A Tale Of A 1000 HIVE(মানুসিক দ্বন্দ্ব এবং বেঁচে থাকা)

গত একমাস জুড়ে কফির কাপ ভেঙ্গেছে তিনটা, তিনটাই বড়ো বোনের উপহার ছিলো।মাঝে মাঝে এমন হয়েছে, লেখায় ডুবে গেছি, কফির মগের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারি নি।মাঝে মাঝে, করোনার দিনের মধ্যবিত্তের উপোসের প্রতিবাদে, কাপটা একটু জোড়েই টেবিলে রাখা হয়েছে।এভাবেই গত একমাস জুড়ে ঘাত প্রতিঘাত আর রোদ বৃষ্টির সংঘর্ষে আমার ব্লগ একাউন্ট থেকে এক হাজারটি হাইব টোকেন যার বাজার মুল্য , বাইশ হাজার টাকা আমার অর্জন। আমার সম্মানি বল্লে হয়তো দাস হিসেবে নিজেকে একটু দূরে সরানো যাবে।

আপাতত বাইশ হাজার টাকা পকেটে নিয়ে ঘুরছি, গোল্ডলিফের পরিবর্তে বেনসন কিনতে ইচ্ছা হচ্ছে ! পরবর্তীতেই মনে হচ্ছে, এই তিন টাকার ব্যবধান শুধু টাকার অঙ্কে সমাধান করার কেনো চেস্টা করছি! আমি কি আমার সামাজিক এবং ব্যাক্তিগত অবস্থান সম্পর্কে সন্ধিহান! নিজেকে অস্বিকার করবার মধ্যে গৌরবের কিছু কি আছে?আজ যদি আমি আমাকে অস্বিকার করি, আগামীদিন পরিবার আর সমাজ আমাকে অস্বিকার করবে । আর যদি মেনে নেই তবে! তখন আমার সব প্রয়োজনীয়তা মেটানোর সাথে সাথে মনের পরিপূর্ণতা ও আসবে হয়তো।

এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম। আমি আমার সাথে সকল মধ্যবিত্তের মিল পাই, আমিও যেমন মাথা নিচু করে বিভিন্ন চিন্তা করতে করতে হাটিঁ অন্যরাও(মধ্যবিত্ত) দেখি তাই করে!
হাঁটতে হাঁটতে মিজান ভাইয়ের দোকান থেকে এক প্যাকেট গোল্ডলিফ কিনে , নতুন বউ এর ঘোমটা খোলার মতো করে সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট ধরালাম, আপাতত আমি ভোগে মত্ত। নিকোটিনের প্রত্যেকটা কনা নিউরনের সেলে ঢুকে যাচ্ছে আর বিশ্রি প্রশান্তিতে চোখের পলক উঠানামা করছে।

সিগারেটে টান দিয়ে সদ্য কেনা বড়োলোকের গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকি, খুব মজাপাই এই জিনিসটা করে আমি, মিথ্যা দৃষ্টিতে বুঝিয়ে দেবার চেষ্টায় থাকি যে, তোর তুলননায় আমি ভালো আছি, তোর অনেক কাজ সমাজ মেনে নিবে নাহ আর আমরা মধ্যবিত্ত তো পানি সব আচারনে, সব গুনে,গুনান্নিত।

আজ বন্ধুদের সাথে বিনা ভাবনায় আড্ডা দেওয়া যাবে,সিগারেটের তৃষ্ণায় জর্জিরিতো চিন্তা থাকবে নাহ, ফুরফুরে থাকবে মন ও আত্তা।আগেও দেখেছি আত্তা বাধা থাকলে ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগে নাহ! আর লাগলেও সেই বাতাস ভালো লাগে নাহ, বিরক্ত লাগে। মনে হয় আত্তার বাধা ধরার নিয়মের মধ্যে আর্থিক চিন্তা একটা বড় নিয়ামক এবং অন্যতম বললে হয়তো ভুল হবে নাহ।

তবে আমি খুব বিরক্ত মাথার চুল নিয়ে , চুল কাটাতে হবে, পথের বাঁক নিয়ে মিঠু ভাইয়ের দোকানে দিকে এগুচ্ছি , হঠাৎ মনে পড়লো গতো একমাস ধরেই আমি চুল কাটাবো কাটাবো করে কাটাচ্ছি নাহ , কারন মিঠু ভাই কিছু টাকা ধার চাইছে ! কথা প্রশঙ্গে বলে নেই বাংলাদেশে হিন্দুরা সংখ্যায় লঘিষ্ট এরা সমাজের যে স্তরের বসবাস করুক নাহ কেনো এদের নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে এরা খুবই সচেতন । কোনো প্রয়োজনে এরা একদম দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে কারো কাছে হাত পাতবে না।আমি কথা দিয়েছিলাম তার উপকারে আসবো সামর্থ্যে কুলালে!সেই চক্ষুলজ্জার জন্যই উনার দোকানের পথ মাড়াচ্ছিলাম নাহ এতোদিন।

কিন্তু আজ যখন সামর্থ্য হয়েছে তখন আবার আমি, আমার বিবেক , বাকবিতন্ডা বসিয়েছে গোল টেবিলে।
এবং তাদের দেনদরবারের সারমর্মঃ
"যে টাকাটা তোর আছে তা তোর ভবিষ্যতে তো দুরের কথা আগামী কিছুদিন পরই কাজে লাগবে"
"কিন্তু আমি যে কথা দিয়েছিলাম"
"করোনার দিনে কে কার কথা রাখছে"!
"কিন্তু আমার সত্তা, আমার আবেগ এদের কি হবে!"
"যা আর সবার হয় একটা সময় পর, তাই হবে"।
"কিন্তু আবেগ মরে গেলে আমি যে আর মানুষ থাকবো নাহ, আর মানুষ না থাকলে লিখবো কি করে"?
"যা মনে চায় তাই কর, তোকে নিয়ে আর পারি নাহ"।।

বাসার পথে পা বাড়াচ্ছি , আর এগারো হাজার টাকা পকেটে সাথে মিঠু ভাইয়ের কৃতজ্ঞতা সহ একটা প্রশান্তির হাসি।
বন্ধুদের আড্ডায় সিগারেট গুনে গুনে খাচ্ছি আবারো, বাসায় ফিরছি এই তারা নিয়ে যে লিখতে হবে আবারো।
লিখতে লিখতে ভাবছি বাকিটাকাটা দিয়ে কি করবো, করোনার জন্য কাউকে আমি ফান্ড দেবো না ,বাসায় চাল আনবো এক বস্তা ,একদিন পর পর এক কেজি করে চাল দেবো ফকিরকে ।

ওর জন্য একটা শাড়ি কেনার ইচ্ছা ছিলো , কালো শাড়ি।যা করোনার দিনে আমার কাছে বিলাসিতা নয়, প্রয়োজনীয়তা।

মা, বাবার জন্য কিছু টাকা আলাদা করে রেখে দিবো ভাবছি, আপাতত তাদের অভাব নাই খাওয়া পরার কিন্তু যদি হয় !
আর কিছুটাকা বাচবে হয়তো তা দিয়ে অনলাইন এডুকেশন বাজারে ডগ্রি কিনবো! কথা প্রসংগে বলে নেই, অনলাইন এডুকেশন বাজার বললাম কারন এই বাজারের মুল্যও ঊঠানামা করে বৈশ্বিক বাজারের সাথে ।হা হা হা ! আগে যে কোর্সগুলোর মূল্য চার থেকে পাঁচ হাজার ছিলো তা দুই হাজারে নেমে এসেছে!
তাই ভবছি এই নিজের ওপর বিনিয়োগটা জরুরি ভবিষ্যতের পেট ভাতের জন্য।

আম্মুকে বললাম কফি বানিয়ে দিতে , আর একটু কাজ বাকি। এভাবেই দিন চলে যাচ্ছে...।

signature.png

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Logo
Center