বছর ঘুরে আবারও এলো রমজান মাস। এই মাসটি বছরের অন্যান্য মাসের চেয়ে কিছুটা হলেও আলাদা। আগামীকাল থেকেই এই দেশের ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা রোজা রাখা শুরু করবেন। যদিও পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আজকে থেকেই রোজা রাখা শুরু হয়ে গিয়েছে। তাহলে আমরা একদিন পিছিয়ে কেন? এটা নিয়ে কখনো চিন্তা করেছেন?
আমরা সবাই জানি আরবি ক্যালেন্ডার হল চাঁদের উপর নির্ভরশীল। চাঁদকে কেন্দ্র করে এই ক্যালেন্ডারের হিসেব রাখা হয়। পৃথিবীকে কেন্দ্র করে একবার ঘুরে আসতে চাঁদের ২৭.৩ দিন সময় লাগে। এক অমাবস্যা থেকে আরেক অমাবস্যা পর্যন্ত সময়ের ব্যাবধান ২৯.৫৩ দিন। এই সময়টুকুর কখনো হেরফের হয় না। নিয়মিত ঘটে আসছে।
পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদের ঘুরে আসা কিংবা অমাবস্যার ব্যাবধানসহ অন্যান্য কিছু মিলিয়েই মূলত আরব বিশেষজ্ঞরা আরবি ক্যালেন্ডার বা চন্দ্র মাসের উৎপত্তি শুরু করেছিলেন। যা এখনো পর্যন্ত টিকে আছে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে পুরো পৃথিবীর মুসলিমেরা কেন একই দিনে রোজা কিংবা ইদ শুরু করতেক পারে না, তাই না? ছোট বেলা থেকে এই প্রশ্নটা প্রায়ই মাথায় ঘুরতো। এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরার পেছনে অবশ্য আরো একটি কারণ আছে। বাংলাদেশের বেশ কিছু এলাকায় কিন্তু সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রোজা ও ইদ পালন করা হয়ে থাকে। সে হিসেবে পুরো বাংলাদেশের চেয়েও একদিন আগে তারা রোজা ও ইদ পালন করে থাকে।
বিজ্ঞানের কল্যানে এখন চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে চন্দ্র মাসের হিসেব করা হয় না। বরং গাণিতিক হিসেবের মাধ্যমে কবে, কখন, কোথায়,কোন সময়ে চাঁদ উঠবে, তা খুব সহজেই হিসেব নিকেশ করে বলে দেয়া সম্ভব। কিন্তু মুসলিমদের রীতি অনুযায়ী রোজা ও ইদ পালন করার ক্ষেত্রে চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করতে হয়। যদিও সবাই তা করে না।
ছোটবেলায় ভাবতাম, সৌদি আরবে যেদিন চাঁদ উঠে, আমাদের দেশে তার পরের দিন চাঁদ উঠে। ছোট বেলার এই ভাবনাটা যে ভুল, সেটা মূলত বড় হওয়ার পর বুঝতে পেরেছিলাম। পুরো পৃথিবীতে প্রায় একই দিনেই চাঁদ উঠে। কিন্তু পৃথিবী যেহেতু গোল, তাই পৃথিবীর সব অংশ থেকে একই দিনে চাঁদকে পুরোপুরি ভাবে দেখা যায় না। ঠিক তেমনি আমাদের দেশেও ঐদিন চাঁদ ঠিকই উঠে, কিন্তু সেটা এত ছোট যে চোখের দেখায় বুঝা যায় না। আর এই কারণেই আমরা একদিন পর, অর্থাৎ যেদিন চাঁদকে সুন্দর ভাবে দেখা যায়, সেদিন থেকেই আমাদের রিচুয়াল শুরু করি।
যায় হোক, জ্ঞান বিজ্ঞানের কথা বাদ দিয়ে এখন ছোটবেলার কিছু স্মৃতির কথা বলা যাক। আমরা যারা নিজেদের নাইন্টিজ কিডস বলে দাবী করি, তাদের ছোটবেলাটা কিন্তু অনেক মজার কেটেছে। বিশেষ করে ইদ কিংবা রোজার সময়গুলোতে এমন সব অভিজ্ঞতা আমাদের আছে, যেগুলো আমাদের পরের প্রজন্ম চিন্তাও করতে পারবে না। সেসব মজার মজার ঘটনাগুলো কিন্তু ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি থেকে। আর সেসব স্থানে দখল করে নিচ্ছে নতুন কিছু।
ছোটবেলায় রমজানের চাঁদ দেখার জন্য আমরা বিকেলের পর থেকেই খোলা আকাশের নিচে মাঠে বসে থাকতাম। খুব ধৈর্য্য ও উত্তেজনার সাথে আমরা অপেক্ষা করতাম কখন চাঁদের দেখা পাওয়া যাবে। কখনো কখনো চাঁদের দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়ে পড়তে বসতাম। আবার কখনোও বা চাঁদের দেখা পেয়ে মনের আনন্দে দল বেঁধে সবাই মিলে এই গলি থেকে ঐ গলি মিছিল করে বেড়াতাম।
কেউ কেউ তো আবার আতস বাজি ফুটাতে শুরু করতো। যদিও বর্তমানে আতশ বাজি ফাটানো নিষেধ। কিন্তু মিছিল করা তো আর নিষেধ না। এরকম চাঁদ রাত গুলোতে আমি সে সময় গুলোকে অনেক মিস করি। ইচ্ছে হয় যেন আবারও সে সময়গুলোতে এই দৌড়ে চলে যাই। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না।
এখনকার ছেলেমেয়েদের অবশ্য আমরা তেমন সুযোগও দিচ্ছি না। সারাক্ষণ স্কুল, প্রাইভেট, বাসা আর মোবাইলের গন্ডিতেই আটকে আছে এরা। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছি কই? বাইরে গিয়ে খেলাধোলা করার মতো মাঠ আছে? পুকুর আছে? নেই... তাহলে তারা কী করবে? ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট কিছু গন্ডিতে আটকে পড়ে আছে। সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসার মতো ক্ষেত্রও তৈরি করতে পারছি না আমরা।
যায় হোক, আজকে যখন এলাকার মসজিদে চাঁদ দেখার ঘোষণা দেয়া হয়, তখন হুট করে পুরো এলাকায় একটা উৎসব উৎসব আমেজ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মিছিল হয়তো হয় নি, কিন্তু দূর থেকে তাদের চিৎকার, আনন্দ উল্লাসের ধ্বনি ঠিকই কানে আসছিল। এই ছোট ছোট আনন্দগুলোও মনটাকে অনেক ভাল কর দেয়।
এশার নামাজের পর সবাই মিলে রমজানের প্রথম তারাবির নামাজটা পড়ে নিলাম। এমনিতেই গত কয়েকদিন ধরে গরমের মাত্রাটা অনেক বেশি। গত সপ্তাহে যদিও হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছিল। কিন্তু এই কয়েকদিনে তাপমাত্রা সম্ভবত আরো বেড়ে গিয়েছে। এবারের রোজা গুলো রাখা সকলের জন্যেই কিছুটা কঠিন হয়ে যাবে।
যায় হোক, সবাইকে রমজান মাসের শুভেচ্ছা। সকলের জীবন সুন্দর কাটুক, এই কামনায়...
ALL PICTURES COLLECTED FROM PIXABAY AND MOON LIVE STREAMING.