আমরা যেই কাজটা করছি সেই কাজটাকে কি ভালোবেসে করছি ? না কি পরিবারের চাহিদা মেটাবার জন্য করছি ?

আমরা অনেকেই এ পি জে আবুল কালাম কে চিনি । তিনি ইন্ডিয়ার রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন। তার বহুল প্রচলিত একটি বানী হচ্ছে- “স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমের মধ্যে দেখ। স্বপ্ন সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না” । খুব দারুন একটা উক্তি, আমরা আমাদের স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকি । কিন্তু এখানে ভাবার বিষয় হচ্ছে আমরা যেই স্বপ্নের পিছনে ছুটি আসলেই কি সেটা আমাদের স্বপ্ন নাকি পরিবারের চাহিদা ও লোক দেখানো কোন নাটক ?

আমার মতে আমাদের এখনকার শিক্ষা ব্যবস্থায় যেন মরিচিকা ধরেছে । শুধু শিক্ষা ব্যবস্থায় নয় আমাদের সমাজ, পরিবার এবং নিজেদের চিন্তা ভাবনায়ও ঘুনে ধরেছে। সমাজ আর শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের নিজেদের স্বপ্নের তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছা আমাদের মধ্য দিয়ে পূরণ করতে চায়। আমরা কি চাই সেটার কোন মুল্যই তারা দিতে চায় না , তাদের কাছে মুল্যবান হচ্ছে তারা কি চায় সেটা। আমরা অনেকেই আমির খানের 3 Idiots মুভিটা দেখেছি । মুভিটিতেও এই বিষইয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। এটি একটি ভয়াবহ ব্যধি আমাদের সমাজ ও আমাদের জন্য ।


Source

আমরা ছোট থাকতেই আমাদের পরিবার আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রিতি মতো শেষ করে ফেলে। তারা ঠিক করে ফেলে যে আমাদের কি হতে হবে, কিন্তু তারা আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে না যে আমরা কি হতে চাই । এখনকার বাজারে চড়া দাম হচ্ছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, উকিল ইত্যাদি পেশার মানুষ দের , তাই তারা চায় আমরা যেন এর মধ্য থেকে একটি পেশা বেছে নিয়ে তার পিছনে ইচ্ছা না থাকা স্বত্বেও জীবনের রেসে বেঁচে ছুটে চলি। এসবের বড় প্রতিফলন দেখা যায় ছোটবেলা থেকেই আপনি এখন যেকোন শিশুকে জিজ্ঞাসা করুন যে সে বড় হয়ে কি হতে চায় ? দেখবেন অধিকাংশ উত্তর আসবে ডাক্তার নয়তো ইঞ্জিনিয়ার।

আর এ সব কিছুর শুরু হয় স্কুল জীবন থেকে। আমাদের বাবা মা আমাদের উপর তাক করা ঐ সকল স্বপ্ন সার্থক করার জন্য তাদের চেষ্টা শুরু করে দেন। প্রথমত সন্তানকে ভালো নামকরা প্রাইভেট স্কুলে পড়াতে হবে। যেখানে ইংলিশ ভালোভাবে শেখায় । আর এই সুযোগে ঐ সকল প্রাইভেট স্কুল অভিভাবকদের পকেট খালি করার মিশনে লেগে যায়। আমাদের অভিভাবকরা ওসব ব্যাপারে চিন্তা না করে চালিয়ে যায় আপ্রন চেষ্টা। ক্লাসের মধ্যে যেসকল ছাত্রছাত্রীরা ইংলিশ ও অংকে ভালো ফলাফল করে সবাই তাদেরকেই ভালো মেধাবি হিসেবে মেনে নেয়। আর যারা এসব বিষয়ে খারাপ করে তাদেরকে সবাই বোঝা ভাবতে থাকে। তারা হয়ে যায় সমাজের ঠাট্টা মশকরার একটি পাত্র। ঠিক এভাবেই কাটতে থাকে স্কুল জীবন । তারপর সময়ের কালেক্ষপনে যখন নবম শ্রেনিতে উঠে তখন শুরু হয় গ্রুপ বাছাইয়ের পর্ব যারা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে তাদেরকে নিতে হবে সাইন্স , যারা ব্যাংকার হবে তাদের নিতে হবে ব্যবসা শিক্ষা এবং যারা হবে মস্ত বড় উকিল তারা নিবে মানবিক বিভাগ। এতে তাদের ঐ বিভাগ পছন্দ হোক বা না হোক তাতে কারো কিছু আসে যায় না। এভাবেই পরিচালিত হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্তা। হয়তো এই কারনেই আমাদের দেশে কোন ক্রিকেট গড সাচিন টেন্ডুল্কার নেই । হয়তো এই কারনেই আমাদের দেশে নেই কোন বিল গেটস। চিন্তার বিষয় তারা সকলেই পৃথিবীর নাম করা ব্যক্তিত্ব তারা কি তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া স্বপ্নের পিছনে ছুটেছিলেন ? নাকি নিজেদের ইচ্ছা স্বপ্নের পিছনে ছুটেছেন ? তাদের জীবনি পড়লেই জানতে পারবেন যে তারা কোন স্বপ্নের পিছে ছুটে ছিল । বিল গেটস বিশ্বের অন্যতম ধনি ব্যক্তি যে তার ক্লাসে ব্যাকবেঞ্চার ছিল সে তার কম্পানি তে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ দেয় সেই ক্লাসের মেধাবি বন্ধুকে, আশা করি পার্থক্যটা বুঝে গেছেন । তারা সকলেই তাদের স্বপ্নকে অপমৃত্যুর হাত থেকে বাচিয়ে সেটার পিছে ছুটেছিল। এই সময় তাদেরকে সম্মুখীন হতে হয়েছে অনেক সমস্যার, শুনতে হয়েছে অনেক কটু কথা। কিন্তু এসব উপেক্ষা করে তাদের ভালোবাসার স্বপ্নের পিছে ছুটেছিল বলেই সাফল্যতর হতে পেড়েছে ।


Source

আসুন আমরা সবাই যেই কাজটি করার চিন্তা ভাবনা করছি প্রথমে নিজেকে প্রশ্ন করি যে সেই কাজটিকে কি আমরা সত্যিই ভালোবাসি নাকি। যদি ভালোবেসে থাকি তাহলে সেই কাজটি করে যে তৃপ্তি পাওয়া যাবে তা অন্য কোন কাযে পাওয়া যাবে না। সব শেষে একটাই কথা বলবো - "রঙ তুলিতে যে সমস্ত স্বত্তা নিয়ে মিশে আছে, আর্থিক হিসেব মেলাতে তাকে চারুকলার বদলে স্থাপত্য নিয়ে পড়াশুনা করতে হয়েছে। সাহিত্য যার ধ্যান জ্ঞান, পরিবার তার উপর চাপিয়ে দিয়েছে আইন নামক চকমকে জ্ঞানের পাথর।" তাইতো আমরা আজ একটি সাচিন টেন্ডুল্কার , একটি বিল গেটস থেকে বঞ্চিত হচ্ছি ।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now