"প্রকৃত ভালবাসা"

**** সকাল বেলা ৷ আমেনা বেগম নাস্তা তৈরি করতে ব্যস্ত ৷ হঠাৎ নাসির উচ্চ স্বরে চিৎকার শুরু করে দিল । মা,মা কোথায় তুমি ৷ আমেনা বেগম দ্রুত রান্না ঘর থেকে ছুটে এসে বলল কি হয়েছে ৷ তোমাকে না বলেছিলাম পাঁচ হাজার টাকা লাগবে ৷ সেদিন না তিন হাজার টাকা নিলি ৷ তুমি জান না পড়াশুনা করাতে টাকা লাগে ৷ আজকে কোচিং সেন্টারে ফি জমা দিতে হবে ৷ চিৎকার করিস না ৷ তোর বাবা অসুস্থ্য এই নে টাকা,দুই হাজার টাকা এটা দিয়ে কি হবে ৷ স্যার কে বলিস বাকি টাকা পরে দিয়ে দেব ।

বাসা থেকে একটু খুশি,খুশি মনে বের হল নাসির ৷ বাড়ি থেকে দুই হাজার টাকা পাওয়া গেছে ৷ তার কাছে দেড় হাজার আছে ৷ আজ ভালবাসা দিবস আমার একটা ভাল দেখে গিফট কিনতে হবে ৷ আজ তাদের দুজন এক সাথে দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা ৷

frank-mckenna-A9kYGeJkMZE-unsplash.jpg

অনেক সময় ধরে অনিমার জন্য অপেক্ষা করছে নাসির ৷ অবশেষে অনিমা এল,

নাসির : এত দেরি ?

অনিমা : এত প্রশ্ন কর কেন, কত কিছু ম্যানেজ করে বের হতে হয় জান ৷

নাসির : ঠিক আছে বস ৷

অনিমা : এই রৌদের মধ্যে এখানে বসে থেকে কি করব ৷ তাছাড়া,আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে ৷ চল রেস্টুরেন্টে যাই ।

নাসির : চলল যায় ৷

তারা দুজন পাশের একটা রেস্ট নাসির আর অনিমা পাশাপাশি বসে আছে ৷ এক সময় নাসির বলল,

নাসির: অনিমা তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি ৷ আমার হ্নদয় এর ভালবাসা থেকে তোমার জন্য ছোট্ট উপহার ।

অনিমা : এটা কি এনেছো ৷

নাসির : কেনো কি হয়েছে ।

অনিমা : আজকে একটা বিশেষ দিন ৷ তুমি আমাকে একটা ফুল গিফট দিবা না ৷ নিয়ে এনেছে একটা পারর্ফিউম তা ও আবার নো ব্যান্ডের ৷ আর কি একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছ । এই রকম ছোট মনের মানোসিকতা নিয়ে চললে তোমার সাথে রিলেশন রাখা সম্ভব না ৷

এই বলে অনিমা রেগেমেঘে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে রিক্সায় উঠে চলে গেল। আমার কোন আকুতি-মিনতি ও ৩ বছরের ভালবাসা তার মনে কোন প্রকার প্রভাব ফেলল না ।

নাসির ও রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে মন খারাপ করে রাস্তা দিয়ে হাটছে তার কিছু ভালো লাগছে না ৷ বাসা থেকে বারবার মা ফোন দিচ্ছে ৷ ফোন রিসিভ করছে না নাসির ৷ দুপুর গড়িয়ে আস্তে আস্তে বিকেল হতে চলেছে। বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না ৷ এমন সময় একটা লোক এসে তার সামনে এসে বলল, বাবা দুই দিন যাবৎ কিছু খাই নি ৷ কিছু খেতে দিবা । নাসির ভাবলো বন্ধু বান্ধবের পিছনে তো অনেক টাকা খরচ করলাম। আজ এই চাচা কে একবেলা ভাত খাওয়াই ৷

Screenshot_6.png

তারপর আমি আর চাচা দুজন পাশের ছোট একটা ভাত ঘরে ঢুকলাম । হোটেলের মেসিয়ারকে ডেকে বললাম,চাচাকে ভাত দাও তরকারী কি আছে। মেসিয়ার বলল,বিকেল হয়ে গেছে খাবার ও শেষ তেমন কিছু নাই। ভাজি ভর্তা ও ডাল আছে। তখন চাচা বলেন তাতেই চলবে। মেসিয়ার চাচাকে ভাত দিল। চাচা ক্ষুধার্ত ছিল তাই তারাতারি করে ভাত খাচ্ছে আর আমার দিকে তাকিয়ে মৃদূ মৃদু হাসছে তার হাসিতে আমি যেন দুদু মরুভুমিতে স্বল্প পানি পাওয়ার মত শীতলতা অনুভব করলাম। চাচার ভাত খাওয়া শেষ ভাতের বিল হল ৩০ টাকা। হোটেলের বিল পরিশোধ করে চাচাকে বলাম আর কিছু লাগবে কিনা চাচা বলল না। তারপর চাচা আমাকে প্রাণভরে দোয়া করে দিয়ে চলে গেল।

তারপর,নাসির রাস্তা দিয়ে হাটছে আর ভাবছে যাকে এত ভালোবাসলাম। যার জন্য মিথ্যা কথা বলে, বাসা থেকে টাকা নিয়ে দামি দামি গিফট দিলাম। তবু তার মুখে হাসি ফোটাতে পারলাম না ৷ আর এই লোকটাকে ভর্তা ভাজি দিয়ে ভাত খাওয়ালাম। তাতেই সে আমার জন্য এত দোয়া করল। আজ বুঝলাম প্রকৃত ভালোবাসা কোনটা।.................****

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Logo
Center