অসুস্থ ঢাকা শহর!!!


received_378511217606979.jpeg


জীবন চলমান।জীবিকা নির্বাহের জন্য আমরা প্রতি মুহুর্তেই শুধু ছুটেই চলেছি।আর এই প্রবাহ মান জীবন আমাদের ছন্দপতন করে,প্রতিবারই আমাদেরকে জীবনের কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি করে।তার আগ পর্যন্ত আমরা ভুলেই যাই যে জীবন যদি সংকটে থাকে,তখন এত উপার্জনের কোন কিছুই কাজে আসে না।তাই বাস্তবতা আমাদের কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করে।


নগরায়ণ আধুনিক জীবনের বৈশিষ্ট্য। সবাই একের পর এক ইমারত গড়েই চলেছে।ঢাকা শহর অনেক আগেই তার ভারসাম্যতা হারিয়েছে। তা সবার বোধগম্য হয় কিন্তু বাড়তি উপার্জনের জন্য সেই বোধদয় আর হয় না।একের পর এক সবাই গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে জড়ো হচ্ছে।আর এই অধিক মানুষের জন্য এখন পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানিরই যে বড্ড অভাব।আজ থেকে বিশ-ত্রিশ বছর আগে চিকিৎসা সবার কাছে অপ্রতুল থাকার জন্য হয়তো ডায়রিয়া জনিত কারণে শিশু মৃত্যু হতো।কিন্তু এখন সভ্যতার চরম উন্নয়নে থাকা সত্ত্বেও আমাদের শিশুদের ডায়রিয়া জনিত মৃত্যু হার আবারও বেড়ে গেছে।তার মূল কারণ হলো অপরিষ্কার বা অবিশুদ্ধ পানি।দিন দিন শহরের পানির রং কালো হয়ে যাচ্ছে।তা প্রধান কারণ হিসেবে ধরতে পারি নদীর পানি দূষণ। নদীপথে যাত্রাকালীন সময়ে এই দৃশ্য বেশী দেখা যায়।শহরের যত বজ্য বা কল-কারখানার দূষিত ময়লা সব একাধারে নদীতে ফেলছে।ফলে পানি জীবানু মুক্ত ও বিশুদ্ধ করা দিন দিন চ্যালেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।আর ফলাফল হিসেবে পাচ্ছি ডায়রিয়াকে মহামারী হিসেবে।বিষয়টা খুব নরমভাবেই নিবে অনেকে। যার ফলাফলে শিশু মৃত্যু হার বেড়ে গেছে।উপরের এত কথার মুল কথা হলো,আমি নিজেই এর ভুক্তভোগী।


ঢাকায় বসবাস সেই ছোট্টবেলা থেকে।ইদানিং পানি দেখে খুব বিরক্তই লাগতো।মাঝে মাঝে তো আবার গন্ধও আসে। ওয়াসা বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছিলো না।পানি খেতেও খুব অসুবিধা হতো।এমন সময়ে আপুর আগমন। সাথে তার একটা ছোট্ট ছানা।হাসি আনন্দের মাঝেই আপুর ছেলে হঠাৎ করে বমি করলো।প্রথমে আমরা সবাই ভাবলাম গরমের মধ্যে যাতায়াত সাথে ভারী খাবারে জন্য হয়তো এমনটা হচ্ছে।রাত বাড়ার সাথে সাথে পরিস্থিতি একটু একটু করে পরিবর্তন হতে লাগলো।প্রথমে শরীর গরম জ্বর আসলো সাথে পেটও নরম হলো।নাপা আর সাপোজিটার দিয়ে জ্বর কমাতে হলো।রাত যখন একটা তখন পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে গেল, প্রচন্ড জ্বর সাথে পাতলা পায়খানা। সাপোজিটারেও জ্বর নামানো যাচ্ছিলো না।হঠাৎ করেই খেয়াল করলাম কাপুনি দিচ্ছে।আমি শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে মনে হলো বাবু মনে দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে।তারপর যেটা হলো তা মনে পড়লেও এখনো শীতল ঘাম গা বেয়ে নেমে যায়।বাচ্চাদের জন্য যেটা সবচেয়ে খারাপ, খিচুনি।ডাক্তারদের ভাষ্য মতে পাঁচ বছরের বাচ্চাদের খিচুনি থেকে যত দূরে রাখা যাবে ততই ভালো।কেননা টানা পনের মিনিট খিচুনিতে তাদের ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট অনেক রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়।যাই হোক আল্লাহর অশেষ রহমতে মা তাড়াতাড়ি এসে একটা গামছা ভিজিয়ে এনে বাবুর মাথা থেকে পা পর্যন্ত মুছিয়ে দেয়ায় জ্বর সাথে সাথে কিছুটা নেমে যায় সাথে খিচুনিটা বন্ধ হয়।আসলে ক্রাইসিস টাইমে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার মানুষ কাছে লাগে।কারণ আমার বা আপুর এটাই মাথা থেকে বের হয়ে গেছিলো যে শরীর মুছিয়ে দিলে সাথে শরীরে তাপমাত্রা কিছুটা কমে।তবে তারপর আর দেরী না করে সেই সময়ে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো।


কিছুটা অবাক হলেও এটাই সত্যি যে হসপিটালের বেশির ভাগই ডায়রিয়ার রোগী।সেখানে বসে থাকতে থাকতে আরো দুইজন বাচ্চা একি রকম কন্ডিশনে হসপিটালের জরুরী বিভাগে গেলো।

কি করছি আমরা?আর কি বা চাই আমরা?একটা বাচ্চার জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে পারছি না সেখানে বড় বড় উন্নয়ন দিয়ে কি হবে??সব শিশু যেন নিরাপদে থাকতে পারে এটাই শুধু একমাত্র কাম্য।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now