মহান অাল্লাহ তাঅালা পবিত্র কুরাঅানে বলেছেন, "নিঃসন্দেহে মানুষের জীবন বিধান হিসেবে ইসলামই একমাত্র গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা"। - (সূরা অালে ইমরান, অায়াত নং-১৯)
এই অায়াতের মর্মার্থ হচ্ছে ইসলাম শুধুমাত্র একটি ধর্ম নয়। এটি একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। কারণ কুরঅান ও হাদীসে মানব জীবনের সমস্ত কর্মকান্ড এবং সমস্যার সমাধান দেয়া হয়েছে।
*তদ্রুপভাবে ব্যবসা বাণিজ্য নিয়েও ইসলামের অনেক বিধি নিষেধ রয়েছে। কুরঅান ও হাদীসে মানুষকে ব্যবসা বাণিজ্য ও শ্রমের প্রতি বিভিন্নভাবে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি ও শ্রমের মাধ্যমে মানুষের উপার্জিত অর্থকে মহান অাল্লাহ করঅানে 'অাল্লাহর অনুগ্রহ' (ফাদলুল্লাহ) বলে অভিহিত করেছেন।
অাসুন দেখে নিই কুরঅান ও হাদীসে কিভাবে ব্যবসা বাণিজ্যের কথা বলা অাছে।
মহান অাল্লাহ তাঅালা বলেন-
১/ "(তোমার প্রভু জানেন) তোমাদের কিছু লোক 'অাল্লাহর অনুগ্রহ' সন্ধানে জমীনে ভ্রমণ করবে। অার কিছু লোক অাল্লাহর পথে লড়াই করবে।" -(সূরা মুযযাম্মিল: ২০)
২/ "যখন নামাজ পড়া শেষ হবে তখন তোমরা যমীনে বেরিয়ে পড়ো অার অাল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো এবং অাল্লাহকে বেশী বেশী স্মরন করো, অাশা করা যায় তোমরা সফল হবে।" -(সূরা অাল জুমুয়া: ১০)
৩/ "তুমি দেখতে পাও পানির বক্ষ বিদীর্ণ করে নৌযান চলাচল করছে। এ ব্যবস্থা এজন্যে করে দিয়েছি, যাতে করে তোমরা সহজেই 'অাল্লাহর অনুগ্রহ' সন্ধান করতে পারো, অার যেনো তোমরা তার শোকর অাদায় করো।"-(সূরা ৩৫ ফাতির:১২)
৪/ "হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা পরস্পরের অর্থ সম্পদ অন্যায় পন্থায় গ্রহণ (অাত্মসাত) করোনা, তবে পরস্পরের সম্মতিক্রমে কেনা-বেচার (ব্যবসায়ের) মাধ্যমে গ্রহণ করো।" -(সূরা নিসা: ২৯)
৫/ "হজ্জের সময় (ব্যবসায়ের মাধ্যমে) 'অাল্লাহর অনুগ্রহ' সন্ধান করলে তোমাদের কোন দোষ হবেনা।" -(সূরা বাকারা: ১৯৮)
৬/ "এমন বহুলোক অাছে যাদেরকে ব্যবসা এবং কেনা-বেচা অাল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখেনা।" -(সূরা নূর: ৩৭)
৭/ "অাল্লাহ ব্যবসা-বাণিজ্যকে হালাল করে দিয়েছেন অার নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন সুদখুরীকে।" -(সূরা বাকারা : ২৭৫)
৮/ "পুরুষরা যা কিছু উপার্জন করবে, তাদের অংশ হবে সে অনুযায়ী অার নারীরা যা কিছু উপার্জন করবে, তাদের অংশ হবে সে অনুযায়ী। তোমরা অাল্লাহর কাছে জীবিকা চাও।" (সূরা নিসা: ৩২)
অাল্লাহ অারও বলেন, "পৃথিবীর সবকিছু অামি তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করেছি।"- (অাল কুরঅান ২:২৯)
অন্যত্র বলেন, "অামি পৃথিবীতেই তোমাদের জীবিকার ব্যবস্থা রেখেছি।" -(অাল কুরাঅান: ৭:১০)
উপরোক্ত অায়াতগুলোতে নিঃসন্দেহে মানুষকে বৈধ ব্যবসা বাণিজ্য ও শ্রমের প্রতি মানুষকে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
অামরা জানি, অাল্লাহর রাসূল নিজেও একজন বিশ্বস্ত ও সৎ ব্যবসায়ী ছিলেন।
এবার দেখে নেব ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে রাসূলের মুখনিঃসৃত বাণী হাদীসে কি উল্লেখ অাছে।
তিনি বলেছেন:
১. "সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সাথী হবে।" -(মুসতাদরকে হাকিম, জামে তিরমিযি)
২. "বিশ্বস্ত সত্যাশ্রয়ী ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন শহীদদের সাথী হবে।" -(সুনানে ইবনে মাজাহ)
৩. "সর্বোত্তম উপার্জন হলো অাল্লাহর পছন্দনীয় পন্থায় ব্যবসা করা এবং গায়ে খেটে উপার্জন করা।"-(মিশকাত)
উপরোক্ত অায়াত ও হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, বিশ্বস্ত ও সৎ ব্যবসায়ী অাল্লাহর প্রিয় বান্দা ও রাসূলের যোগ্য উত্তরসূরী। অলস ও অকর্মঠ ব্যক্তি কোনভাবেই অাল্লাহর প্রিয় হতে পারেনা। কারণ জীবন চলার পথে সকল বাধা বিপত্তিকে মোকাবেলার জন্য অার্থিক স্বচ্ছলতা প্রয়োজন। তবে অর্থ উপার্জনই যেন অামাদের জীবনের মূল লক্ষ্য না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ পরকালে সফলতার জন্য অর্থ উপার্জনই সবকিছু নয়।
বিল গেইটসের সেই মহা উক্তিটি দিয়েই শেষ করছি। তিনি বলেন- "গরীব হয়ে জন্ম নেয়া দোষের কিছু না, তবে গরীব হয়ে থাকাটায় অপরাধ"।
সুতরাং জীবিকা নির্বাহের জন্য অামাদের সবাইকে কর্মমুখী হতে হবে।
- তথ্য সূত্র: অাল কুরঅান, অাল হাদীস, চাই প্রিয় ব্যাক্তিত্ত্ব, চাই প্রিয় নেতৃত্ব (লেখক: অাব্দুস শহীদ নাসিম)