বিগত ৭,৮,৯ জানুয়ারি ২০২২ কুড়িগ্রাম জেলায় তাবলীগ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। আপনারা অনেকেই বিশ্ব ইজতেমার নাম শুনেছেন। বিশ্ব ইজতেমা হলো সৌদি আরবের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দের সমাবেশ। এই বিশ্ব ইজতেমা টি করে থাকে তাবলীগ জামাত। বাংলাদেশের প্রায় অনেক জেলায় ইজতেমা হয়ে থাকে। আমাদের কুড়িগ্রাম জেলায় তাবলীগ ইজতেমা হয়। তাবলীগ শব্দের অর্থ প্রচার। তাবলীগের বহুল প্রচলিত একটি শব্দ ইজতেমা। এসব তাবলীগ ইজতেমার প্রধান লক্ষ্য হলো, যাতে বেশি তাবলীগ জামাত বের হয়। যাতে ঘরে ঘরে আল্লাহর দাওয়াত পৌঁছে যায়।
সর্বপ্রথম তাবলীগ জামাতের কাজ শুরু করেন মাওলানা ইলিয়াস। তাবলীগ মূলত ৬টি মূলনীতি কে সামনে রেখে কাজ করে থাকে।
সেগুলো হলো,
১.কালেমা ২.নামাজ ৩.ইলম ও জিকির ৪.ইকরামুল মুসলিমীন ৫.সহিহ নিয়ত ৬.দাওয়াত ও তাবলীগ।
ইজতেমা প্রধানত তিন দিনব্যাপী হয়ে থাকে। ঢাকার কাকরাইল মসজিদ তাবলীগের প্রধান কেন্দ্র। সবচেয়ে বড় বিশ্ব ইজতেমা হয়ে থাকে টঙ্গীতে। এছাড়া বাংলাদেশের আরো অনেক স্থানে তাবলীগ ইজতেমা হয়ে থাকে।
আমি আখেরি মোনাজাত করতে ইজতেমায় গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি মানুষ আর মানুষ। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম এত মানুষ দেখে। মনে হয় প্রায় এক লক্ষ মানুষের মতো অধিক সেখানে এসেছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন দোকান-পাটও বসেছিল। আমাদের কুড়িগ্রামে ২ ধরনের ইজতেমা হয়ে থাকে। তাবলীগ ইজতেমা এবং চরমোনাই ইজতেমা। আমি ভাবতাম চরমোনাই ইস্তেমায় সবচেয়ে বেশি মানুষ হয়, কিন্তু না তাবলীগ ইজতেমা এগিয়ে দেখি অনেক মানুষ। তারপর আমি তাদের চারদিকটা ঘুরে দেখেছিলাম। আপনার আমার ছবিগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন।
এই ছবিটিতে আপনারা সেসময়ের বক্তা কে দেখতে পারবেন। আমার সব সময় প্রধান কে দেখার অনেক ইচ্ছা। যেমন কোন মসজিদে নামাজ পড়লে আমি সব সময় ইমামকে দেখার চেষ্টা করি। এটার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয় তাই আমি হুজুরকে দেখতে গিয়েছিলাম।
তারা তিন দিন ধরে এখানেই কাতারবদ্ধ হয়ে নামাজ পড়ে। এখানেই রান্না করে। এখানেই ঘুমায়। এখানেই খায়। এখানেই গোসল করে। তারা তিন দিন আল্লাহর পথে নিজেকে দিয়ে দেয়।
আমি সেদিন অনেক ছবি তুলেছিলাম যাতে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারি। এই ছবিটিতে দেখতে পাচ্ছেন এগুলো সব দোকানপাট এর ছবি। বলতে পারেন সেদিন মেলা বসেছিল । কি পাওয়া যাচ্ছিল না বলেন, সবকিছু ছিল সেখানে। শীতের জামা কাপড় থেকে শুরু করে, খাবার আইটেম, খেলনা, জুতা ,কম্বল ,টুপি ,পাঞ্জাবী ইত্যাদি ইত্যাদি। বলে শেষ করতে পারবো না এত জিনিস ছিল সেখানে। এত দোকানপাট।
আমি সেখানে তাদের সাথে সকালের খাবার খেয়েছিলাম। আমি সকালে যাওয়ায় সেখানেই তারা আমাকে খেতে বলেছিল। বুটের ডাল এবং ভাত। একই প্লেটে আমরা পাঁচজন খেয়েছিলাম। অনেক সুস্বাদু এবং রহমত সম্পন্ন ছিল। আমার খুবই ভাল লেগেছিল খাবারটি এবং পরিবেশটি। তাদের মধ্যে কোন ঘৃণা নেই, শত্রুতা নেই, হিংসা নেই ,তারা শুধু চায় আল্লাহর ভালোবাসা এবং রহমত।
এটা তাদের ওযুর স্থান এরকম চার জায়গায় ওযুর স্থান ছিল। আপনারা দেখলেই বুঝতে পারবেন,অসম্ভব সুন্দর সবকিছু।
এখন ফাঁকা জায়গা তেই তারা রান্না করতেছে। ইজতেমাটি মূলত ফাকা জমির মধ্যে করা হয়েছিল। ইজতেমা শীতকালে করা হয় কারণ এ সময়ে সকল জমি খালি থাকে। এরকম চারিদিকে রান্নার ব্যবস্থা ছিল। যেখানে জায়গা ছিল তারা স্টপ এবং গ্যাস ব্যবহার করে রান্না করেছিল।
এটা বাথরুম। এর পাশেই গোসলখানা এবং বাথরুম করা যায়। এরকম দুই পাশে করা হয়েছিল। যাতে মুসল্লিদের কোন সমস্যায় পড়তে না হয়।
এরপর আমি ভিতরে আমাদের রাজারহাটের অন্য মুসলিমদের সাথে বসেছিলাম। সেখানে কিছুক্ষণ ওয়াজ শুনলাম। এরপর দুপুর বারোটার সময় আখেরি মোনাজাত হলো। প্রায় 20 মিনিট মোনাজাত হয়েছিল। সবার জন্য দোয়া করা হয়েছিল। আল্লাহ আমাদের সবার নেক মনের আশা
পূরণ করুক।
এরপর আমাদের বিদায় নেওয়ার সময়। আমার সেখানে আরো অনেক সময় থাকতে মন চাচ্ছিল। কিন্তু কি আর করার আমি আখেরি মোনাজাতের সময় এসেছিলাম। আমার উচিত ছিল আরো আগে আসার। ইনশাআল্লাহ আগামী বছর যদি সুযোগ হয় আমি তিনদিন ইজতেমায় থাকবো। আল্লাহ আমার মনের আশা কবুল করুক।
এই ছিল আজকে আমার ব্লগ। আশা করি আপনারা পড়বেন আমার ব্লগটি। ধন্যবাদ সবাইকে।
"আসসালামু আলাইকুম"