একটি দেশ যতো উন্নত, তার অর্থনীতি ততো বেশি শক্তিশালী। দিন বদলের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। সর্বত্রই চোখে পরার মতো উন্নতি দৃশ্যমান। স্বভাবতই আমাদের দেশের অর্থনীতিরও উন্নতি ঘটার কথা, শক্তিশালী হবার কথা বাংলাদেশের টাকার!
কিন্তু আসলে কি তা হচ্ছে? মূল্যস্ফীতি-মুদ্রাস্ফীতির চাপে পিষ্ট সামগ্রিক অর্থনীতি। ক্রমশই কমে যাচ্ছে রিজার্ভ। জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার সাথে তাল মিলিয়ে চলার মতো অর্থ আসছে না।
বহুমুখী উন্নয়ন মেগা প্রকল্পগুলোকে এখন গলার কাঁটা বলেই হয়তো মনে হচ্ছে। সেসব সম্পন্ন করার জন্য বৈদেশিক সংস্থার ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে। আর এসবের দায় মেটাতে হচ্ছে দেশের জনগণকেই!
সবজির বাজারে আগুন! কোনোকিছুতেই হাত দেওয়া যাচ্ছে না। এমন চলতে থাকলে শুধু হাওয়া খেয়েই হয়তো বাঁচতে হবে নিম্নবিত্ত শ্রেনির মানুষদেরকে। তখন হয়তো শুধু ছবিই হবে সব্জির সম্বল। অথচ একটা সময় আর কিছু না হোক সবজি আর ডিম জুটতো সবারই।
বাজারে ১০০টাকার নিচে কোনো সবজিই পাওয়া দুষ্কর। যেই আলু ছিলো সবার পাতে তা এখন হাফসেঞ্চুরির কমে আসেই না। পেঁয়াজও উঠে আছে শিকেয়। তাও যদি এ বাড়তি দামের মালিক কৃষকেরা হতো, তাও হতো। এসব চলে যাচ্ছে শিকলের মধ্যের শৃঙ্খলে, এসব মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের বলি হচ্ছে ওপ্রান্তের কৃষকেরা আর এ প্রান্তের আমরা।
ছবিগুলো হয়তো মনে হতে পারে অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু ভেবে দেখুন, কৃষিভিত্তিক এ বাংলাদেশে যেখানে উর্বরা মাটি তাঁর দুহাত উজাড় করে দিয়েই চলেছে অবিরত, সবজির সংকট খুব কমই হয়, তাও কেন এ মূল্যের ঊর্ধ্বগতি? সংকট থাকলেও নাহয় মেনে নেওয়া যেতো।
তবে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে, ঋণখেলাপীদের থেকে টাকা আদায় করলে, পাচারকরা অর্থ ফেরত আনলে এ দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। এ দেশের মানুষের থেকে দুর্নীতি নামক ব্যধিটা যদি কোন মন্ত্রবলে দূর করে দেয়া যায়, তাহলে সত্যিই এ বাংলা পরিণত হবে সোনার বাংলায়।
মানুষের অর্থের প্রতি লোভ থেকেই এতো ঋণখেলাপী, অর্থ পাচারকারীর জন্ম। অর্থাৎ অর্থই ঘটিয়ে চলেছে অনর্থ এ দেশের জন্য। সামগ্রিকভাবে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু গরীব আরো গরীব হচ্ছে এবং বড়লোকের অর্থ বেড়ে চলেছে হাজারগুণে! যদি মানুষ এতো অর্থলোভি না হতো, তাহলে এ দেশের উন্নতি আরো হতো এতোদিনে।
আর অর্থনীতির এ অবস্থা কাটিয়ে যদি ওঠা সম্ভব হয়, বাইরের লোন পরিশোধ করা হয় এবং ভবিষ্যতে যদি আর বড় অংকের লোন নিতে না হয়, তাহলেই যেসব মেগা প্রজেক্ট দেখে কিছুটা হলেও কপাল কুঁচকে উঠছে, সেসবের উপকার প্রকৃতভাবেই লাভ করবে এ দেশ এবং দেশের মানুষেরা।