ঘড়ির দিকে তাকালাম। সর্বনাশ, ৮ টা ৩০ বেজে গেছে!
না জানি কয়টা কিল, থাপ্পর কপালে আছে আমার।
সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে প্লাটফর্মে উঠতেই আবার রিং বেজে উঠলো ফোনের।
ভয়ে ভয়ে রিসিভ করলাম...
-হ্যা...হ্যা...হ্যালো, এইতো আমি এসে পরছি প্লাটফর্মে।
-ঐ কুত্তা তুই টিকেট কাউন্টারের সামনে আয় তাড়াতাড়ি।
টিকেট কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখি ওর বাব্বাহ.... রাক্ষস রানী কটকটির মতো তাকিয়ে আছে নীলা।
আমায় দেখেই বলল, আয় আমার সাথে।
ওর পিছন পিছন হাটতেছি আর ভাবতেছি যাক ওর হাতের মাইর থেকে বাঁচলাম এ যাত্রায়।
ও রেললাইন এর পাশ দিয়ে হাটছে।
-এই নীলা কই যাবি এইদিক??
-এইতো এই রাস্তার ধারের গাছটার আড়ালে আয়। এখানে মানুষজন আমাদের দেখবে না।
-কি...কি...ই...কি বলিস এসব?
আড়ালে কেন??
একথা বলার সাথে সাথেই আমার কলারটা ধরে টান দিয়ে গাছের আড়ালে নিয়েই ঠাস ঠাস করে কয়েকটা দিয়া দিল!
-স্টেশনেই মারতাম তরে। কিন্তু তোর ভাগ্য ভাল তাই এখানে নিয়ে এসে মারলাম।
-কি হইসে? এমন করছিস ক্যান??
-ঐ কুত্তা তোরে কয়টার ভিতর আসতে কইছিলাম??
-সরি, জানোস ই তো আমার ৮ টার আগে ঘুম ভাঙ্গেনা কেউ ডাক না দিলে।
-চুপ শয়তান। তোর কারনে ট্রেন মিস করেছি।
এখন আয় আমার সাথে।
এই বলেই হাটতে লাগলো আবার স্টেশনের দিকে।
এই পেত্নীটা কোথায় নিয়ে যাবে আল্লাই ভাল জানে।
এখন ওরে কিছু জিগাইলে আবার থাপ্পর দিবো। তারচেয়ে চুপ করে হাটি। দেখি কোথায় যায়?
একটু পরেই আরেকটা ট্রেন এসে হাজির।
ও ইশারায় ট্রেনে উঠতে বলল।
দুজন পাশপাশি সিটে বসে পরলাম।
ও চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে।
আমি হাতটা একটু তুলে ওর রাগ কমানোর জন্য ওর মাথাটা ধরে আমার কাধে হেলিয়ে দিলাম।
-কি হইছে রে? কোথায় যাবি??
-এই টিকেট টা দেখ। কোথায় যাচ্ছি বুঝবি।
টিকেটটা হাতে নিয়ে দেখি সিরাজগঞ্জ এর টিকেট!
-ঐ সিরাজগঞ্জ যেতে আবার এই জামতৈল এসে ট্রেনে উঠতে হবে??
আগে বললে তো বাস বা সিএনজিতেই যেতাম।
-চুপ কর। আমার ইচ্ছে ছিল যদি পালিয়ে বিয়ে করতে যাই তো ট্রেনে করেই যাব। তাই ট্রেনে যাচ্ছি।
ওর কথা শুনে যেন আমি আকাশ থেকে মাটিতে পরলাম!
-পালিয়ে বিয়ে করবি মানে? আমাকে বিয়ে করবি তুই?
-বকবক করিস না। সিরাজগঞ্জ কাজি অফিসে চল বুঝতে পারবি।
নীলার কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
এই মেয়েটা পাগল হয়ে গেল নাকি? কোনকিছু না বলে কাজি অফিস!!
-ঐ পেত্নী তুই কি আমাকে বিয়ে করবি?
-তোর কি মনে হয় শুনি একটু...বল?
-দেখ পাগলামির ও সীমা আছে। এভাবে হুট করে এমন সিদ্ধান্ত না নিলেও পারতি।
আমাদের দুই পরিবারকে জানালেই তো তারা রাজি হতো মনে হয়।
-বললাম তো বকবক করিস না। ট্রেন থেমে গেছে এবার নেমে পর।
দুজন নেমে সিরাজগঞ্জ শহরের ভিতর চলে গেলাম।
একটু হাটতেই একটা কাজি অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো নীলা।
তবে কি সত্যিই ও আমাকে বিয়ে করবে??
...