ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটে নটিফিকেশন টোনে! এখন আর মনে হয়না নটিফিকেশন গুলো তার পক্ষ থেকে! তাই আর ঘেটে দেখাও হয়না! বেশ কিছুক্ষন অতিবাহিত হয়! ফোন আসে ধরিনা। কার ফোন ধরবো সে তো নয়।
কিন্তু হঠাৎ মন টা খচ খচ করে উঠে! দৌড়ে গিয়ে ফোন হাতরাই! বাংলাদেশী নম্বর! তার মানে সে নয়।
আবারো ফোন আসে।এইবার রিসিভ করি,
- তিতীর!
অপ্রস্তুত হয়ে যাই আমি! আহসানের কণ্ঠ এটা! আহসান! আমার আহসান!
আর কিছুই শুনতে পাইনা আমি! মাথা টা ঝিমঝিম করে ওঠে! ব্যাটারী ডেড!
চার্জার!
অন করে সেই নম্বরে বার বার ট্রাই করি আমি। অপর পক্ষের সারা পাওয়া যায়না! তবে কি ভ্রম? না! আমি স্পষ্ট শুনেছি! হুট করে বার্তা আসে! আবারো ভিন্ন নম্বর! অপেক্ষা করবে সে আমার জন্য! গ্লোরিয়া ক্যাফে বিকাল ৫ টা! এখন ৩ টা বেজে ৩০ মিনিট! আমি জানিনা এটা আহসানের মেসেজ কিনা! এটা কোনো ভ্রম কিনা! কিন্তু আমি যাবো। আমি শেষ চেষ্টা টা করবো।
৪টা বেজে ৩ মিনিট আমি ক্যাফেতে গিয়ে পৌছাই! অনেক খুঁজেও পরিচিত মুখটা দেখতে পাইনা! নিজের বাচ্চামি তে হাসি পেলো। সে তো ৫ টায় আসবে বলেছিল।
পিছন ফিরতে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে অস্বাভাবিক গতিতে পিছিয়ে পরছিলাম সে আমার হাত ধরে ফেলে। দেখলাম আমি পরিচিত মুখ।এটা স্বপ্ন নয়! এইতো আমাকে ধরে আছে!
-তিতীর! এখনি তো পড়ে যেতে! কি যে করো তুমি!
তুমি এতো শুকিয়ে গেলে যে? চোখের নিচের দিক টা! ঘুমাও না ঠিক মতো? একদম ই নিজের খেয়াল রাখতে শেখোনি!
আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো তার কথা শুনতে থাকি! হঠাৎ মনে হলো কিছু একটা অস্বাভাবিক!
তবুও শান্ত হয়ে বসি!
-কি খাবে বলো? খুব খিদে পেয়েছে জানো! কিচ্ছু খাওয়া হয়নি দুপুরে! কিছু বলছোনা যে?
-আহসান ! - বলোনা!
-কেমন আছো তুমি? - বিন্দাস! এতোদিন পর দেশে ফিরেছি সবার সাথে দেখা হয়েছে! খুব ভালো লাগছে জানো!
-সবার সাথে?
-সব্বার সাথে! - ফিরেছো কবে?
- উম ৭/৮ দিন! না ভুল বলছি ১১ দিন আজ!
- ১১ দিন!
- হুম
- আর তুমি আমার সাথে আজ দেখা করছো!
- সরি আসলে খুব ব্যাস্ত ছিলাম তাই ফোন ও করা হয়ে ওঠেনি!
- গত ৬ মাস ধরে তুমি ব্যাস্ত ছিলে! এতো টা বেস্ত যে একটা ফোন করতে পারোনি? নট ইভেন অ্যা সিংগেল টেক্সট?
-সরি!
-হোয়াট সরি? তুমি জানো আমার কি অবস্থা ছিলো ? চেষ্টা করেছো জানার?! - তিতীর, প্লীজ সবাই শুনছে!
-আহসান ! ইউ আর বিহেভিং লাইক এভ্রিথিং ইজ নরমাল! - সিন ক্রিয়েট করোনা তুমি!
হতবাক হয়ে যাই আমি! ও আমার আহসান নয়! অন্য কেউ! উঠে চলে আসি আমি! সবকিছু কেমন যেন মনে হতে থাকে! অনর্থক! আমি কিসের আশায় বেচে ছিলাম এতোদিন! কার অপেক্ষা করেছি! এমন জীবন তো আমি চাইনি!
বাড়ি ফিরতেই মা বললেন, তোমার জন্য প্রস্তাব এসেছে!
-হ্যা করে দাও মা!
-ওহ এ বেলা আর আপত্তি থাকবে কেন?
-জানিনা কি বলছ! আমাকে একা ছাড়ো! - আর ভং ধরিস না! এখন তো আর কোনো নাটক করবি ই না! যা চেয়েছিস তাই তো হচ্ছে!
-যা চেয়েছি তা চাহিদা হিসেবেই থাকুক! সব চাওয়া পূরন তো হয়না! তুমি যা বলবে তাই হবে।
বাবা মা দুজনেই হেসে ওঠেন! বাবা এগিয়ে এসে বললেন! - ছেলে ভালো, খুব সুখে রাখবে তোকে! ভাবিস না মা! যোগ্য পাত্র পেয়েছি তোর জন্য একেবারে!
-হুম
-ছবি দেখবিনা?
-না।
-তাহলে বাইরে গিয়ে দেখে আয় সশরিরে দাঁড়িয়ে আছে ছেলে টা!
-বাবা প্লীজ এতো চেনা জানার প্রয়োজন নেই!
মা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
-এহ! দুনিয়ার চেনা জানা সব ঘটিয়ে এখন রসের আলাপ!
আমি অনিশ্চিত দৃষ্টি তে বাবার দিকে তাকালাম।বাবা ইশারায় বাইরে যেতে বললেন।
কি বুঝলাম জানিনা! দৌড়ে বাইরে গেলাম।
আহসান!আহসান দাঁড়িয়ে আছে বাইরে! দৌঁরে গিয়ে ওর বুকে মাথা গুজলাম আমি! ও বলল,
-কেমন দিলাম সারপ্রাইজ? জানো! বাবা নিজে এসেছিলেন প্রস্তাব নিয়ে। কি হলো কথা বলছোনা যে? আবার অফ হয়ে গেলে!
আমি ওর বুকে কয়েক ঘা বসিয়ে দিলাম! দাত বের করে হেসে ও বললো, হয়ে দেখিয়েছি তো তোমার যোগ্য পাত্র?
আমি দু চোখে জল নিয়ে স্বস্তির হাসি হাসলাম।
অন্তর আমাকে বুকে জড়িয়ে গাইতে থাকলো,
তুমি রবে নিরবে
হৃদয়ে মমঃ
তুমি রবে নিরবে....