সংসার ভালোবাসা

সংসার ভালোবাসা

মোবাইলের স্কীনের দিকে তাকিয়ে দেখি, রাত্রি দুইটা বেজে গেছে। তবুও ঘুম আসছে না আমার। মনের মাঝে চাপা কষ্ট গুলোকে কে যেনো বার বার নাড়া দিচ্ছে। পাশেই শুয়ে আছে আমার স্ত্রী। মাসখানেক হবে বিয়ে করেছি , গভীর ঘুমে আছন্ন আমার স্ত্রী নেহা।

আমি বিছানা ছেড়ে, আস্তে করে উঠে পড়লাম। যদি নেহার ঘুম ভেঙ্গে যায়, তাহলে আর ছাদে যাওয়া হবে না আমার। আর তখন নেহা আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবার বৃথা চেষ্টা করবে।
বিছানা থেকে নেমে মোবাইলটা হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে রুমের দরজা খুলে ছাদে চলে আসলাম।
কয়েকটি বিষয় আমাকে সর্বদা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, একমু্হুর্ত শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না।
ছাদে এসে আমার একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করলো, কিন্তু নেহার জন্য খেতে পারছি না। নেহা সিগারেট খাওয়া পছন্দ করে না। নেহা আমার জীবনে এসে সিগারেট নামক বস্তুটিকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
নেহাকে কথা দিয়েছি, জীবনে আর কোনদিনও সিগারেট খাবো না। প্রিয় মানুষকে দেওয়া কথা গুলো রাখা উচিত, নইতো প্রিয়
মানুষকে অবহেলা করা হয়। প্রিয় মানুষের দেওয়া শর্তগুলো সবসময় নিজের পছন্দের জিনিষগুলোই হবে।

Fall-in-Love-at-First-Si.jpgPhoto

কখনো দেখবেন, নিজের প্রিয় জিনিস সিগারেট, এটাকে তারা ছাড়তে বলবে। বেশি রাত করে বাসাই ফিরতে দেবে না। সবসময় আপনাকে চোখে চোখে রাখবে, কারন আপনাকে সে অনেক ভালোবাসে। সব প্রিয় মানুষগুলোই চাই আপনাকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে, তারা নিজের ক্ষতি করে হলেও আপনাকে সুখি দেখতে চাইবে ।
নেহাকে কথা দেবার কারনে সিগারেট খেতে পারলাম না। মনকে কোনো ভাবেই বুঝাতে পারছি না আমি। বিয়ের কয়েকদিন পরেই চাকরিটা হারিয়ে যায় আমার। এখনো পর্যন্ত অন্য কোন চাকরী যোগার করতে পারিনি। সেইজন্য মনে সবসময় একটা কষ্টের ছাপ লেগে থাকে।

বিয়ে করে নতুন বউকে তেমন কিছু দিতে পারেনি। চাকরিটা না থাকার কারনে হাতে কোন টাকা পয়সাও নেই। নেহা আমার জীবনে এসেই প্রথমে অনেক কষ্টে জীবন পার করছে। সব বউই চাই, তাদের স্বামী, কিছু দিতে পারুক আর না পারুক, কমদামি কিছু গিফ্ট, আর অল্প সময় যেনো তাকে দেয়।
নিজের কাছেই সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে। সবাই তাদের নিজের বউকে কত কিছু দেই, শুধু আমিই দিতে পারলাম না। পনেরো দিন ধরে ভালো কোন রান্না হয়নি, সেইজন্য একি রকমের খাবার পনেরো দিন ধরে খেয়ে আসছি। নেহার মুখের দিকে তাকাতে আমার লজ্জা করে, কারন ওর মুখের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি, মেয়েটি কিছু একটা আশা করে আমার থেকে। কিন্তু আমি কিছুই দিতে পারিনা তাকে।

романтичные-пары-морем-sillhouettes-96939093.jpg
Photo

নিজের কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। পেছনে ঘুরে দেখি নেহা দাড়িয়ে আছে।
কি ব্যাপার ঘুম থেকে উঠে আসলে কেনো? (আমি)

যেখানে তুমি নেই, সেখানে আমি কি করে থাকি বলো (নেহা)

  • আমাকে বিয়ে করে তুমি কতো বড়ো ভুল করেছো নেহা। কথাটি বলতেই আমার মুখ চেপে ধরলো নেহা।

এমন কথা আর কোনদিন বলবে না তুমি। আমার তেমন কিছু চাই না পিন্টু, শুধু তোমাকেই চাই। তোমাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই। এতো রাতে এখানে থাকতে হবে না, এখন চলো ঘুমাবে?
নেহার কথাই ছাদে আর থাকলাম না,নেহার কথা না শুনলে সে হয়তো রাগ করবে,আমি চাইনা,কোন কারনে নেহা কষ্ট পেয়ে থাকুক। বিছানাই এসে শুয়ে পড়লাম, নেহা আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে,আর আমি ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করছি। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, নিজেই বলতে পারবো না।

ঘুম থেকে উঠে দেখি,নেহা আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। সকাল হয়েছে অনেক আগেই,তবুও নেহার কাছে হয়তো এখনো সকাল হয়নি। সেইজন্য সে এখনো ঘুমিয়ে আছে। নেহাকে জাগিয়ে তুলতে মন সাই দিলো না। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আমিও শুয়েই থাকলাম। কিছুক্ষন পরেই নেহার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।ঘুম থেকে উঠে দেখে,আমি জেগে আছি,তখন সে একটু লজ্জা পেলো,কারন আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে আর আমি সেটা দেখে ফেলেছি। নেহা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে রান্না করতে চলে গেলো,আর আমি ফ্রেস হয়ে একটু বাইরে গেলাম।
বাড়ির বাইরে যেতেই দারোয়ান পেছন থেকে ডাক দিলো।
-ভাইজান আপনার একটা চিঠি এসেছে।

কই দেখি।

  • এইযে নেন।
    চিঠিটা হাতে নিয়ে নিলাম। চিঠিটা খুলে দেখি, চাকরির অ্যাপার্মেন্টলেটার। মানে আমার চাকরি হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে একটা অফিসে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম,ভাবছিলাম হবে না,,কিন্তু সেখানেই আমার চাকরিটা হয়ে গেছে।.

love-2.jpg
Photo

মনে মনে আমি অনেক হাসতেছি,এখন থেকে আর কোন দুঃখ কষ্ট থাকবে না আমার।অনেক দিন পরে একটু হাঁসলাম। বাইরে না গিয়ে বাড়িতেই চলে আসলাম আবার।
রুমে ঢুকে নেহাকে খুজতে থাকলাম। খুজে দেখি নেহা রান্না ঘরে রান্না করছে। আমি ওখানে যেতেই আমাকে সে দেখতে পেয়েছে।
ওখানে দাড়িয়ে কেনো,ভেতরে আসো (নেহা)

ভেতরে ঢুকে নেহাকে জড়িয়ে ধরলাম।
-এই ছাড়ো,কি করছো এসব,দেখতেছো না রান্না করছি।
না আমি এখন ছাড়বো না তোমাকে,আর আজকে আমি অনেক খুশি।
-এই যে ছাড়োতো, বলেই নেহা আমার দিকে ঘুরলো। কি জন্য এতো খুশি, যে আমাকে জড়িয়ে ধরতে হবে।
এই দেখো চাকরির অ্যাপার্মেন্টলেটার। আমার চাকরি হয়ে গেছে, দুদিন পরেই জয়েন করতে হবে চাকরিতে।
-সত্যি বলছো?
তাহলে কাগজটা কি মিথ্যা।
-নেহা সাথে সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিলো। চুমু দিয়ে ওমনি সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওপাশে ঘুরে রান্না
করতে লাগলো।
বুঝতে পারছি,সে লজ্জা পেয়েছে,না হলে এমন করতো না,সেইজন্য সে ওপাশে ঘুরে কাজ দেখাচ্ছে আমাকে। আমিও কম না,পেছন থেকেই নেহাকে জড়িয়ে ধরলাম। নেহা এবার আর ছাড়তে বললো না, হয়ত বুঝে গেছে,ছাড়তে বললেও কোন লাভ হবেনা। আর নেহাও চাই,এমনি করে যেনো আমি তাকে ভালোবাসি সারাজীবন। নেহা রান্না করছে,আর আমি তাকে জড়িয়ে ধরে আছি। এখন থেকে আর কোন কিছুই আমাকে পিছু টানবে না,এখন থেকে নেহাকে নিয়ে মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতে পারবো,দিন শেষে অন্যদের মতন আমিও নেহাকে একটি করে ফুল এনে দিতে পারবো। কারন সেই সার্মথটুকু এখন আমার হয়েছে।

Love1.jpg
Photo

সংসার জীবনে বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না,ছোটখাটো চাকরি,ছোট ছোট আবদার, দিনশেষে বা মাস শেষে একটি করে ফুল,আর সপ্তাহের শেষে ঘুরতে যাওয়া। ব্যাস এটুকু প্রয়োজন সুন্দর সংসার জীবনে।

@ohimahathir

Follow me, Vote me, Resteem my post

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now