"দুঃখের শৈল্পিক রুপ"

সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা এই শব্দ গুলো যেমন একে অপরের সাথে জু্ড়ে আছে , আমাদের জীবনের সাথেও এগুলো ঠিক একি ভাবে জুড়ে থাকে।কেউ চাইলেও পারে না কিংবা পারবেনা তাদের একটিকে বাছাই করতে। কখনো এমন হয়না যে আমি শুধু সুখ নেবো কিংবা আমি শুধু দুঃখ নিবো।তাই এ দুই নিয়েই বাঁচতে হয় মানুষ কে।কিন্তু এ দুইয়ের মাঝে সমতা করে সবাই চলতে পারে না।সবাই সুখ চাই এটা যেমন সত্য দুঃখ জীবনে আসবে এটাও সত্য।

যে দুঃখ বিলাসের আমি চরম বিরোধী, সে বিলাসের মাঝেও যে মাঝে মাঝে সুখ থাকে তাই আজ আমার উপজীব্য। খুব ছোট বেলায় জসীমউদ্দিন এর নকশীকাঁথার মাঠ কাব্য গ্রন্থের নাম শুনেছিলাম। আসলে শুনেছি বললে ভুল হবে পড়েছিলাম। না কাব্যগ্রন্থ পড়িনি এটার নাম পড়ে ছিলাম!মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলা বইয়ে আমরা যখন কোন কবির গল্প কবিতা পড়ি তখন লেখক পরিচয় পড়তে হয় সেখানেই পড়েছিলাম কবি জসীমউদ্দিন এর কয়েকটি কাব্যগ্রন্থের নাম যার মাঝে একটি নকশি কাঁথার মাঠ।আমি সেটা পড়েছিলাম ষষ্ঠ শ্রেণীতে।তখন থেকে এই নামটা আমার কাছে আকর্ষনীয়।এর আক্ষরিক বা কাব্যিক কোনো অর্থই আমি তখন বুঝতাম না।যখন আমি উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে তখন নকশিকাঁথার মাঠ গল্প অবলম্বনে একটা নাটক দেখি। তখনও এতো বুঝিনি।

আমার মাথায় এই ব্যপারটা মাঝে মাঝেই ঘুরপাক খেতো নিজের দুঃখ কিভাবে নকশিকাঁথায় লিখে রাখা যায়।একদিন আমি মন খারাপ করে বসে ছিলাম, আমাদের বাড়ির পিছনে। আম্মা বকা দিয়েছে তাই।একটা কাঠি দিয়ে মাটিতে আঁকছিলাম। হঠাৎ মনে হলো একটা ঘর বানানো যাক। একটা ঘর এঁকে এর জানালা,দরজা এভাবে মনে মনে বলছি আর আঁকছি। উঠোন, বাগান, পুকুর এসব ভেবে ভেবে আঁকতে শুরু করলাম।

যখন আমার আঁকা মোটামুটি শেষ তখন আবার প্রথম থেকে দেখতে গিয়ে নিজেই হেসে কুটিকুটি। তখন থেকে আমি নকশি কাঁথার মাঠের প্রতি ফুঁড়ে লুকিয়ে থাকা একজন গৃহিণীর কষ্টের কথার মানে বুঝি।যাইহোক লিখতে নিলে এ এক সমস্যা কি লিখবো ভেবে বসি কোথায় পথ হারায় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমার ভাষ্য ছিলো দুঃখ বিলাসে সুখের বাস।আমরা যারা দুই কলম লিখতে পারি তাদের দুঃখ বিলাসের অস্ত্র হতে পারে কলম।বিন্দু পরিমাণ হোক বা হোক পাহাড় সমান সব দুঃখের বিলাস হতে পারে কলম। কলম দিয়ে আপনি যখন আপনার এলোমেলো দুঃখ গুলো লিখতে শুরু করবেন প্রথমে আপনি আপনার দুঃখ ভুলে যাবেন। আবার এই লিখা গুলো আপনি যখন পুনরায় পড়বেন তখন একা একা হেসে গড়াগড়ি খাবেন। এবার আপনি নিজেই বলুন এর চাইতে ভালো দুঃখ বিলাস কি হতে পারে।

মনে করেন আপনার এমন কোনো কষ্ট যা চাইলে ও লিখতে পারবেন না, তাতে কি! ছোট বাচ্চাদের মতো আঁকিবুঁকি করেন। আঁকার সময় আপনার কষ্ট গুলোর নামে একেকটা অবজেক্ট রাখেন কতগুলো আঁকার পর দেখেন আর ভাবেন আপনার হাসি থামবে না। আপনার আঁকা যত অদ্ভুত হবে আপনার ততো বেশি হাসি পাবে।গ্রামের একজন সাধারণ গৃহবধূ সে লিখতে জানুক না না জানুক তার দুঃখ বিলাসের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা আসলে নকশিকাঁথার মাঠ।

সেখানে সে তার দুঃখ গুলো ফুটিয়ে তুলতে পারে আবার সে দুঃখ থেকে সুখও খুড়াতে পারে।এক্ষেত্রে আমি যখন লেখকদের গল্প কবিতার উদাহরণ টানতে যাই তখন আমার হুমায়ুন আহমেদ এর কালা কইতর নাটকের একটা সংলাপ বার বার মনে পরে। মানুষ বিভিন্ন ধরনের আছে। তারই একটি নাকি কালা কইতর।আমার মনে হয় সত্যিই মানুষ বিভিন্ন ধরনের হয় তারই একটি লেখক,কবি,গল্পকার যাই বলেন সেটাই। ওনারা যা দেখেন বা ভাবতে পারেন সাধারণ মানুষ তা পারে না।

আমার এ এলোমেলো লিখা বুঝতে পারবেন কিনা জানি না, তবে এখান থেকে আপনি একবার দুঃখ বিলাস করে দেখতে পারেন বিফলে যাবে না আসা করি।

IMG_20221029_180532_530.jpg

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Logo
Center