Horror Story | চোখ |

মায়ের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। একা একা কি যেন বিড় বিড় করতে থাকে। চোখের নিচে গাঢ় বাদামী দাগ পরেছে। খুব জোড় করেই দু গাল খাওয়াতে হয়। পুরো পরিবারটাই যেন বিদ্ধস্থ হয়ে গেছে আমাদের।হবেই বা না কেন? একটা পরিবার টিকে থাকে একজন মায়ের হাতে। একজন মা ই তো পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষকে জুড়ে রাখে। অথচ সেই মা খোদ যখন পুরো পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন পরিবারটাও কেমন যেন খণ্ড খণ্ড হয়ে যায়। আমাদের ও তাই হলো। হঠাৎ করে মা কেমন যেন হয়ে গেলেন। আমাদের সাথে আর কথা বলেন না।কিসব আবোলতাবোল বলতে থাকেন। কিছুই বুঝতে পারিনা।শুধু একটা ছোট্ট শব্দ বার বার কানে এসে বারি খায়, "চোখ"।
pexels-lennart-wittstock-316681.jpg

শুরুর দিকে মা এমন ছিলেন না। খুব হাসিখুশি মানুষ আমার মা।তবে জানিনা একরাতে কি হলো।মায়ের ঘর আমার ঘরের পাশেই।মায়ের ঘরের সাথে বাথরুম নেই।আমার আর মা বাবার ঘরের ঠিক মাঝখানটাতে একটা আছে সেটাই আমরা ব্যাবহার করি।আরেকটা অবশ্য আছে তবে সেটা বড় ভাবি আর ভাইয়ার ঘরে।মা সেরাতে বাথরুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে উঠেছিলেন সম্ভবত। আমি মধ্যরাতে হঠাৎ মায়ের চিতকার শুনে দৌঁড়ে গেলাম। বাবা হয়তো টের পাননি।আর ভাই ভাবি হয়তো টের পেয়েও পরোয়া করেনি। আমি গিয়ে দেখলাম মা হুলুস্থুল হাঁপাচ্ছে! আমি মাকে ধরে জিগেস করলাম কি হয়েছে! মায়ের হাঁপানো বন্ধ হচ্ছিলো না। বাবা কে জোরে ডাকতেই বাবা উঠে এলেন। মা জোরে জোরে আয়তুল কুরসি পড়ছিলেন।বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা দেখে মা খুব ভয় পেয়েছেন। কিন্তু কি?
বেশ কিছুক্ষন পর মা ঠান্ডা হলেন। সেরাতে মাকে কিছু জিগেস করলাম না।বাবা মাকে নিয়ে গেলেন।মা ঘুমুতে পেরেছিলেন কিনা জানিনা তবে আমি সারারাত জেগে ছিলাম কেন যেন! শেষ রাতে সাহস করে একবার বাথরুমেও গিয়েছিলাম৷ মা আসলে কি দেখেছে তা পরখ করার জন্য।কিন্তু অস্বাভাবিক কিছুই দেখতে পেলাম না। তবুও রাতে ঘুম হলো না আমার। আমি সকাল সকাল রান্নাঘরে চলে গেলাম নাস্তা বানাতে৷ মা রাতে ঘুমুতে পেরেছে কিনা কেজানে।আর বড়ভাবি ঘরের কাজ অতো করতে পারে না।আর দীপুর ইস্কুলে যেতে হবে। তাই আমি কোনোরকম নাস্তা বানালাম যদিও অতো ভালো পারিনা। মা একটু পরই এলেন। মাকে অন্যমনস্ক দেখালো।আমাকে রান্নাঘরে দেখে একটুও অবাক হলেন না। দুপুরের রান্নার জন্য বোধহয় পেয়াজ কাটতে বসলেন। আমি বললাম, মা আমি তো কেটে রেখেছি।সব করা আছে। তুমি শুধু রেঁধো।কেমন?
মার হুশ হলো এবার! বললেন, কিরে! এতোকিছু কখন করলি তুই মণি?মাত্র তো ৭ টা বাজলো ঘড়িতে। কখন উঠেছিস ঘুম থেকে?
আমি হেসে বললাম, আমি তো ঘুমাইনি! আমার মায়ের জন্য জেগেছিলাম। যাতে আমার মাকে আবার কেউ ভয় না দেখাতে পারে।
মায়ের চেহারায় ভয়ের আভাস জড় হলো এবার।মা আমার খুব কাছে এসে বললেন, আমি বুঝতে পারছিনা কিছু।
এই এক বাক্য বলতেই মা কয়েকবার আটকে আটকে গেলেন।
আমি বললাম, দেখো গিয়ে বড় ভাবিই তোমাকে ভূত সেজে ভয় দেখিয়েছে।নাহলে উঠে এলোনা কেন সে? নিজেও আসেনি ভাইয়াকেও আটকে রেখেছে!
মা এবার একটু গরম হলেন।বললেন, না জেনে কথা বলিস কেন? ও ওসব করবেনা।আর সম্ভবও নয়।
আমি জিগেস করলাম, কেন সম্ভব নয়?
মা আবারো চিন্তিত হলেন।দেখলাম মায়ের কপাল কুচকে গেছে। ঠোঁটদুটো কাঁপছে। এবার মায়ের কথা হয়তো আবার আটকে আটকে যাবে।তবুও আগ্রহভরে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মা বললেন, কাল রাতে আমি উঠলাম বাথরুমে যেতে। কিন্তু বাথরুমের সামনে এসে দেখলাম বাথরুম ভেতর থেকে লাগানো।তার মানে ভেতরে কেউ আছে!তোর বাবাকে তো দেখে এসেছিলাম ঘুমুচ্ছে। তাই মনে হলো ভেতরে হয়তো তুই! আমি ভাবলাম তোর ঘরে এসে বসি।যখন তুই বের হয়ে তোর ঘরে যাবি তখন আমি বাথরুমে যাবো। কিন্তু তোর ঘরে যেতেই দেখলাম তুই তোর ঘরেই ঘুমিয়ে আছিস। আশ্চর্য! বাথরুমে তাহলে কে? ফরহাদ আর লুবনার তো আসার কথা নয় ওদের ঘরেও তো বাথরুম আছে।মাঝে একবার দীপুর ঘরে গিয়েও দেখে এসেছি, ঘুমুচ্ছে ও।
pexels-adrien-olichon-2823459.jpg

আমি হা করে মায়ের কথাগুলো গিলছিলাম।
বললাম, মা ভাইয়া বা ভাবিই হয়তো এসেছিলো।হয়তো কোনো বেকায়দায় পড়ে!

মা এবার বেশ রেগেই বললেন, আমার পুরো কথা টা শোন তো তুই মণি! তুই কি ভেবেছিস এ কথা আমার মাথায় আসেনি? কথার মাঝে আর একটা কথাও বলবি না।
এবার আমি চুপ করে গেলাম।মা আবার বলতে শুরু করলেন, আমি বাথরুমের দরজার সামনে আবার ফিরে গেলাম।বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। ফরহাদ নাহয় লুবনা কেউ একজন বেরিয়ে আসবে ভেবে।কিন্তু না অনেক্ষণ হয়ে গেলো। আমি এবার ভাবলাম হয়তো দরজাই আটকে গেছে! আর আলো বোধহয় কেউ ভুল করে জ্বেলে রেখে গেছে।তাই আমি কি মনে করে দিয়ে যেন আলো নিভিয়ে দিলাম বাথরুমের।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সাথে সাথে আলো আবার জ্বলে উঠলো! আমি ভিষণ অবাক হলাম কিন্তু তখনো ভয় পাইনি।আবার আমি বাতি নিভিয়ে দিলাম৷ কিন্তু আবারও জ্বলে উঠলো। এবারও আমার মাথায় ভয়ের কথা এলোনা।উল্টো ভেবে বসলাম চোর টোর হবে।কারনে এতখনে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম যে ভেতরে কেউ তো আছেই। এটাও মাথায় এলো না যে চোর এলেও বাথরুমে তো যাবেনা! আমি দরজা ধাক্কাতে লাগলাম। খুললো না। ঠাণ্ডা আর গরম গলায় ক্রমান্বয়ে বলতে লাগলাম বেরিয়ে আসতে। কিন্তু কোনো লাভ হলো না।আমি এবার জোরেই দরজা ধাক্কাতে লাগলাম।একটু পরেই ভেতর থেকে ১...২...৩ পরপর তিনবার কে যেন দরজায় আঘাত করলো। এবার আমি খানিকটা ভয় পেলাম।চোর হলেও এমন কেন করবে? আমাকে বিভ্রান্ত করতে? আমি হারলাম না দরজা ধাক্কাতে লাগলাম। হঠাৎ করে ছিটকিনির আওয়াজ করে দরজাটা খুলে গেলো। ভেতরে আমি কাওকে দেখতে পেলাম না! ভয় পেতে হয়তো আমার মস্তিষ্ক কিছুটা সময় নিলো।তখনই হঠাৎ বাথরুমের বাতি নিভে গেলো। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম ঠিক আমার নাক বরাবর উচ্চতায় টকটকে লাল দুটো চোখ। আর কিচ্ছু নেই। নেই অক্ষিকোটর নেই তার অংগ।শুধুই দুটি চোখ! প্রায় আমাকে ছুঁয়েই আমার সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলো!

TO BE CONTINUED.....

Pictures are taken from pexels.com

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now