সব ঠিকই ছিল তোদের । সবাই ঠিক ভাবে মেনে নিয়েছিল বিষয় টাকে। তোদের বিয়ে হয়েছিল সবার মত দেবার মাধ্যমেই। তোরা দুজনেই ভালো ছিলি অনেক খুশি ছিলি তোদের বিবাহিত জীবন নিয়ে। এরই মধ্যে তোর বাবা-মা ও দাদা দেশের বাহিরে চলে গেল। সিঙ্গাপুরের ভিসা হয়ে যাবার কারনে আর দেরি না করে তোর মা-বাবা তোর দাদাকে নিয়ে চলে গেলেন। তাই তোদের সেই বিশাল বাড়িতেই আশিসকে নিয়ে থাকতে শুরু করে দিলি। প্রথম প্রথম বেশ ভালই তো ছিলি তোরা। আমাকে প্রতিদিনই আশিস তোদের বাড়ি নিয়ে যেত আর বলতো দাদা তুমি আমাদের সাথেই থাক আমাদের একা একা ভাল লাগে না। আমি গেলে তুই ও আমাকে বলতি দাদা তুমি এসেছ? আমি তোমার জন্য আজ এটা রাধবো ওটা রাধবো আর নানান ধরনের মজার মজার বাঙালি রান্না আমায় খাওয়াটি আমারও তোদের সাথে ভালই কাটতো। এর মাঝে তোর বাবা-মা ও দাদার কথা মনে পড়ে যায়। তুই ধীরে ধীরে মনমরা হতে শুরু করলি। আমাকে তোর অবস্থা দেখে আশিস এসে বললো দাদা দেখ আরশির এমন অবস্থা আমি কি করব। আমি আশিসকে বললাম তুই আরশিকে নিয়ে ইন্ডিয়া গিয়ে ঘুরে আয় তাহলে আরশির মনটা ভালো হবে একটু।
তোরা দুজনেই আমার কথায় রাজি হয়ে গেলি আর ইন্ডিয়া যাবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিলি। সব ঠিকই ছিল কিন্তু ভিসা নিতে গিয়ে দেখা গেল আশিসের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। ঐসময় পাসপোর্ট রিনিউ করতে পুরো এক মাস লেগে যেত। তাই আশিস তোর কথা চিন্তা করে তোর ভিসা করে কলকাতা তোর খালার বাড়ি পাঠানোর কথা বল্লো কিন্তু তুই রাজি হইলি না। তুই বললি যাইতে হইলে আশিসের সাথে জাবি না হলে দরকার নেই । কিন্তু আমার আর আশিসের জোরাজোরিতে তুই রাজি হইলি যাবার জন্য। তারপর আমি আর আশিস তোকে বিদায় দিয়ে আসলাম স্টেশনে। ট্রেনে ওঠার পর চলে আসলাম আমরা। আসার পথে খেয়াল করলাম আশিসের চোখে জল। আমি বললাম কিরে তোর চোখ জলে ভিজে গেছে কেন রে? কি হয়েছে তোর? আশিস বলতে লাগলো আসলে দাদা তুই তো জানিস আমি কোন সময় আরশিরে একা ছাড়ি নাই আর ওরে ছাড়াও কখনো থাকিও নাই। আমি বললাম আরে বোকা ছেলে ও ঘুরতে গেছে ওর খালার বাসায় কিছুদিন থাকলে ওর মন ভাল হবে এরপর তো আবার তোর কাছে ফিরে আসবেই তুই চিন্তা করিস না। আর তুই চিন্তা করতেছিস জানলে আরশি আবার চিন্তা করবে।
এথা বলে আমি আশিস কে বাড়ি দিয়ে যেতে লাগলাম আর আশিস আমার হাত ধরে বললো দাদা তুমি রাতে আজ আমার সাথেই থাক। ওই রাতটা কোন রকম পার করলো আশিস তারপর দিন তুই পৌঁছে গেলি খালা দের বাড়ি। আমারা ফোন দিয়ে খোজ নিলাম তুই ভালভাবেই পৌঁছে ছিলি। এভাবে করে তিন দিন কেটে গেল কিন্তু আশিস আর তোকে ছাড়া থাকতে পারছিল না । ও তোকে ফোন দিয়ে চলে আসতে বললো। কিন্তু তুই বললি আর কয়েকটা দিন থাকি না। ওদিন থেকে খালা ও ফোন নিয়ে বলতে লাগলো যে মাত্রই তো এসেছে মেয়েটা আর কয়েকটা দিন থাক না আমার কাছে। আশিক রাতে তোকে ছাড়া ভাল লাগছিল না বলে ছাদে গিয়ে বসে বসে ধুমপান করতে করতে কান্না করতেছিল। সেই সময় বিদ্যুৎ চলে যায় আর প্রচুর বাতাস বইতে শুরু করে অন্ধকারে উঠতে গিয়ে পা পিছলে ছাদ থেকে পড়ে যায় আশিক। পাঁচ তালার ছাদ থেকে পড়ে বেশ বাজে ভাবে আহত হয়ে কোমায় চলে যায় আসিক। সারারাত ওখানেই পড়ে ছিল। সকালে আমার ফোন আসলো রাকেশ তোর ছোটভাই ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছে ও এখন হাস্পাতালে ভর্তি। আমি সোজা হাস্পাতালে গিয়ে দেখি ও আই সি ইউ তে। আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম সে বললো খুব বাজে অবস্থা বেশিক্ষণ বাঁচানো যাবে না। আমি তোর ওর কাছে গেলাম ও আমায় বললো আরশি এসেছে? আমি বললাম না ও প্লেনে আর কিছু সময় এর মধ্যে চলে আসবে ও সকালেই টিকিট কেটে রউনা দিয়েছে তুই চিন্তা করিস না তুই ঠিক হয়ে যাবি। আশিস আমায় বললো আমি আর বাঁচবোনা আমি জানি। তুই আরশিকে দেখে রাখিস দাদা আর তুইও ভালো থাকিস। আর আরশির ভাল না লাগলে ওকে অর মা বাবার কাছে পাঠিয়ে দিস। ভালো থাকিস আর আরশিকে আমার জন্য কান্নাকাটি না করতে বলিস। তারপর তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতেই মারা গেল।
Photo by Sofia Alejandra from pexels.com
আমি তোর জন্য ওকে বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি আরশি। আমি যদি তোকে একা যাবার জন্য জোর না করতাম তাহলে আমার ভাইটা আজ বেঁচে থাকতো। আমি আমার ভাইকে বাঁচাতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিস আমি তোর আশিসকে তোর কাছে ফিরিয়ে দিতে পারলাম না।