A short story without name

image.png

সাত সকালে প্রচণ্ড জোড়ে দরজা ধাক্কানীর আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গল। সকালের এত সাধের ঘুম এভাবে ভাঙ্গবে তা আশা করি নি। আমি নিশাচর জীব। আজ ছুটির দিন তাই ভেবেছিলাম রাতটা তো জেগেই কাটাই দিনটা না হয় আয়েশ করে ঘুমিয়ে কাটান যাবে। জগতের সব আশা যে পূর্ন হয় না সেই মহান বাক্যের যথার্থ প্রয়োগ দেখে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। দরজা না খুলেই বুঝা গেল দরজার ও পাশে দাড়িয়ে থাকা মহাদয় হলেন ফুলির মা। তিন মাস হল আমাদের বাসার ছুটা কাজ নিয়েছে এবং প্রত্যেক ছুটির দিনের সকালে পরম শত্রুর বেশে যার আমার রুমের দরজার সামনে আবির্ভাব ঘটে।
ফুলির মার নামটা কখনও জানা হয় নি। সবাই ফুলির মা ফুলির মা বলে ডাকে, এই নামের আড়ালে মহিলার নিজের নামটাই ঢাকা পড়ে গেছে।

বিছানা ছেড়ে উঠার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে শক্তি আমার নেই। ঠিক করলাম আজ আর দরজা খুলব না। দেখি কতক্ষণ ফুলির মার ধৈর্য শক্তি তার সঙ্গে থাকে। মিনিট পাঁচেক পর দরজা ধাক্কান বন্ধ হল। আমি মনের সুখে আবার অতল ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। সবে মাত্র ঘুম চোখে জেকে বসেছে তখনই দ্বিতীয় দফায় দরজায় কড়া পড়ল।এবার মনে হচ্ছে যেন পুলিশ এসেছে, দরজা ভেঙ্গে আসামিকে জেলে ভরবে। অবশেষে দরজা খুলতে হল সাথে সাথে ফুলির মা যে নাছোড়বান্দা তারও প্রমান পাওয়া গেল।

দরজা খুলে দেখি ফুলির মা ঝাটা হাতে চোখ গরম করে দাড়িয়ে আছে। আমার আধো ঘুম আধো জাগণে জন্যই বোধহয় মনে হল সাক্ষাত মহাকালী এসে আমার সামনে উপস্থিত হয়েছেন। কালী যেমন অসুরকে বধ করেছিল আজ ফুলির মা তার ঝাটা দিয়ে আমায় বধ করবে। তার এই নতুন আবির্ভাবে শুধু একটি জিনিসের কমতি তা হল লম্বা জিব্বা। আমি আর নিজেকে সামলাতে না পেরে বলেই ফেললাম,

ফুলির মা, তোমার জিব্বাটা একটু বের কর তো। তোমাকে দেখতে সাক্ষাত মা কলীর মত লাগছে।

আমার এই কথা মনে হয় ফুলির মার পছন্দ হল না। জগতের বেশিরভাগ মানুষ নিজের গায়ের রং কাল কথাটি শুনতে সাচ্ছন্দবোধ করে না হয়ত সে জন্যই। আমি যদি তাকে মা কলীর পরিবর্তে মা পারবতি বলতাম হয়ত তখন বিরক্তির বদলে তার মুখে হাসি ফুটে উঠত। সে চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে বলল,

দরজা ছাড়েন তো আফা, এমনিতেই আফনার জন্যে আমার অনেক সময় নইষ্ট হই গেছে। আমার তো আর শুধু আফনাগো বাসায় কাম কইত্তে হই না আরও ছয় বাসায় যাওন লাগে। আফনার আজাইরা কথা শুইনবার সময় নাই।

ফুলির মাকে ক্ষেপিয়ে এক আলাদা মজা পাওয়া যায়। মহিলা এখন সারাদিন তাকে কাল বলা হয়েছে এই চিন্তায় অস্থির থাকবে। আমি আবার মনের সুখে বিছানায় মাথা ছোয়ালাম। মনে সুখ নিয়ে গিয়েছিলাম বলেই হয়ত এবার সাক্ষাত মা এসে উপস্থিত হল।

কিরে ঘুম ভাঙ্গল?
না।
ঘুম না ভাঙ্গলে আবার কথা বলছিস কিভাবে?
মানুষ ঘুমের ঘোরেও কথা বলে।
ঘুমের ঘোরে আর কথা বলতে হবে না। এবার উঠ।
মা, ঘুমাতে দাও তো। জালিয়ো না।
আমি কথা বললেই তো তোর গা জ্বালা করে। আমার কথার তো কোন দাম নেই কারও কাছে। সারাদিন খেটে মরি, আর একটু কথা বলতে গেলেই আমি খারাপ।

আমি আর কথা না বারিয়ে সোজা বিছানা ছাড়লাম। এখন কথা বাড়ালেই বাজে একটা ঝগড়া হয়ে যাবে। সাত সকালে ঝগড়া করার ইচ্ছে কারো থাকে না।

হাত মুখ ধুয়ে বসার ঘরে গিয়ে বসলাম। আজ থেকে গরমের ছুটি শুরু। ভাবছি এবার চুটিয়ে বই পড়ব। গত তিনমাস ব্যস্ততার জন্য বেশি পড়া হয়ে উঠে নি। এর মধ্যে একবার ছোট খালার বাসায়ও যেতে হবে। গত তিনদিন ধরে ফোন দিচ্ছে, কিন্তু আমি ফোন ধরার আগেই কেটে যায়। ফোনে আমার কোন কালেই টাকা থাকে না যে কল ব্যাক করব। বিষয়টা এমন নয় যে আমি কৃপন, মোবাইল ফোনের প্রতি আমার কোনকালেই আকর্ষন ছিল না। হারিয়ে যাওয়ার পথের সবচেয়ে বড় বাধা এই গ্যাজেটটি মাঝেমধ্যে অসহ্য লাগে।

মা এক কাপ চা এনে মুখের সামনে রাখল। সাধারনত সে চা দিয়ে চলে যায় আজ গেল না, ঠায় দাড়িয়ে রইল। তার মানে কিছু বলবে কিন্তু কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না।

কিছু বলবে?
না। কি বলব।
তাহলে এভাবে দাড়িয়ে আছ কেন?
আমি দাড়িয়ে থাকলেও দোষ।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে সামনে রাখা পত্রিকা পড়া শুরু করলাম। বেশ কয়দিন যাবৎ ব্লো ওয়েল নিয়ে অনেক মাতামাতি হচ্ছে। এই এক গেইম খেলে কয়েক শত মানুষ নাকি আত্মহত্যা করেছে। এটা কোন কথা! আত্মহত্যা করার জন্য এই গেইম খেলা লাগে। ট্রেনের সামনে ঝাপিয়ে পড়তে লাগে দুই সেকেন্ড আর এই গেইম খেলে মরতে লাগে পন্চাশ দিন।

কাল রাতে তোর বাবার সাথে কথা হয়েছে।

মুখ তুলে দেখলাম মা এখনও যায় নি, যে কথাটা বলার জন্য দাড়িয়ে ছিলেন এখন তা বলার জন্য প্রস্তুত।

মানুষে সাথে কথা বলা ভালো। আফটারঅল, আমরা সামাজিক জীব।
তোর বাবা একটা ছেলে দেখেছে। দেখতে ভাল। আমরিকা থাকে। দেশে এসেছিল বোনের বিয়ে দিতে। এর পরের বার আসবে নিজে বিয়ে করতে।
বাবা কি এই ছেলেকে বিয়ে করবে না কি। করলে জানাবে আমার মত আছে। আর তোমার বিষয়ে চিন্তা করো না। তোমায় ভাল পাত্রে সমার্পন করা হবে।
ফালতু কথা বলবি না। এক থাপ্পর দিয়ে দাত উঠায়ে ফেলব।
তোমার গায়ে এত জোর নেই।
ধুর, তোর সাথে কথা বলাই মুসকিল।

মা রাগে ফুসতে ফুসতে রান্না ঘরে গিয়ে ঢুকল। কিছুক্ষন পর মেঝেতে পাতিল পড়ার ঝনঝন শব্দ হতে লাগল। আজ বাসায় থাকাটা মোটেই নিরাপদ নয়। বের হতে হবে এবং খুব তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। কোথায় ভেবেছিলাম চুটিয়ে বই পড়ব।

হতাশ পথিকের মত কোথায় যাওয়া যায় তা ভাবতে ভাবতে নিজের ঘরে আসলাম। এসে দেখি ফোনে তিনটা মিসডকল উঠে আছে। তিনটাই এসেছে ছোট খালার ফোন থেকে। মনে হচ্ছে তার আমার সাথে যোগাযোগ করাটা খুব জরুরি, না হলে এক মানুষ টানা তিনদিন ধরে পিছে লেগে থাকে না। মার ফোন থেকে ছোট খালাকে কল দিলাম, আমার ফোন বরাবরের মতই অচল। প্রথম রিং এই খালা ফোম রিসিভ করল।

আসসালামু ওয়ালাইকুম আপা, কেমন আছেন?
ভালো, ভালো।
বাসার সবাই কেমন আছে?
যেমন থাকার কথা তেমন আছে।
বাদর তুই!
ছিঃ ছিঃ নিজের বড় বোনকে কেউ বাদর ডাকে!
ফাজলামি রাখ। তোকে এতবার কল দিয়েছি কল ধরিস না কেন?
কল রিসিভ করার আগেই তার জীবন ফুরিয়ে যায়।
একবার তো কল ব্যাক করতে পারিস।
আমার ফোনে টাকা নাই।
কিসের ফোনে টাকা নাই। বাপের এত টাকা কই যায়?
সেটা বাপ ভালো বলতে পারবে।
যাই হোক, তোকে আমার খুব দরকার। আজ একবার বাসায় আয়।
এখন?
পারলে এখনই আয়। বাসায় বলবি আজ দুপুরে তুই এই বাসায় খাবি।
আচ্ছা ঠিক আছে। রাখি।

মায়ের ঝাজালো বজ্রপাত থেকে এত তাড়াতাড়ি মুক্তি পাব তা আশা করি নি। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বসার ঘরে গেলাম জুতা জোড়ো খুজতে। একটা কঠিন কন্ঠ হঠাৎ বলে উঠল,

কোথায় যাচ্ছিস?

দেখলাম মা রান্নাঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে, হাতে একটা ছুরি, দেখতে অবিকল প্রফেশনাল খুনির মত লাগছে। খুনির মত লাগছে কারন তার চোখ দুটো রাগে জ্বলছে। দেখে মনে হচ্ছে যে কোন মুহূর্তে ঝাপিয়ে পড়বে। আমি হাসি মুখ নিয়ে বললাম,

ছোট খালার বাসায়।
হঠাৎ ঐ বাসায় কেন যাবি?
কি জানি, তোমার বোন হঠাৎ দুপুরে খাওয়াবে বলে পন করেছে।
কাল রাতে জানাতে পারল না। আমি তোর জন্য দুপুরের ভাত মাত্র চড়িয়ে দিয়েছি। এখন এই ভাত কে খাবে? রোজা রেখে আমার এত কষ্ট করতে আর ভাল লাগে না। বাসায় সারাদিন বসে না থেকে একটু তো সংসারের কাজ করতে পারিস। বলি এই বাসায় কি শুধু আমি একা বাস করি.

[This is the first time I dared to write a Bangla short story and abandoned it after a while. The concept of this story was pretty dark and I realized, I am not ready to write something like this. So yeah, Let me know how it was but I don't know if I ever manage to finish the story.]

[Image source: Source ]

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Logo
Center