Ghost Story | চোখ অন্তিমদশা |

আমি কিচ্ছু না ভেবে এক দৌঁড়ে আমার ঘরে এলাম।ঘুমন্ত দীপুকে তুলে ওর গালে সজোরে একটা চর মেরে বললাম, জানতি তুই সব জানতি! জেনে বুঝে ভাইয়া কে কেন তুই বাথরুম পর্যন্ত নিয়ে গেলি! তুই খুনি দীপু! আমি সব্বাইকে সবকিছু বলে দেবো! আমি নিজেকে কি করে ক্ষমা করবো? আমিও যে সামিল ছিলাম!
আমি মেঝেতে বসেই কাঁদতে লাগলাম।দীপু সেখান থেকে চলে গেলো। ভাইয়ার জানাযা হলো সকাল বেলা। জানাযা শেষে ভাইয়া কে দাফন করা হলো।আমাদের পরিবারটা যেন ধ্বংস হয়ে গেলো এক নিমিষেই। ভাবি যেন পাথর হয়ে গেছে। নিজের ঘরে ভাইয়ার ছবি জড়িয়ে শুয়ে থাকে। মা জ্ঞান হারায় একটু পর পর। আমি আমার ঘরের এক কোণায় বসে থাকি।মাথার ভেতর ছোট্ট একটা জায়গায় বিশাল সব বিষয়গুলো দলা বেধে আছে! কি হলো? কেন হলো?
কোনো উত্তরই পাচ্ছিলাম না।দীপু আমার ঘরে এলো। ওর চেহারায় একটুও আফসোস অথবা নিজের ভাই কে হারানোর একটু খানি কষ্ট হলেও তো থাকার কথা! নেই!
দীপু বললো, আপু তুই কোনো মন্দ কাজে সামিল ছিলি না।
pexels-pixabay-35888.jpg

আমি দীপুর কথার কোনো পাত্তা দিলাম না।ওকে আমি কিছুতেই চিনতে পারছিনা। ও আমার ভাই নয়।
দীপু বলতে লাগলো, তুই একজন পাপী কে তার পাপের শাস্তি দিতে সাহায্য করেছিস! যদি তারপরও তোর মনে হয় যে তুই পাপ করেছিস বা আমি খুনী তাহলে আমার আর কিচ্ছু বলার নেই।
দীপু চলে যেতে নিলে আমি ওকে আটকালাম।চোখের পানি হঠাৎ বন্ধ হলো আমার।চোখ মুছে জিগেস করলাম, তুই কি বলতে চাইছিস?

দীপু বললো, রুমকির কথা মনে আছে তোর?
আমি বললাম, আছে!
দীপু আবার জিগেস করলো, মনে আছে ও যে বাবার আলমারি থেকে টাকা মায়ের গয়না আর তোর প্রিয় ঘড়িটা নিয়ে পালিয়েছিলো?
আমি বললাম, বললাম তো মনে আছে! আমাদের ভাড়া বাড়িতে কাজ করতো ও।আমার বেশ সখ্যতা ছিলো ওর সাথে৷ কিন্তু একদিন চুরি করে পালিয়ে গেলো! খুব কষ্ট পেয়েছিলাম আমি।মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম।যাইহোক, সব মনে আছে।কিন্তু কেন? কিসের জন্য বলছিস তুই ওর কথা?
দীপু বললো, তোর হাতটা দে।
আমি কিছু না বুঝেই ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। ও আমার হাতে একটা ঘড়ি পড়িয়ে দিলো! খেয়াল করে দেখলাম এটা তো আমার সেই প্রিয় ঘড়িটা। রুমকি যেটা নিয়ে গেছে!
আমি অবাক হতেই দীপু বললো, রুমকি তোর ঘড়ি নেয়নি। ও কিচ্ছু চুরি করেনি।এমনকি ও কখনো পালায়ই নি!
আমার অবাক হওয়া সীমা ছাড়ায়। কোনোকিছুর সাথেই কিছু মিলাতে না পেরে ওকে বললাম, তুই কেন সরাসরি মূল কথা টা বলছিস না?
দীপু এবার সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, রুমকি খুন হয়েছে!
আমি নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
দীপু বললো, জানতে চাস তো কে করেছে এই কাজ? তোর ভাই! যার মৃত্যু শোকে পাথর হয়ে গেছিস! আমাকে এমনকি নিজেকেও দায়ী করছিস! শুধু খুন করেনি! ও রুমকিকে ধর্ষণ করেছে।
আমি দীপুকে বললাম চুপ করতে! আমি খুব ঠান্ডা গলায় ওকে বেরিয়ে যেতে বললাম। ও গেলো না।
আমি বললাম, তুই ভাবছিস তোর এসব বাজে কথা আমি বিশ্বাস করবো? আচ্ছা যা ধরে নিলাম! ধরে নিলাম যে ভাইয়া এই কাজ করেছে এবং এরজন্যই মরেছে। তাহলে মা? মা কেন দেখে? আমরা কেন দেখতে পাইনা?
pexels-tejas-prajapati-609537.jpg

দীপুর চোখে আমি এবার পানি দেখতে পেলাম। দীপু আমার পায়ের কাছে এসে বসলো।বলল, আপুরে রুমকি কেঁদে মায়ের পায়ে পরেছিলো। সব কথা মাকে খুলে বলেছিলো। মা কি বলেছে জানিস? বাবার আলমারি থেকে দশ হাজার টাকা মায়ের গয়না আর তোর প্রিয় ঘড়িটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো।এ কথা কাওকে না বলে এ ঘর থেকে চলে যেতে! রুমকি বেশ অবাক হয়ে মায়ের ঘর থেকে নিজের ঘরে চলে যায়।না কিছুই নেয়নি সে। সেদিন রাতে আবারো ভাইয়া রুমকির ঘরে গেলো। রুমকি ভাইয়া কে বলল, এক্ষুনি বেরিয়ে না গেলে সে পুলিশের কাছে যাবে। ভাইয়া মানলো না কিছুই। রুমকিকে বেশ মারধোর করলো।শেষে পেট বরাবর লাথি মারলো।তারপর হঠাৎই আবিষ্কার করলো। রুমকি আর নড়ছেনা।পরক্ষণেই জানতে পারলো সে আর শ্বাস ও নিচ্ছে না। ভাইয়া ভয় পেয়ে গেলো।রুমকির লাল চোখগুলো যেন ওকেই দেখছিলো।ওর কি যেন মনে এলো ও রুমকির চোখ দুটো তে পেন্সিল কম্পাস ঢুকিয়ে দিয়ে নষ্ট করে দিলো।এরপর খুব ঠাণ্ডা মাথায় রুমকির শরির টা বিছানা চাদরে পুরে আমাদের জমির মাঝে গিয়ে পুতে দিয়ে আসলো। ফিরে এসে ভাইয়া মিছে কান্নার নাটক করে মাকে সব খুলে বললো। মা ভাইয়া কে একটা চড় মেরে বিচার করলেন! আর তারপরেই রুমকিকে যা যা দিয়ে এখান থেকে চলে যেতে বলেছিলেন তার সবগুলো ভাইয়ার হাতে দিয়ে বললো এগুলোও পুতে দিয়ে আসতে! ব্যাস কাহিনি রচিত হয়ে গেলো রুমকি চুরি করে পালিয়েছে!

এরপর সেই জমিতে আমাদের বাড়ি হলো। রুমকির লাশের হদিস পাওয়ার কোনো উপায়ই আর রইলো না। কদিন পর ভাইয়ার বিয়ে হলো।আমরা সুখে আনন্দে বাঁচতে লাগলাম।আর বাথরুমের ঠিক নিচথেকে রুমকির লাশটা অকাতরে অজস্র কান্না কাঁদতে লাগলো।

আমার দুটো চোখ টকটকে লাল হয়ে গেলো।যে ভাই এর জন্য একটু আগে কাঁদছিলাম।তার জন্য ঘৃণা দিয়ে আমার সারাটা হৃদয় ভরে গেলো।দীপু সবকিছু বলে চলে যেতে নিলে আমি ওকে হঠাৎ জিগেস করলাম,
যদি সবকিছু পোতা হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তুই এই ঘড়িটা কোথায় পেলি? আর তুই এই সবকিছু কি করে জানলি?

দীপু মুচকি হেসে বললো,
সেই লাল চোখের মালিক।

সমাপ্ত .....

Pictures are taken from pexels.com

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now