আহাদের আর্তনাদ

cd5b08815b8b1656ffd6d7a8abec8995.jpg
found here

আমার ডাক নাম আহাদ, আমি অন্যান্যদের তুলনায় খানিকটা ভিন্ন।জন্মের পর থেকেই কোনো শব্দের সাথে পরিচিতি ছিলো নাহ আমার, মা বাবার অক্লান্ত চেষ্টায় ভাষার সাথে পরিচিতো হয়েছি সাথে কিছু বাংলা সাহিত্যের বই যা আমার মনের খোরাক পূরণ করে।বধিরতাকে সংগে নিয়েই আমার জীবন, নিয়তিকে আপন করে নিয়ে বাচঁতে শিখছি। মাঝে মাঝে পা পিছলে যায়, পরে গিয়ে আবার দাঁড়াই।

আমি যেখানটায় বড় হয়েছি , অনেকটা নির্মল পরিবেশ। শ্বাস নেবার জন্য কখনো অক্সিজেন ঋন নিতে হয় নি আমার। প্রকৃতির প্রত্যেকটি রূপের সাথে আমি পরিচিতো, মানুষের সাথে আমার ভাব বিনিময়ে সমস্যা হলেও প্রকৃতির সাথে ভাব আমার ভালোই জমে। আমার বাড়ির সামনের নারিকেল গাছ টার ছায়া সময়ের হিসেবে কতটুকু শীতল হয় তা আমার মুখস্থ।

মাঝে মাঝে খেয়াল করি, প্রকৃতি আর মানুষের মাঝে বিস্তর তফাৎ। প্রকৃতি অনেক শান্ত , অনেক ধৈর্য্য তার প্রত্যেকটি স্তরে। বাতাসের হিসেবে দোল খায় প্রত্যেকটি গাছের পাতা, সব কিছু মিলিয়ে কি দারূন সাম্যাবস্তা।মানুষ বাদে সব উপাদানগুলোই কতো শান্ত, গোছানো।প্রত্যেকটি উপাদানই মানুষের চাইতে বেশি ইফিসিয়েন্ট।তারা তাদের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর সাথে সাথে বেচেঁও থাকে, আবার একই সাথে তাদের বংশধর রেখে যায়।

ইদানীং কালে প্রকৃতির সাথে আমার বনিবনা হচ্ছে নাহ।আমার আর তার সংসারে আমি তাকে চিনছি নাহ একদমই। আগে সকালের রোদটা ছিলো এতো মিষ্টি যে আমি তা খেয়ে শান্তির ঢেকুর তুলতাম কিন্তু এখন দেখি তা কড়া লিকারের রংচায়ের মতন। মনে হয় বেশিক্ষন থাকলে চামড়া ছেদ করে রক্তে ঢুকে যাবে।মানুষের সাথে সাথে সে ও অনেক অশান্ত হয়ে গেছে, তার বৃষ্টিকে এখন আর আমি চিনি নাহ, খুবই অনিয়মিতো। শরৎ এর মেঘ আমি হন্নে হয়ে খুজিঁ আকাশের এপার থেকে ওপারে।পাই নাহ,কষ্ট হয়। আমি বোবা কাউকে বলতে পারি নাহ, শুধু চেয়ে থাকি, ছাদের রেলিং ধরে পথ খুজিঁ।

নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় ইদানীং, বাতাসে ধুলার পরিমান এতো যে আমার চশমা বার বার মুচতে হয়।আর হাচিঁ কাশি তো লেগেই থাকে ।বাসায় দেখলাম হিউমিডিফায়ার আনা হয়েছে বাতাসের আদ্রতা ঠিক রাখার জন্য।এসব দেখে কষ্ট হয় এই জন্য যে, হায়রে! এইসব চেষ্টা যে এন্ট্রপিকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তা কি আমারা একবারো দেখছি।জানিনা , জানতে ইচ্ছা হয় না!আমি বোবা আমার কোনো কথা নেই আমার শুধু হাহাকার।

করোনা বা কভিড-১৯ পরিবেশিক ব্যাস্তবতাকে খুব ভালো ভাবে ধরিয়ে দিয়েছে। বাইরে বেরোলেই হরেক রকমের মাস্ক দেখি, সেই মাস্কেরো আবার প্রকারভেদ বিস্তর।হ্যান্ড সেনিটাইজারের প্লাস্টিকের সাদা বোতলে, মানুষ দুষিত করছে পরিবেশ।মানুষ খুবই স্বার্থপর শুধু নিজেরটা বোঝে।সোসিয়ালিজম , ক্যাপিটালিজম শুধু মানুষের জন্যই অন্য কনো প্রানের কথা এখানে স্থান পায় নাহ।স্থান পাবেই বা কি করে এই সমগ্রিক ইকোসিস্টেমের মধ্যে তারা ভাবে, তারাই একমাত্র প্রাণি।কিন্তু ইকোসিস্টেমের স্বাভাবিক সুত্র অনুযায়ী,কোনো প্রানী যদি সংখ্যায় অধিক বেড়ে যায় বা অধিক শক্তি আহোরন করে, তবে তা একসময় পুরো ইকোসিস্টেম ধ্বংসের কারন হয়ে দাঁড়ায় ।সেই হিসেবে আমরা হয়তোবা শেষের দিকে এগুচ্ছি। ভাবতেই অবাক লাগে, এতো বুদ্ধিমান প্রাণি একসময় পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিন্ন হয়ে যাবে।আমি আর কি বলবো, আমি তো বোবা!!!

প্রাচীনকালে রাজপুত নামের এক রাজবংশ ছিলো, এখনো তাদের বংশধরেরা জীবিত আছে, ভারতের রাজস্থানে তাদের বসবাস।পূর্বে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যদি তাদের যোদ্ধারা হেরে যেতো, তবে তাদের স্ত্রী, সাথে তাদের সন্তানাদিসহ, জলন্ত চিতায় আত্নাহুতি দিতো।তা সম্মান রাক্ষার জন্যই হোক বা আত্নমর্যাদার জন্যই হোক। বোবা হয়েও আমার মনে হয় আমাদের সবার , এই পৃথিবীটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য হলেও সবার আত্নাহুতি দেওয়া উচিৎ। অথবা প্রকৃতির শক্তির সাথে শান্তি চুক্তি করা উচিৎ।তা হোক নিজদের সহনশীলতার মাত্রাকে বাড়িয়ে বা “বৃক্ষরোপনের” মতন কার্যাবলি উপহার দিয়ে।

signature.png

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now