ছোট গল্প

মাতৃ ভাষায় সাহিত্য চর্চা করা আমার কাছে আবশ্যকীয় একটি বিষয়। নিজ ভাষার সৌন্দর্য সম্পর্কে অবহিত হবার জন্য সাহিত্যে চর্চার তুলনা নেই। আমি তেমন কোন ভালো লেখক নই। শখের বসে একটু লেখা লেখি করি। তাও বলব না পুরোটা আমার সৃজনশীলতা। বিভিন্ন লেখকের বই পড়ে জ্ঞান আহরন করে লেখালেখি করি। নতুন কিছু সৃষ্টির চেষ্টা করি। আজকে আপনাদের কাছে গল্পের বাকি এবং শেষ অংশ তুলে ধরছি।

বেচা-কেনা

একদিন ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর খায়রুল হাসেমকে সঙ্গে নিয়ে এসে ওয়াহেদকে বলে- ভাই মেলে আমাকে একটা চাকরি নিয়া দেন না।

চাকরি করবি? - হ্যাঁ যদি অয়।

হাসেমও কি তাের সাথে দল বান্দিছে নাহি?

জানােই তো আমি গরীব মানস্যের ছাওয়াল। তুমি যদি একটো চাকরি নিয়া দাও তাবে বাইচ্যা যাই।

আচ্ছা দেহি, পরশু মনসুর চাচা আইসপে, তোরে দিয়া যামুনে।

সেদিন পৌর মিলনায়তনে মিটিং শেষ করে মােতাহার মাস্টার সাহেবের সাথে খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিলাে। মন্ত্রী যখন খেতে বসে তখনই গিয়ে হাজির হয় ওরা। আপনে খাওয়া শেষ করেন। - আরে কও, তুমি অইলা ছাত্রনেতা,

চাকরি নাইগবাে আপনের রেলে।

দরখাস্ত আইনছো?

হ্যাঁ

ততক্ষণে খাওয়া শেষ করে সোফায় বসে মনসুর সাব। ওয়াহেদ দরখাস্ত দুটি তার হাতে দেয়। তা দেখে খসখস করে যাক্ষর দিয়ে বলে- হাসেম, কালকেই তুমি দরখাস্তটা নিয়া পাকশী অফিসে যাও। এটা দিলেই চাকরি হয়ে যাবে। আর খায়রুল, আমি পরশু ঢাকায় ফিরবাে। তুমি রেল অফিসে দরখাস্তটা দিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করবে। কী হয় জানাবে। - ঠিক আছে চাচা, এহুন যাই গা। - আর কিছু কইবা?

না চাচা।

ঠিক আছে, যাও। দেহা অবাে আবার। ওরা বের হয়ে যায় মাস্টার সাহেবের বাসা থেকে। কয়েক দিনের মধ্যেই চাকরি হয়ে যায় ওদের। খায়রুলের বড় চাকরি হয়, সে যােগ দেয় ঢাকায় রেলের প্রধান কার্যালয়ে। আর হাসেম পয়েন্টস ম্যান হিসেবে নিয়ােগপত্র এনে যােগ দেয় লাহিড়ী মোহনপুর। হাসেম এ খবর ওয়াহেদকে দিতে গিয়ে শােনে সে ঢাকায় গেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে ফিরবে দু'একদিনের মধ্যে।

পাক্কা দশ দিন পর এলাকায় ফেরে ওয়াহেদ। তাকে দেখেই ছুটে যায় হাসেম, জড়িয়ে ধরে নিয়ে যায় চায়ের দোকানে। বলে- পয়েন্টস ম্যান হিসাবে জয়েন করছি এই স্টেশনেই ।

আর খায়রুল?

অর রেলের হেড অফিসে বড় অফিসার পদে চাকরি অইছে। আমারতাে লেহাপড়া না, থাইকলে আমারও অইতাে। যাইক, আল্লাহ যা দিছে, হেইডােই হাজার শুকুর। সন্মেলনের কী অইলাে?

নেতা আমাগােরে সম্মেলনে আসেন নাই।

হেডােতাে আগেও হুনছি, নিরপেক্ষ থাকার জন্য নেতা আমাদের সম্মেলন আসতেও পারে, নাও পারে।

নিরপেক্ষ থাকলে তাে কথা আছিল । কিন্তু আরেক সন্মেলনে গেছিল যে!

কোন সন্মেলনে?

ওই যে, পাঁচ/সাত জনের ছাত্রলীগের সন্মেলনে।

কও কী? তালি কি হে আমাগােরে বাদ দিল নাহি?

জানি না। তয় তােরা মনােযােগ দিয়া কাম করিস মুক্তিযােদ্ধার জানি দুর্নাম না হয়। মন ডা খারাপ অয়া গেল। নেতা কার আমাগােরে স্বার্থে যে আমাগােরে ফালায় থুইয়া গেল, সেই ডাে তো বুইঝবার পারতাছি না। এ কথা বলেই কোন জবাবের অপেক্ষা না করে উঠে যায় ওয়াহেদ।

হাসেমের এ চিন্তায় ছেদ ঘটায় ট্রেনের হুইসেল। তাকিয়ে দেখে রেলের ডিজিকে নিয়ে স্পেশাল ট্রেনটি ঢুকে পড়েছে স্টেশনে। আর কিছুক্ষণ পারই নামবে খায়রুল, দেখা হবে প্রায় চল্লিশ বছর পর। মুক্তিযুদ্ধ তাদের অনেককেই এক জায়গায় এনে দিয়েছিল। তখন হাসেম খায়রুলকে 'তুমি বলতাে, কখনাে কখনাে তুই "তুকারি চলতাে। কিন্তু আজ কী বলে ডাকবে তা ভেবে পাচ্ছে না। এ সময়েই ট্রেন এসে থামে ওদের সামনে। নামে খায়রুল বাসার খান, তার পিছনে দুই আর্দালি। খায়রুলের চুল পাকেনি একটিও। চেহারায় বয়সের ছাপ পড়লেও বৃদ্ধ হয়নি, যেমন হয়েছে হাসেম। অনেকদিন পরে দেখা খায়রুলকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছে করে, সে লােভকে চেপে রাখে হাসেম। কারণ ততদিনে পদ-পদবী, সমাজ-জামাতের তফাৎ ঘটে গেছে অনেক। স্টেশন মাস্টার সালাম জানায় রেলের ডিজি খায়রুল বাসার
খানকে। আস্তে করে সালাম জানায় হাসেমও। সালামের উত্তর দিয়ে হাসেমের হাতটা ধরে, জিজ্ঞেস করে- কেমন আছ হাসেম?
ভালাে, আপনি কেমন আছেন?
হ্যা ভালাে। চলাে ওয়েটিং রুমে বসি।

হ্যা চলেন।
ওরা হাঁটে ওয়েটিং রুমের দিকে। পিছনে হাঁটে স্টেশন মাস্টারসহ অন্যরা। রুমে ঢুকেই স্টেশন মাস্টারকে ডাক দেয় ডিজি স্যার। বলে- আপনারা আপনাদের কাজ করুন আমাকে নিয়ে কোন টেনশন করবেন না। যখন কোন কিছুর দরকার পড়বে তখন আর্দালিদের দিয়ে ডেকে নেবাে।

ঠিক আছে স্যার। বলে ওরা বিদায় নেয়। হাসেমকে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে বলাে- ওই চেয়ার টেনে বসাে। খাটের উপর বসে খায়রুল,
চেয়ার টেনে বসে হাসেমও।

তারপর কেমন আছাে তােমরা?

আছি ভালােই।

তােমার ছেলে মেয়ে?

আমার দুই মেয়ে এক ছাওয়াল। সবার বিয়া অয়া গেছে। যাই অইক, আপনের কথা কন। কত্ত দিন পর দেহা! আমার আর কী কথা, আছি ভালােই।

ছাওয়াল মাইয়া?

এক ছেলে এক মেয়ে। দুজনেই

আমেরিকা থাকে।

ভাবি সাব?

সেও গেছে আমেরিকায়, ছেলে-মেয়ের কাছে।

আপনে যান নাই?

আমিও যেতাম। হঠাৎ এক সার্কুলারে বলা হলাে, মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি চাকুরির মেয়াদ আরাে দুই বছর বাড়বে। দেখলাম রেলের যদি সর্বোচ্চ পদটা পাওয়া যায়, সন্মানটাও বাড়লাে। একটু চেষ্টা করলাম, হয়েও গেল। তখন মুক্তিযুদ্ধের কথা, তােমাদের কথা খুব মনে পড়লাে। তাইতাে দেখতে এলাম তােমাদের । - ভালােই করছেন। আপনারে দেইখা পুরান দিনের কথা খুব মনে পড়তাছে। আচ্ছা, ওয়াহেদ কোথায়? কেমন আছে সে?

আমার সাথেও দেহা অয় না প্রায় পনের বছর। বলাে কী? বাড়ির কাছে থেকেও দেখা হয় না?

বাড়িতে তো কম আসে। কই কই ঘুইরা বেড়ায়। চলেন তার বাড়িত একবার ঘুইরা আসি ।

চলাে যাই। আমাদের দুই জনের রেলের চাকরিতাে তার জন্যই হয়েছিলাে।

ওয়েটিং রুম থেকে বের হয়ে ওরা হাঁটতে থাকে ওয়াহেদের বাড়ির দিকে। যেতে যেতে এক সময় নিজে নিজেই বলে আমরা কতাে বদলে গেছি, নিজের স্বজনের কথা ভুলে গেছি। পরিবর্তনটা হয়েছে উল্টো দিকে। স্বজনের কথা কীভাবে ভুলে গেছি কিছুই জানি না। রেল লাইনটা পার হয়ে ওরা ওয়াহেদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ। বাড়িতে কেউ আছে বলেও মনে হয় না। তবুও দরজার কড়া নাড়ে হাসেম। ডাক দেয়। বাড়িতে কেউ আছেন? বেশ কিছুক্ষণ পর একটি নারী কণ্ঠ উত্তর দেয়- বাড়িতে তাে কোন পুরুষ মানুষ নাই। আমরা এসেছি অনেক দূর থেকে, ওয়াহেদ ভাইয়ের খোঁজ নিতে।
এ কথা শুনে নারী দরজা খুলে দেয়। বলে- ঘরে এসে বসেন। ভাইজানতাে বাড়িত নাই।
আমরা এসেছি অনেক দূর থেকে, ওয়াহেদ ভাইয়ের খোঁজ নিতে। এ কথা শুনে নারী দরজা খুলে দেয়। বলে- ঘরে এসে বসেন।

ভাইজানতাে বাড়িত নাই, উনার ছােট ভাই বাজারে গেছে, এহুনই ফিরবাে।

খায়রুল আর হাসেম ঘরে গিয়ে বসে। খায়রুল বলে- আমি কখনােই মিছিলে যেতে চাইতাম না, ওয়াহেদই আমাকে ধরে নিয়ে যেতে। মুক্তিযুদ্ধেও আমাকে নিয়ে গিয়েছিলাে সে-ই। তার সার্টিফিকেট আর তদবিরেই আজ আমি এতাে বড়। অথচ...। আর কোন কথা বলতে পারে না খায়রুল। হাসেমও চুপ করে থাকে। কারণ সে তাে কম অপরাধী নয়। বাড়ির কাছে। থেকেও সে কখনাে খবর নেয়নি ওয়াহেদের। বরং ওর অভিমান হতাে ওয়াহেদ তার খোঁজ নেয় না বলে। এক সময় ওয়াহেদের ছােট ভাই মােহন ঘরে ঢুকে, ওদের জিজ্ঞেস করে আপনারা কন থাইকা আইছেন। খায়রুল আর হাসেম তাদের পরিচয় দেয়। মোহন হাসেমকে দেখিয়ে বলে- আমি উনারে চিনি, এই স্টেশনেই চাকরি করতাে। খায়রুল বলে- আমি যখন ওয়াহেদের সাথে চলাফেরা করতাম তুমি তখন ছােট ছিলে। যাক তাকে কী পাওয়া যাবে?

সে তাে বাড়ি থাকে না।

কোথায় থাকে?

কোথায় থাকে তা ও জানি না। কেউ কয় আগের মতােই রাজনীতি করে, কেউ কয় মাজারে মাজারে ঘুইরা বেড়ায় । মাঝেমধ্যে বাড়িত আসে, দুই একদিন থাইকা চইলা যায়।

বিয়া সাদী করে নাই?

আব্বাজান বাঁইচা থাইকতে খুব চেষ্টা করছে। কিন্তু বিয়াত রাজী করাইতে পারে নাই। আমরা কইতাম তােমার তাে অনেক বড় মানুষ পরিচিত আছে, কিনা আমি মুক্তিযুদ্ধের কথা কয়া কারাে কাছে কিছু নিমু না। অন্তত একজন মুক্তিযোদ্ধা থাকুক যে মুক্তিযুদ্ধ বেচা-কেনা করে নাই। মােহনের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় খায়রুল, এমন কি হাসেমও। কত অভিমান নিয়ে যে ওয়াহেদ পথে পথে ঘুরে বেড়ায় তা বুঝতে পারে ওরা।

Words about me

I am Sakeeb Ul Islam Sony, from Bangladesh. I am doing graduation in Disaster Management and Vulnerable Studies from Dhaka University . I love to travel and watch movies. Most of time of holidays I try to enjoy playing games and sports and watching movies.

I also love to draw, and make handicrafts things. I am a friendly person and I like to make friends. I hangout a lot with my buddies. I joined hive to make friends, reach out to people I never met and establish great relationships. I also want to learn, have fun and make Hive such a great place to be. I have heard about the amazing people here and I hope together, we can help each other achieve our wildest dreams.

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Logo
Center