লক ডাউনের পুরোটা সময় ধরে বেশির ভাগ সময়ই কাটছিলো ছেলের সাথে টিভি দেখে দেখে। অনেকটা জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো সারাদিন কেটে যায় কলমির গন্ধভরা জলে! ছেলের বয়স তিন বছর, অন্য অনেক ছেলেদের মতো কার্টুন দেখে। কার্টুন আমারও খুব প্রিয়। ছেলের আবদার ও মেটানো হলো আবার নিজেরও একটু আনন্দ নেয়া হলো। কার্টুনের চেয়ে নির্ভেজাল আনন্দ আর কিসে হতে পারে! আমার মতো আর কে দেবে নিরমল আনন্দ!
ছোট বেলায় মিনা কার্টুন দেখে বড়ো হওয়া প্রজন্ম বুঝে কার্টুন শুধু নির্মল আনন্দই দেয় না অনেক শিক্ষনীয় বিষয় ও থাকে। ইউনিসেফের সৌজন্যে পাওয়া রঙিন বইটা এখনো ও টানে প্রায় পঁচিশ বছর আগে যেমন টানতো! এরপর পেপার পড়া শেখার পর রনবির আঁকা টোকাই সিরিজ ভালো লেগে যায়। তারপর আসলে চাচা চৌধুরী আরো কতো কী! আহা আনন্দ, আহা কার্টুন!
আহসান হাবীব এর উন্মাদ নিয়ে কতো উন্মাদনা! শান্ত, শিশির ভাইয়ের রাজনৈতিক কার্টুন আমাদের গুনে ধরা সমাজকে একটু নাড়া দিয়ে যায়। আমাদের বড়ো হওয়ার সাক্ষী হয়ে আছে চারলীচ্যাপলিন, থ্রি স্টোরিয়ারস, এর মতো কাল জয়ি কার্টুন সিরিজ।
হালের টম এ্যান্ড জেরি ও আমাদের শৈশবের অনেকটা জুড়ে বিচরণ ছিলো। ডিজনিল্যান্ডের এ্যানিমেশন করা ছবি গুলোর ধারণা কিন্তু কার্টুন সিরিজ গুলো থেকেই যে আসা তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
কার্টুন মানেই হলো ব্যাঙ্গচিত্র, যে চিত্রের মাধ্যমে একটা দেশের, একটা সমাজের বা পুরো বিশ্বের অসংগতি গুলো ব্যাঙ্গাত্তক ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। সে ব্যাঙ্গাত্তক চিত্র শুধু আমাদেরকে আনন্দই দেয়না, আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে চিন্তা করতে শেখায়। যে চিন্তা সমাজ বদলের, মানসিকতা বদলের কিংবা কুসংস্কার দূর করার জন্যে।
এবার আসা যাক কার্টুন সিরিজ গোপাল ভাঁড়ে। গোপাল রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজ সভার একজন ভাঁড়। যার দায়িত্ব হলো নানারকম হাস্যরসাত্তক বিষয় বা ঘটনাবলি দিয়ে রাজ সভাকে মাতিয়ে রাখা। গোপাল শুধু রাজ সভাকে হাসি দিয়ে মাতিয়ে রাখেনা রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করে। যে বুদ্ধির ঝোরে কটু মন্ত্রীর চালাকী মাত করে দে, আবার রাজ্যকে নবাবের হাত থেকেও রক্ষা করতে দারুণ কাজ দে। গোপাল যা সত্য তা রাজাকে মুখের সামনেই বলে দে। আমাদের ও এই রকম একজন গোপাল ভাঁড় দরকার যে সত্যিজে সত্য বলবে, সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলবে। কিন্তু আমাদের সমাজ কী তা হতে দিবে? আমাদের সমাজে তো মন্ত্রী হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা, যে প্রতিযোগিতায় আমরা হয়তো হারিয়ে ফেলবো আমাদের নিজস্বতাকে।
Source Pixabay