Law 01: Never Outshine Your Master

রবার্ট গ্রীন এর 48 Laws of Power এর প্রথম সূত্র পড়ে নিজের চাকুরি জীবনে কি কি করলাম তা নিয়ে ভাবতে বসলাম।

প্রথম ল'তে তিনি বলছেন, বস এর উপর পাকনামি না করতে। আপনার উপরে যে লাঠি ধরে আছেন তিনি যেন ইনসিকিউরড ফিল না করেন। উনি যদি ইনসিকিউরড ফিল করেন তাহলে আপনার বারোটা বেজে যাবে। এই ল-এর সাথে আমি একমত এবং দ্বিমত দুটোই পোষন করি। আগে একমত কেন পোষণ করছি সেটা বলিঃ

ঘটনা ০১ঃ

২০১২ সালে আমি বছরখানেক এক জুতো কারখানায় চাকুরি করি। আমার কাজ ছিলো ল্যাবে। আমি ছিলাম সবার চেয়ে জুনিয়র। আমার ইমিডিয়েট সুপিরিয়র ছিলেন দুইজন, আর একজন ছিলেন হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট। আমি ছিলাম খানিকটা অ্যারোগেন্ট। তবে কাজ ভালোই করতাম। উনাদের চেয়ে অন্তত ভালো করতাম বলেই আমার বিশ্বাস। এজন্য ইমিডিয়েট সুপিরিয়র দুজনের চক্ষুশূল ছিলাম। কারনে-অকারনে আমাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করতো। আমিও সমানতালে ঘাড়ত্যাড়ামি করতাম। সেসব কথা চলে যেতো হেড এর কাছে। ওদিকে আমি প্রায়ই ডিপার্টমেন্ট হেড এর অনেক কাজ যা উনি পারতেন না তা করে দিতাম। নিশ্চিত হিউমিলিয়েশন এর হাত থেকে দু/একবার আমি উনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম। এসব কারনে উনি আমাকে স্নেহ করতেন।

শেষ ভালো যার সব ভালো তার! আমি ইউনিফর্ম পরতে চাইতাম না। ওটা ঠিক ল্যাব এর সাদা ইউনিফর্ম ছিলো না যেটা আমাকে পরতে দেয়া হচ্ছিলো। ওটা ছিলো শ্রমিকদের ইউনিফর্ম (কাগজে-পত্রে আমি শ্রমিকই ছিলাম)। শ্রমিক হলেও আমাকে দিয়ে এক্সিকিউটিভ এর কাজ করিয়ে নেয়া হতো এবং অতি অবশ্যই শ্রমিক এর বেতনই দেয়া হতো। তো আমি সেই ইউনিফর্ম পরতে অস্বীকৃতি জানাতেই উনি আমাকে হুমকি দিয়ে বললেন যে ইউনিফর্ম না পরলে চাকরি করা যাবে না। সোজা কথা, রিজাইন দিতে বললেন। আমিও দশ মিনিটের মধ্যেই রিজাইন লেটার জমা দিয়ে দিলাম উনার টেবিলে যা ছিলো উনার জন্য একইসাথে হতাশার এবং লজ্জার। তবে বাকি দুজন মিটিমিটি হাসছিলেন। এভাবেই আমাকে আউটশাইন করার মাশুল দিতে হলো। প্রায় একইরকম ঘটনা আমি আবারও ঘটাই বছর দুয়েক পরেই। ফলাফল একই।

ঘটনা ০২ঃ

এবার আউটশাইন এর পজিটিভ ফল পেলাম। পোশাক কারখানায় আবার চাকুরি নিলাম, যথারীতি সেই শ্রমিক পোস্টে (সার্টিফিকেট তো নাই! কি আর করা?)। কিউসি'র চাকরি। সারাদিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে 'মাল' চেক করি। বস এর সাথে প্রায় প্রতিদিনই ঠোকাঠুকি হতো। প্রতিদিনই আমার নামে নালিশ করতেন উনি ডিরেক্টরের কাছে। ডিরেক্টর সাহেব একদিন কি মনে করে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে পরেরদিন থেকে উনার অ্যাসিস্ট্যান্ট বানিয়ে নিলেন আমাকে! এবার বস পড়লেন বিপদে। ভাগ্যিস তারপর থেকে উনার সাথে আমার আর কাজ পড়ে নি কখনও।

আরেক কারখানায় Pursuit of Happyness এর উইল স্মিথ এর মতো আমিও একদিন টিশার্ট এর স্যাম্পল এর উপর ভুল প্রিন্ট করা Happyness বানানটা ঠিক করে দিয়ে বস ও কোম্পানীর ম্যালা টেকাটুকা বাঁচিয়ে দেই। পরে তো বুঝেনই! প্রোমোশন!

এরপর থেকে স্কুলে চাকরি করছি গত আট বছর যাবত। বারো বছরের চাকরি জীবনে একটা জিনিস শিখেছি - বেশি পারফর্ম করলে বেশি ঠেলা নিতে হবে। এটা প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। প্রথমে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে দিতে হবে কিন্তু, তা নাহলে আপনারে উষ্টা মেরে তাড়িয়ে দেবে। আপনি যে প্রতিষ্ঠানের জন্য একজন এসেনশিয়াল ব্যক্তি সেটা যদি আপনার বস বুঝে যায় তাহলে আপনি তেড়িবেড়ি করলেও আপনার সাত খুন মাফ হয়ে যেতে পারে। জানেনই তো, দুধ দেয়া গরু লাথি দিলেও দোষ হয় না। তার আগ পর্যন্তঃ নেভার আউটাশাইন ইওর মাস্টার।

বারো বছরের চাকুরি জীবনে বহু কিছুই দেখা হইছে আমার। মোদ্দা কথা হলো- রবার্ট গ্রীন এর কথাকে বেদবাক্য না মেনে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়াটাই বোধহয় বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now