দেখতে চাই।
- তাহলে ক্লাসের বাইরে রাখতেন কেন?
- ক্লাস থেকে বাইরে দরজায় দাঁড়ানো আমার মেঘপরি কে খুব ভাল করে দেখা যায় তাই।
- মেঘপরি কে?
- কে আবার আমার বউ।ভালবাসি পাগলি
- আমিও ভালবাসি l
Photo