নীল সাগরে রঙিন স্মৃতি...

img_0.296374803723755.jpg

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সুন্দর স্থানের তালিকা যদি করা হয়, তাহলে সেন্টমার্টিন্স প্রথম দিকের সারিতে থাকবে। তবে যাদের কাছে সমুদ্র বেশি প্রিয়, তাদের তালিকায় সেন্টমার্টিন্স অবশ্যই সবার প্রথমে থাকবে। বাংলাদেশে বেশ কিছু সমুদ্র সৈকত আছে। যেমন কক্সবাজার, কুয়াকাটা, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আর সেন্টমার্টিন্স আইল্যান্ড। উপরের সবগুলোর মাঝে যদি সবচেয়ে সুন্দর সি বিচের তালিকা করতে বলা হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে সেন্টমার্টিন্স আইল্যান্ডের নাম শুরুতেই থাকবে।

উপরে উল্লেখ করা সবগুলো সি বিচেই আমি গিয়েছি। কিন্তু সেন্টমার্টিন্স ছাড়া অন্য কোথাও এতটা উপভোগ করতে পারি নি। ব্যাক্তিগত ভাবে আমার অবশ্য সমুদ্রের প্রতি খুব বেশি একটা টান নেই। আমার সমস্ত আগ্রহ আর ভালবাসা পাহাড়ের গায়ে মিশে আছে। বিয়ের পরের প্রথম মধুচন্দ্রিমাটা আমি তাই বান্দরবানে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ও অন্যদের অনাগ্রহের কারণে সেই পরিকল্পনা ব্যার্থ হয়। তাই শেষ পর্যন্ত সকলের পরিকল্পনা মোতাবেক হুট করেই আমরা সবাই ১৪ই মার্চ সেন্টমার্টিন্স এর উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম।

আমাদের যাত্রার আদ্যোপান্ত ইতিমধ্যেই আমার আগের দুই লেখায় সকলের সাথে শেয়ার করেছিলাম। তাই সেই পুরানো ইতিহাসে আর ফিরে যাচ্ছি না। আজকে বরং সেন্টমার্টিন্স এ আমাদের দুই দিনের মধুচন্দ্রিমার স্মৃতিগুলো লেখার চেষ্টা করছি।

img_0.5298550586686009.jpg

সেন্টমার্টিন্স এ আমরা পৌছি ১৫ তারিখ দুপুরের দিকে। আগের দিন থেকে টানা ভ্রমনের মাঝে থাকায় আমরা সবাই কম বেশি ক্লান্ত ছিলাম। সেই গল্প তো আগেই করেছি। তবে পরের দিন অর্থাৎ ১৬ তারিখ আমরা সবাই ফুরফুরে একটা অনুভূতির অনুভব করতে পারছিলাম। এই দিনটা বেশ ভাল ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে সমুদ্রে সূর্যোদয় দেখেই মূলত আগের দিনের সমস্ত ক্লান্তিভাব হারিয়ে গিয়েছিল। নীল সমুদ্রের অন্য প্রান্তে একটু একটু করে লাল টকটকে সূর্যটাকে আকাশে ধীরে ধীরে উঠতে দেখার মাঝে কাব্যিক একটা ব্যাপার আছে। এত সুন্দর দৃশ্য চোখের দেখায় দেখতে পাওয়াটা সত্যিই অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।

সূর্যোদয় দেখা শেষে সকালের নাস্তা সেরে আমরা সবাই ছেড়াদ্বীপের উদ্দেশ্যে লাইফবোটে করে রওয়ানা দিয়েছিলাম। আগের বার অবশ্য সাইকেলে চড়েই ছেড়াদ্বীপ গিয়েছিলাম। তবে এবার আমাদের দুইজন সঙ্গী সাইকেল চালাতে না পারার কারণে সাইকেলের চিন্তা বাদ দিয়ে বোটে চড়েই ছেড়াদ্বীপে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

img_0.6557538330252519.jpg

ছেড়াদ্বীপ হল বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশের সর্বশেষ ভূখন্ড। এর আর কোনো ভূখন্ড নেই বাংলাদেশের। সমুদ্রের বুকে জেগে উঠা খুব ছোট একটা চর। যেখানে মানুষের কোনো বসবাস নেই। মানুষ বলতে শুধু ট্যুরিষ্টদের আনাগোনা থাকে, তাও শুধুমাত্র ট্যুরের সিজনে। অফ সিজনে পুরো জায়গাটা তো ফাঁকা পড়ে থাকে।

সেন্টমার্টিন্স থেকে ছেড়াদ্বীপ যেতে খুব বেশি একটা সময় লাগে না। অল্প কিছুক্ষনের মাঝেই ছেড়াদ্বীপ পৌছে গেলাম আমরা। বোট থেকে নামার সময় অবশ্য আমাদের মাঝি আমাদের দুই ঘন্টার সময় বেঁধে দিয়েছিল। দুই ঘন্টার মাঝে ছেড়াদ্বীপ থেকে ঘুরে চলে না আসলে আমাদের ফেলেই সে চলে যাবে। এরকম হুমকি শুনলে ভয় তো পাওয়ারই কথা, তাই না? আমরাও খুব সুন্দর করে তার সেই হুমকি মেনে নিয়ে ২ ঘন্টার মাঝে ঘুরে ফিরে চলে আসার শর্ত মেনে নিয়ে বোট থেকে নেমে গেলাম।

ছেড়াদ্বীপের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সম্ভবত এর চারপাশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব প্রবাল পাথর। এসব পাথর কিন্তু একদিনে এমনি এমনি সৃষ্টি হয় নি। লাখ লাখ বছর ধরে একটু একটু করে এসব প্রবাল পাথরগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। তবে এগুলো দেখতে যতই সুন্দর হোক না কেন, প্রচন্ড ধার। খালি পায়ে হাঁটার সময় একটু এদিক সেদিক হলেই পা কেঁটে রক্তপাত পর্যন্ত হতে পারে। এর আগের বার যখন ছেড়াদ্বীপে এসেছিলাম, তখনা আমার এক বন্ধুর পা কেটে গিয়েছিল। আর এই কাটা পা নিয়ে আমরা সবাই বেশ কিছু ঝামেলায়ও পড়েছিলাম।

img_0.9929221172361344.jpg

যায় হোক, ছেড়াদ্বীপে ঘন্টাখানেক ঘুরাঘুরি করে দুপুরের দিকে আমরা সবাই সেন্টমার্টিন্স ফিরে গিয়ে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে নিলাম। খাবারের মেন্যুতে সলোমন ফিশ ছিল। আগের দিন অবশ্য কোরাল মাছ দিয়ে লাঞ্চ করেছিলাম। তো কোরাল আর সলোমনের মাঝে কম্প্যায়ার করলে আমার কাছে কোরাল মাছটাকেই বেশি সুস্বাদু মনে হয়েছে। তবে স্বাদের পার্থক্যটা রান্নার তারতম্যের কারণেও হতে পারে।

তবে কোরালের স্বাদ বেশ ভাল মনে হওয়ায় রাতের বেলা কোরাল মাছের বারবিকিউর আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল, তার খাওয়ার পরেই বুঝতে পেরেছিলাম। স্বাদ মোটেও ভাল হয় নি। আর কেউ খেতেও পারে নি মজা করে। আমি অবশ্য পয়সা উসুল করার জন্য চোখ বন্ধ করে যতটুকু পারি খেয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু সত্যি বলতে কি, আমার কাছেও বারবিকিউটা মোটেও ভাল লাগে নি।

img_0.3517376895958063.jpg

যায় হোক, দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা বিচে চলে গিয়েছিলাম গোসল করতে। আগের দিন সেন্টমার্টিন্স আসলেও তার পরের দিন আমরা প্রথম নীল সাগরের পানিতে নেমেছিলাম, তাও আবার দুইজনেই লাল রঙের জামা পরে। এটা নিয়ে অবশ্য অন্যরা আমাদের খেপানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা এসব একটুও পাত্তা দিই নি। বরং নীল সাগরে লাল আমরা নিজের মনমতো করে ঠিকই মজা করে বেড়িয়েছিলাম।

জীবনে প্রথমবারের মতো সাগরে নেমেছিলাম ২০১৬ সালের দিকে, তাও বন্ধুদের সাথে। এরপর অনেকবার সাগরে গিয়েছি, কিন্তু প্রথমবারের মতো মজা, আনন্দ আর কখনো পাই নি। তবে এবারের বিষয়টা কিছুটা ভিন্ন। খুব সম্ভবত প্রথমবারের চেয়েও ভাল অনুভূতি কাজ করছিল এবার।

img_0.5785970292292054.jpg

সাগরের পানিতে অবশ্য বেশিক্ষণ থাকা হয় নি। কিছুক্ষণ পরেই চোখ জ্বলতে শুরু করেছিল। আমরা সবাই জানি সাগরের পানি লবনাক্ত। এজন্যই মূলত এমন হচ্ছিল। তার উপর আবার ঠান্ডাও লাগছিল। তাই ঘন্টা খানেক পরেই আমরা উঠে হোটেল রুমে ফিরে চলে গিয়েছিলাম। এর হোটেলে আবার গোসল করে রেস্ট নিয়ে হালকা নাস্তা করে সন্ধ্যার দিকে বিচে গিয়েছিলাম পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় কিছুটা ভাল সময় কাটানোর জন্য।

বিচের পাশে খোলা আকাশের নিচে পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় বসে থাকতে খারাপ লাগছিল না। পাশাপাশি সাগরের ঢেউ এর গর্জন তো ছিলই। সব মিলিয়ে অসাধারন সুন্দর সময়। এরকম মুহুর্তের বর্ননা লেখার মাধ্যমে তুলে ধরা আমার পক্ষে সম্ভব না। তবে বিভূতিভূষণ বা সমরেশ মজুমদারের মতো স্বনামধন্য লেখকেরা হয়তো ঠিকই তাদের লেখায় এত সুন্দর দৃশ্যটা ফুটিয়ে তুলতে পারতেন।

img_0.9507658007642166.jpg

যাত হোক, বিচ থেকে ফিরে গিয়ে রাতে যে বারবিকিউ পার্টি করেছিলাম, সে গল্প তো উপরে বলেছি। খাওয়া দাওয়ার পর অবশ্য আবারও বিচে গিয়েছিলাম। রাত প্রায় ১ টা পর্যন্ত বিচে থেকে পরে হোটেল রুমে চলে যাই। পরদিন সকালে আমরা কক্সবাজার ফিরে আসার প্ল্যান করেছিলাম। যদিও আমাদের শিপের টাইম ছিল দুপুরের দিকে। তাই টিকেট ক্যান্সেল করে সকালেই স্পিড বোট করে সাগর পাড়ি দিয়ে টেকনাফ পৌছাই। সেই গল্পটা আমার পরের লেখায় করবো।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Logo
Center