জীবন!

কী হেলাল ভাই মনটা খুশি খুশি মনে হয়, চাকরি হয়ে গেলো নাকি? রহমানের এমন প্রশ্নে এখন আর বিচলিত কিংবা অপমান বোধ করেনা হেলাল। বরং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে শুধু চাকরি না একদম বিসিএস ক্যাডার হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিবে। হেলাল কোন কথা না বাড়িয়ে জামা কাপড় ছাড়িয়ে ওয়াশ রুমে যায়। ওয়াশ রুম থেকে এসে দেখে তাদের আরেক রুমমেট তৌহিদ আসে। আরে হেলাল ভাই ভাইভা কেমন হলো, চাকরি হয়ে গেলো তো! তৌহিদ তুই ও যা শুরু করলি ভাই মাত্র ভাইভা দিয়ে আসলো রেজাল্ট কী সাথে সাথে দিয়ে দিবে? হেলাল ভাই আসেন ভাত খেয়ে নেন রহমান বলে। রহমানদের অবশ্য দোষ দিয়ে লাভ কী, হেলাল এম এ পাস দিয়ে বসে আছে দুই বছর হলো। এখনো বলার মতো কোন জব খুঁজে পায়নি।

চাকরি যে হয়নি এমন না, একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে মোটামুটি বেতনের একটা জব হয়েছিল হেলালের, বসের অন্যায় আবদার মেনে, নিজের মূল্যবোধের সাথে আপোষ করে চাকরিটা করা হয়নি। এরপর থেকে সে পন করে প্রাইভেট জব করেবেনা।

হেলাল, রহমান, তৌহিদ তারা একে অন্যের রুমমেট। থাকে ফকিরাপুলে একটা ম্যাসে। দুই রুমের ম্যাসে এক রুমে ওরা তিনজন, বাকিরুমে আরো দুই জন থাকে। বাকি দুই জন চাকরিজীবি। ওরা তিনজন ছাত্র। হেলালকে অবশ্য ছাত্র বললে ভুল হবে, এম এ পাস দিয়েছে দুই বছর আগে, ওর সাথে প্রায় সবাই জব করে। অবশ্য তাতে হেলালের কোন আক্ষেপ নেই, সে জানে বড়ো কিছু হবে। আট বড়ো কিছু হতে হলে পরিশ্রম আট সাধনার কোন বিকল্প নেই। ভালো জিনিস দেরিতে হওয়ায় ভালো! এইসব ভেবে নিজেকে সান্তনা দে, আর ভিতরে ভিতরে নিজেকে তৈরি করে ভবিষ্যতকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখাবে বলে। সে জানে সফল হয়ে দেখিয়ে দেয়ার মতো প্রতিশোধ আর কিছুতেই হয়না।

তৌহিদ, রহমান কোথাও গেলে হেলাল আদাজল খেয়ে পড়ালেখা করে। ওরা রুমে ডুকলে হেলাল টিউশনির জন্য বের হয়ে যায়। আজব ঢাকা শহরে ছাত্রদের টিউশনিই বেঁচে থাকার একমাত্র হাতিয়ার। সকাল বেলা টঙ দোকানের কলা, রুটি দিয়ে কোন রকম নাস্তা সারা, দুপুরে হালিম চত্বরে সিঙারা দিয়ে লান্স! আহা বাস্তবতা! আহা জীবন!! রাতে আলু আর জোল দিয়ে ডুবানো মুরগির মাংস দিয়ে ভাত, তিন বেলায় একবার!

গ্রামের বৃদ্ধ বাবা-মা জানে হেলাল চাকরি করে, কিন্তু হেলাল যে চাকরিটা ছেড়ে দিছে তা জানায়নি। জানালে বাবা-মা কষ্ট পাবে। এদিকে সংসারের খরচ ও বাড়ছে। হেলাল এইসব ট্যাকল করার জন্য বাড়তি একটা টিউশনি হাতে নিয়েছে। টাকা পয়সা ভালোই দে। তবুও হেলালের মন খারাপ থাকতো, কারণ তার ছাত্র ফাঁকিবাজ।

ফাঁকিদিয়ে কোন টাকা দিয়ে আয় করতে চায়না হেলাল, তা যতো টাকায় হোক, হেলাল দুই মাস টিউশনির পর ছেড়ে দে, কারণ সে যতো টাকা পাচ্ছে সে অনুযায়ী সেবা দিতে পারছেনা।

যাক সে বাড়তি টাকার হিসেব মিলাতে এখন সকাল আর দুপুরের খাবার একসাথে সারে যাতে করে বাড়িতে বাড়তি টাকাটা পাঠাতে পারে।

এর ভিতর হেলালের ভাইভা রেজাল্ট বের হয়, হেলাল বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত। তাদের ম্যাসে যখন জাবেদ ভাই খাগি খামটা, যেখানে লেখা রাষ্ট্রিয় ডাক, অতিব জরুরী, হেলালের হাতে তুলে দে, হেলালের চোখ দিয়ে খসে পড়ে কয়েক ফোটা জল। যে আদ্রতা ছুয়ে যায় পুরো ফকিরাপুল থেকে হেলালের গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত। আহা জীবন!!

Source Pixabay
img_0.7021312739873071.jpg

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Logo
Center