ডিজিটাল মানে কি? আমি যা বুঝি শূন্য(০) এবং এক (১) এর খেলা। হয় শূন্য নয়তো এক এর বাইরে কিছু নেই।এই তথ্যটি জেনেছি ১৯৯২ সালের দিকে। কম্পিউটার চলে ০/১ এই দুই এর সংকেতে।এর বাহিরে সে কিছুই বুঝে না।
PIC SOURCE
সেই ২০০৮ সালের শেষ দিকে যখন শুনেছিলাম ২০২১ সালের ভিতর দেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। কি বুঝে দেওয়া হয়েছিলো এই ঘোষণা? তের বছর পার হয়ে গেছে এখনো মিলাতে পারছি না এটি কি বুঝে নাকি না বুঝে দেওয়া হয়েছিলো ঠিক বুঝতে পারছি না।২০২১ সাল পার হয়ে ২০২২ সাল এর ছয় মাস পার হয়ে গেছে কিন্তু বাংলাদেশে এই ডিজিটাল খেলা কি আসলেই কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে? সবাই ডিজিটাল ডিজিটাল চিৎকার করে করে গলা বাজি করেই যাচ্ছি।
ডিজিটাল বলতে আপনি কি বুঝেন? একটু কি বলবেন।আপনি কম্পিউটার চালাতে পারেন,ফেইসবুক,জিমেইল,টিকটক,হোয়াটসঅ্যাপ,ইন্সট্রাগ্রাম এই সব চালাতে পারেন বলেই কি আপনি সব শিখে গেছেন,আপনি জুম মিটিং করছেন,অফিসের কাজ বাসায় বসেই করছেন, এতেই কি আপনি ডিজিটাল হয়ে গেছেন? কিছু অফিসিয়াল ওয়েব সাইট,কিছু টেন্ডারড্রপ করা,নিউজ মোবাইলে মেসেজ দেয়া,কিছু ফরম অনলাইনে ফিলাপ করতে পারাই কি ডিজিটাল দেশ হয়ে যাওয়া?
আমি যেমন ডিজিটাল বাংলাদেশ বুঝেছিলাম--ঘোষণাটি যখন সারা বাংলার আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে তখন।
আমার দেশের একটি শিশু যদি হাসপাতালে জন্ম হয় সেখানেই তার জন্মসনদ এন্ট্রি হবে।যদি বাসায় হয় তাহলে স্থানীয় প্রতিনিধির অফিস তা এন্ট্রি করে দিবে।তার একটি ইউনিক আইডি হবে যেখানে তার পারিবারিক ইতিহাস ও এন্ট্রি হয়ে যাবে।
সে কি কি টিকা দিলো তার ইতিহাস আইডিতে এন্ট্রি করা হবে।
একটি বাচ্চা যখন স্কুলে ভর্তি হবে, লেখা পড়া করতে থাকবে তার সকল রেকর্ড আইডিতে এক এক করে আপডেট হয়ে যাবে। এভাবেই তার শিক্ষা জীবনের সকল ইতিহাস জমা থাকবে।কিছুই হার্ড কপির দরকার হবে না,তবে কারো দরকার হলে প্রিন্ট নেয়ার ব্যবস্থা থাকবে।একবস্তা বই কাধে নিয়ে কেন সে স্কুলে যাবে? ক্লাস রুমে থাকবে ডিজিটাল ডিভাইস।বই থাকবে অনলাইনে।প্রিন্ট বই থাকবে বাসায় কিন্তু তা হবে সারা দেশের সকল স্কুলের জন্য একই বই।সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিলো বাচ্চাদের ওজনের ১০% এর বেশি বই বহন করবে না। তা কি কেউ মানছে ?
PIC CREADITএকজন মানুষের কতজন সন্তান আছে,সে কত জন এর ভরনপোষণ করে তার কি কোন হিসাব আছে? তার উত্তরাধিকার কারা? তার মৃত্যুর পর কেন সন্তানদেরকে ওয়ারিশ সারটিফিকেট নিতে হবে? সেতো অনলাইনে আগেই করা থাকার কথা। যাদের দরকার হবে তারা দেখে নিবে।
আমি কি কাজ করি সরকার তা জানে না।কিন্তু সেই তথ্য জানা থাকা দরকার, আমি কত টাকা আয় করি তা প্রথমেই আমার একটি ইউনিক একাউন্টে ডুকবে সেখান থেকে নিজের ইচ্ছে মতো খরচ করতে বাঁধা থাকবে না,তবে যেহেতু সরকারকে আয়
ব্যয় এর হিসাব দেখাতে হয় সেইহেতু সকল লেনদেন এই কার্ডের মাধ্যমে করতে পারলে বছর শেষে লিখে এনবিআর কে জমা দিতে হবে না? সেটা এক ক্লিকে এনবিআর জেনে নিয়ে ট্যাক্স নিতে পারবে?একটি পাসপোর্ট করবেন? দেখুন কত সময় লাগে।ডিজিটালই যদি হয় তাহলে কেন ভেরিফিকেশন করতে হবে? কেন শুধু প্রিন্ট টাইমের ভিতর তা হাতে পাওয়া যাবে না?
- এন আই ডি কারেকশন বা নতুন বানাতে হবে,কেন এখানে ওখানে দৌড় ঝাপ দিতে হবে? মাসের পর ও অপেক্ষা করতে হবে?সেতো জন্মের সাথে সাথেই হয়ে যাওয়ার কথা।শুধু ছবি আপডেট করা যেতে পারে ২/৪ বছর পর পর এবং নিজের টা নিজেই করে নিবে।
- ডাক্তার দেখাবেন? উনি টেস্ট ছাড়া কিছুই বলতে পারবেন না,কেন আমাকে সেই টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে নিয়ে দৌড়াতে হবে? ডাক্তার পরিবর্তন করলে কেন সেই একই টেস্ট আবার করতে হবে?সব রিপোর্ট অনলাইনে সাবমিট করে দিবে ডায়াগোনেস্টিক সেন্টার, যে ডাক্তার রুগীকে দেখবেন সে জন্ম থেকে বর্তমান পর্যন্ত সকল ইতিহাস পেয়ে যাবেন।
- বের হবেন সাথে আইডি কার্ড থাকতে হবে,এই আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ড এমন ভাবে জাতীয় সার্ভারে সংযুক্ত থাকবে যেখানেই থাকুন আপনার লোকেশন দেখাবে। দেশ থেকে অনেক ক্রাইম সহজেই বন্ধ করা সম্ভব।শুধু একটু দেশ প্রেম দরকার।
- জমি কিনবো, রেজিষ্ট্রেশন, মিউটেশন,টেক্স দিতে ঘুষ দিতে হবে? কেনার সময় সাথে সাথেই সব এন্ট্রি হয়ে যাবে।
- একজন মানুষ সারাজীবন চাকুরী করে পেনশনের জন্য কেন মাসের পর মাস ঘুস দিয়ে অপেক্ষা করবে?যেদিন তার এলপিআর শেষ সেইদিনই তার টাকা তার ইউনিক একাউন্টে ট্রান্সফার হয়ে যাবে। কারন প্রতিমাসেই তার হিসাব আপডেট করা হতো।
- একটি মামলা কেন মাসের পর মাস ঝুলে থাকবে? একটি রায় এর কপি এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে যেতে কেন বছর পার হয়ে যাবে?শুরু থেকে সব কিছুই অনলাইনে থাকবে, রায় অনলাইনেই এন্ট্রি করে দিয়ে দিবে, সিসি, বিসি যাবেরকে দেয়া দরকার সাথে সাথেই দিয়ে দিবে।
- আমি মারা গেলাম, কিভাবে মারা গেলাম তা কেন সরকারের খাতায় এন্ট্রি করা থাকবে না? কেন মারা যাওয়ার পর ও ভোটার লিস্টে নাম থাকবে? কেন আদম শুমারী করতে হবে? প্রতি সেকেন্ড সব কিছু আপডেট হতে থাকবে। ডেথ সার্টিফিকেট যখন অনলাইনে এন্ট্রি হবে সাথে সাথেই ভোটার লিস্ট থেকে তার নাম কেটে যাবে। অর্থাৎ জন্ম থেকে মৃত্যু সব কিছুই থাকবে অনলাইনে।
- কেন আমি এলাকার বা দেশের বাইরে থাকলে আমার ভোট আমি দিতে পারবো না?আমি যেখানেই থাকি আমি সেখান থেকেই ভোট দিতে পারবো।
- কতটি গাড়ি রাস্তায় চলে, তার লাইসেন্স, ফিটনেস, রোড পারমিট যে যে ডকুমেন্ট লাগে তার রিনিউ করা, বাতিল হওয়ার বিস্তারিত তথ্য অনলাইনে থাকবে,যখন যা রিনিউ করতে হবে তার একমাস আগে মেসেজ যাবে।ডেট শেষ হলে পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া হবে,যেখানে পাবে সেখানেই ধরে স্ক্র্যাপ করে ফেলা হবে।
- সকল বাস,সিএনজি ভাড়া তাদের নিজের মতো করে যার যা খুশি নেয়। তা মেশিনে দেয়ার বেবস্থা থাকা দরকার ছিলো।
PIC SOURCE
সকল বাসে এই ধরনের মেশিন ব্যবহার করতে হবে। ভাড়া নেয়ার সাথে সাথে টিকেট দিয়ে দিতে হবে।
- আমরা নিজেদের সেটালাইট ব্যবহার করি কিন্তু কোন প্রকার আর্থিক সুবিধা কি পাই? কেন ইন্টারনেট প্যাকেজ বা টকটাইম প্যাকেজ এ সময় বেধে দেয়া থাকবে?
- সকল বিল কার্ডে পরিশোধ করার নিয়ম থাকবে, সেটা হউক সংসদ ভবনের আর হউক টং দোকানের।কিছু কিছু বাসায় দোকানে প্রি পেইড করা হলেও ফ্যাক্টরি গুলোকে তার বাইরে রাখা হয়েছে। কিন্তু কেন?
আসলে ডিজিটালাইজেশন অনেক ব্যপক একটি ব্যবস্থাপনা। এই দেশে এটা কত বছরে হবে তা বলা মুস্কিল।এটি আমার এক হাত করতে চাইলেও আরেক হাত বাঁধা দিবে।আমরা মুখে বলি কিন্তু মন থেকে চাই না। আমরা জানি ডিজিটাল করা হলে দুর্নীতি করা অনেক জটিল হয়ে যাবে,দিনে দিনে বড় লোক হতে পারবো না। তাই যারা এই প্রক্রিয়াটি করবে তারাই উলটো দিকে হাটছেন। আর লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে যাচ্ছে। **আপনার কি মনে হয় এই দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করা সম্ভব? **
আপনার মতামত কমেন্টে লিখুন প্লিজ।
আখতার উজ জামান
তারিখঃ২১ জুন ২০২২
সময়ঃ ১১.০০ পিএম