জোয়ার কথাটার সাথে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত।নদী-নালা,খাল-বিল অথবা সমুদ্রে যখন পানি বৃদ্ধি পায় তখন বলা হয়,, পানির জোয়ার এসেছে।এটা সাধারণত গ্রামীন মানুষেরা বেশি বলে থাকে।নদীতে একটা সময় পানি বেশি থাকে আবার একটা সময় পানি কম থাকে।এখন বর্ষা মৌসুম তাই সকল ধরনের নদী-নালা, খাল-বিল সহ সব ধরনের ডোবায়ও পানি পাওয়া যাবে।আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে একটা নদী বয়ে গেছে।নদীটার নাম "গড়াই নদী"। এখন নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।এই নদীতে যেহেতু কোনো সেতু নাই,তাই মানুষকে নৌকায় নদী পার হতে হয়।আর নৌকায় উঠার জন্য দেওয়া হয় চড়াট।যেটা বাশঁ দিয়ে তৈরি করা হয়।আপনারা হয়ত অনেকেই নদীতে নৌকায় চড়ে থাকবেন,কিন্তু আমি প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিন বার নৌকায় পারাপার হয়।এখন আমার নৌকায় পার হতে আর ভালো লাগে না।
কিছু দিন হলো নদীতে প্রচুর পরিমাণে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।যার কারণে নৌকায় উঠার চড়াট বিভিন্ন জায়গায় সরাতে হচ্ছে।আর এই চড়াট সরানোর কাজটা খুব কষ্টের।একটা চড়াট এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে প্রায় এক ঘন্টা লেগে যায়।নৌকার মাঝিরা এই কাজ করে থাকেন।গত পরশুদিন আমি পড়তে যাওয়ার সময় দেখলাম।নদীতে পানি বাড়ার কারণে চড়াট সরানো হচ্ছে।কয়েকজন লোক একসাথে মিলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।এখন প্রতিদিন নদীতে জোয়ারের পানি বাড়বে।আর প্রতিদিন মাঝিদের কষ্ট করে চড়াট সরাতে হবে।আবার যখন নদীর পানি কমতে শুরু করবে। তখন আবার এই একই রকম কষ্ট করে চড়াট সরাতে হবে।নৌকায় কাজ করা মানুষগুলো এত কষ্ট করে বলেই আমরা সাধারণ মানুষ আরামে নদী পার হতে পারি।
শুধু যে নদীতে জোয়ার আসে বলেই নদী তার গতি পথ বদলায় তা কিন্তু নয়।আমাদের জীবনেও কিছু সময় নদীর মতো এমন জোয়ার এসে থাকে। যার কারণে বদলাতে থাকে আমাদের জীবনের গতিপথ। পাল্টে যায় আমাদের ভাবনা চিন্তা।আমরা যখন যৌবনে পা দিই, তখন আমাদের জীবনে যৌবনের জোয়ার আসে। যার কারণে আমরা যৌবনের জোয়ারে বিভিন্ন খারাপ কাজে লিপ্ত হয়।যাতে বরবাদ হয়ে যা আমাদের জীবন।যারা নিজের যৌবনের জোয়ারটাকে ধরে রাখতে পারে তারা জীবনে সফল হতে পারে।আর যারা তাদের যৌবনটাকে নিয়ে সব ধরনের খারাপ কাজে লিপ্ত থাকে তাদের জন্য ভবিষ্যৎে অন্ধার রয়েছে।নদী যেমন জোয়ারের পানিতে নদীর এক কুল ভাঙে তো অন্য কুল গড়ে।ঠিক তেমনই আমাদের জীবনের জোয়ারও আমাদের একদিকে ভালো করে তো অন্য দিকে মন্দ।আসলে মানুষের সব সময় শক্তি সমান থাকে না। নদীতে যেমন সব সময় জোয়ারের পানি থাকে না।একসময় সেই পানি কমে যায়।সে রকমই আমাদের সব ধরনের শক্তি, জোর-জুলুম, দাপট ও কমে যাবে।
নদীতে যখন পানি ভোরে থাকে চারিদিকে পানি থৈ থৈ করে তখন নদীর চেহারা দেখতে খুব ভালো লাগে।তেমন মানুষ যখন যৌবনে পা দেয় তখন তার সব কিছুই ভালো হয়।কিন্তু সেই সব ভালো দিকগুলো ধরে রাখতে হবে যাতে,, যৌবনের তাড়নায় সেগুলো নষ্ট না হয়ে যায়।নদীতে জোয়ারের পানি ধরে রাখা যেমন কঠিন কাজ, তেমনই বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিজের যৌবনটাকে বাঁচিয়ে রাখাটাও তার থেকে কঠিন কাজ।আপনে নিজে বাঁচাতে চাইলেও, আমাদের সমাজ তাতে বিভিন্ন ভাবে বাধা দান করবে।নদীতে যখন পানি শুকিয়ে যায়। তখন মনে হয় যেন নদীটা মরে গেছে।কেউ যেন তার কাছ থেকে তার সব ধরনের সুন্দর্য কেরে নিয়েছে।ঠিক তেমনই আমাদের যৌবন যখন চলে যাবে, তখন আমাদেরকে পানি হীন মরা নদীর মতো লাগবে।
নদীতে যখন জোয়ার আসে তখন সব দিকের পানি একসাতে মিশে যায়।ধুয়ে যায় নদীতে থাকা সকল ধরনের বর্জ।পরিষ্কার হয় নদীর দুইধার।আমাদেরও উচিত যৌবনের সময় আমাদের নিজের জীবনটাকে নদীর মতো পরিষ্কার করে ফেলা।যাতে ভবিষ্যৎে আর তাতে বর্জ জমতে না পারে।মানুষের জীবনটাকে সুন্দর সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য দরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া, যেটা আমরা আমাদের যৌবন কালে নিতে পারি না।তখন আমাদের দেহের রক্ত গরম থাকে, যার কারণে আমরা মনে করি সব ধরনের কাজই আমাদের দ্বারা করা সম্ভব।আমি যেটা ভাবছি সেটাই ঠিক। অন্যরা কি ভাবলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।আমাদের এই ভাবনাগুলোর কারণে আজ আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।জোয়ারের পানি যেমন একটা সময় চলে যায়, ঠিক তেমনই আমাদের জীবনের লক্ষ্যগুলোও ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে শেষ হয়ে যায়।