Opsora..favourite bengali story

সকাল থেকেই আকাশ মেঘে ঠাসা। একটু আগে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। আজ রোববার। রোববারের বৃষ্টি নাকি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। বর্ষার বৃষ্টিপাতের স্থায়ীত্ব নিয়ে গ্রামদেশে একটি সুন্দর শ্লোক আছে, ‘শনির সাত, মঙ্গলের তিন, আর সব দিন দিন।’ অর্থাৎ শনিবারে বৃষ্টি শুরু হলে পুরো সপ্তাহজুড়ে থাকে। মঙ্গলবারে শুরু হলে তিন দিন থাকে। আর বাকি দিনগুলোতে শুরু হলে দিনেই শেষ হয়। সেই অনুযায়ী, আজকের বৃষ্টি আজকেই শেষ হওয়ার কথা। অবশ্য এগুলো অতীতের ফর্মূলা! গ্রীন হাউস এফেক্টের এই যুগে ‘আবহাওয়া বেচারা’ যেন হাসপাতালের আইসিইউতে মুমূর্ষু অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য ঋতুগুলোর সেই আগের সতেজতা এবং প্রাচুর্যের ছিটেফোঁটাও নেই। ঋতুর রানী বর্ষারও কী মরমর অবস্থা! সেই তেজী বর্ষা নিখোঁজ।
অজি সময়মতোই পৌঁছতে পেরেছে। সে ছাতা মাথায় ক্যাফেটোরিয়ার সামনের ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। কাছেই বুয়েটের বাস একটির পর একটি এসে থামছে। ছাত্রছাত্রীরা বাস থেকে নেমেই বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য সংগ্রাম শুরু করে দিচ্ছে। যাদের ছাতা আছে, তাদের মধ্যে ছাতা খোলার অস্থিরতা। আর যাদের ছাতা নেই, তারা দৌড়ে কেউ ইএমই ভবন, কেউ সিভিল ভবন, আবার কেউবা ক্যাফেটোরিয়ার দিকে ছুটছে। উত্তরার বাস এখনো এসে পৌঁছায়নি। অজির অপেক্ষা উত্তরা রুটের বাসের জন্য। সেই বাসের সামনেই প্রথমদিন তার স্বপ্নের রাজকন্যাকে দেখেছে। ‘প্রথমদিন’ - কী অদ্ভুত একটি শব্দ! রাজকন্যাকে প্রথম দেখতে পাওয়ার তারিখটিকে ‘প্রথমদিন’ ধরেই অজি আজ এক স্বপ্নপথের সম্মোহিত যাত্রী!
অজি পড়ছে টু-ওয়ানে। অর্থাৎ লেভেল-টু, টার্ম-ওয়ানে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। সংক্ষেপে ‘ইইই’ বা ‘ট্রিপল-ই’। গত সপ্তাহে ক্লাস শুরু হয়েছে। এই টার্মের দ্বিতীয় দিনের ঘটনা। বিকেলে বাসায় ফেরার জন্য অজি ভার্সিটির বাসের গ্যারেজে এসে দাঁড়িয়েছে। তখন ছাত্রছাত্রীরা গ্যারেজে কেবল আসা শুরু করেছে। হঠাৎ একটি মেয়ের দিকে চোখ পড়তেই অজি হতভম্ব হয়ে গেল! ওর বুকের মধ্যে কেমন যেন করে উঠল। মনে হলো, আজন্ম ঠিকঠাক চলা হৃৎপিণ্ডটা খেই হারিয়ে ফেলেছে! হার্টের লাব-ডাব ছন্দের তাল-লয় যেন কোনো ঝড়ো হাওয়ায় কেটে গেছে! মুহূর্তেই তার পুরো চেতনা যেন অবসেশনে চলে গেল!
কোনো মানুষ এত সুন্দর হয় কীভাবে! মেয়েটির উজ্জ্বল মুখে বিকেলের সূর্যের নরম আলো এসে পড়েছে। যেন কোনো রাজকন্যা এইমাত্র ঘুম থেকে উঠে এসে স্নিগ্ধ সূর্যালোকে স্নান করছে। তার ঔজ্জ্বল্যের কাছে সূর্যের ঔজ্জ্বল্যও ম্লান! জীবনানন্দের বনলতা সেন বা সুরঞ্জনা নয়; নচিকেতার নীলাঞ্জনা নয়; অঞ্জনের রঞ্জনা নয়; সুনীলের বরুনাও নয়। তার বর্ণনা গুণদা করেননি; তার রূপের কথা নেরুদা বলেননি। সেই রাজকন্যা এমনই একজন!
সেদিন অতটুকু মুহূর্তেই শিহরণের সাইক্লোন বয়ে গেছে অজির জীবনে! জীবনে সে কম পথ পাড়ি দেয়নি। কতশত মেয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে; কিন্তু কখনো তো এমন হয়নি! সেদিন সেই মেয়ের সঙ্গে অজির একটিবার কথা পর্যন্ত হয়নি। মেয়েটি কোন ধর্মের, কোন বয়সেরÑকিছুই অজি জানত না। শুধু বুঝতে পারছিল, এক সম্মোহনের সাগরে সে ডুব দিয়েছে। এই সম্মোহন থেকে আদৌ মুক্তি মিলবে কিনা, তা-ও তার জানা নেই!
মেয়েটি দাঁড়িয়ে ছিল উত্তরা রুটের বাসের সামনে। ছাত্রছাত্রীরা হুড়মুড় করে বাসে ওঠার সময় কোলাহলে ও ধাক্কায় এবং বাসগুলো একসঙ্গে স্টার্ট হওয়ার শব্দে অজি সম্বিৎ ফিরে পেয়েছিল। কোন বাসে মেয়েটি উঠেছিল, তখন সেটা খেয়াল করতে পারেনি। তাই সেই রাতে তার ঘুম হলো না; স্রেফ নির্ঘুম কাটল! পরদিন সকালেই সে বুয়েটে পৌঁছে বাসের অপেক্ষায় রইল। বাসগুলো পৌঁছলে অজি নিশ্চিত হলো, তার স্বপ্নের রাজকন্যা উত্তরা রুটেরই যাত্রী!
অজি আগে-পিছে কিছু না ভেবে রাজকন্যার পিছু নিল। দিনশেষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তার পারসোনাল ডায়েরিবন্দী হলো। মেয়েটি এই বছরই ভর্তি হয়েছে। ট্রিপল-ই ডিপার্টমেন্টেই। অজি নিজের রুটিন ডায়েরিতে তোলার আগে মেয়েটির রুটিন যত্মকরে তুলল। রাতে বাসায় ফেরার পর চলল ক্যালকুলেশন! মেয়েটির কোন দিন, কখন, কোন ক্লাসরুমে কী ক্লাস - এসব নিয়ে হিসাবনিকাশ। সেই অনুযায়ী, মেয়েটিকে কখন কোথায় দেখা যেতে পারে, তা-ও অজি রাফ করে ফেলল!
অজি এমন পাগলামি শুরু করল কেন, তা সে নিজেই জানে না! প্রেম বোধহয় ওর ঘাড়ের ওপর এসে পড়েছে! বিখ্যাত ইংরেজি গান ‘Love has fallen on me’-তে যেন অজির মনের অবস্থাই বর্ণনা করা হয়েছে! রাতে অন্য কিছুতে ওর মনই বসল না। পরদিন মেয়েটিকে আরেকবার না দেখা পর্যন্ত কিছুই ভালো লাগছিল না।
অজি পরের দুদিন দুবার মেয়েটিকে পাশ কাটিয়ে গেল; তবে কথা বলার সাহস হলো না! সে তার সবচেয়ে কাছের মানুষ পরীপুকে ঘটনাটি বলল। এত সিরিয়াস একটি ব্যাপার নিয়ে পরীপু ছোটমানুষের মতো হাসতে লাগল! অবশ্য পরীপুই বলল মেয়েটির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করতে। আজই সেই কথা বলার মিশন আর আমাদের অজি এই মিশনের একমাত্র কমান্ডো।
উত্তরার বাস এসে পৌঁছেছে। একজন একজন করে নামছে। প্রায় অর্ধেক বাস খালি হয়ে গেল; কিন্তু রাজকন্যা এখনও নামেনি। অজি ঘনঘন শ্বাস নিতে লাগল। ভেতরে তাকিয়েও মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে না। টেনশনে তার দুই হাতের তালু ঠাণ্ডা হয়ে গেছে! রাজকন্যা ভেতরেই আছে হয়তো; বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না। রুটিন অনুযায়ী, মেয়েটির সকাল আটটায় ক্লাস থাকার কথা। আজকে সকালে অজির কোনো ক্লাস নেই; ওর প্রথম ক্লাস এগারোটায়। শুধুমাত্র মেয়েটির সঙ্গে একটু কথা বলতেই সে সাত-সকালে বুয়েটে এসেছে। দেখতে দেখতে পুরো বাস খালি হয়ে গেল। রাজকন্যা নেই! অজির মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Logo
Center