চারুকলা বর্ধিত বিভাগ- ক্লাসরুম

MVIMG_20200614_171859_2.jpg

অনার্সের প্রথম চারটা বছর পুরাতন কলা ভবনে কাটছে। এই ভবনে নাটক ও চারুকলা বিভাগের ক্লাস হয়। ডিপার্টমেন্টে ক্লাস রুমের সংকটের কারনে আমাদের নতুন ভবনের কথা ভাবা হচ্ছিলো। এরমধ্যে একদিন আমরা সিনিয়র জুনিওর আড্ডা দেবার সময় মজা করে বলছিলাম আমাদের যদি আল বেরুনি এক্সটেনশান হল দিয়ে দেয় তাহলে অনেক ভালো হবে। ওখানেই ক্লাস করবো আবার ক্লাস শেষে হলে চলে যেতে পারব। চারুকলার জন্য আল বেরুনি এক্সটেনশান হল হলো একদম পারফেক্ট জায়গা। চারিদিকে চার টা ব্লক। প্রথম দুই টা ব্লক আ ক্লাস হবে আর পরের দুই টা ব্লকে আমরা থাকবো।

IMG_20200308_134852_2.jpg

প্রায় দুই সপ্তাহ পরে হঠাৎ শুনি আল বেরুনি এক্সটেনশান হল আমাদের ডিপার্টমেন্টকে আসলেই দিছে। ওখানেই চারুকলার নতুন ভবন হবে। ক্লাস শেষ করে আমরা সবাই দেখতে যাবো। আমরা তো সবাই অবাক সেদিন মজা করে বলছিলাম আর আজকে সত্যি আমাদের হল দিয়ে দিছে।

প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে এই হল পরিত্যক্ত হয়ে আছে। সব দিকে জঙ্গল। ঘাস গুলো বড়বড় হয়ে আছে। রাতের দিকে এদিকে পুরো ভুতুরে পরিবেশ লাগে। পাশেই বিশাল লেক। শীতকালে পাখি আসে অনেক এখানে।

IMG_20200304_134256_2.jpg

IMG_20200209_115702_2.jpg

হলে যাওয়ার পরে সবাই ঠিক করতে লাগলাম কে কোন রুম নিবো। রুমের ভিতরে ঢুকে দেখি মাকড়াসার জ্বাল নোংরা হয়ে আছে সবদিকে। এই হলে নাকি অনেক সাপের উপদ্রব ছিল। আর আশে পাশে অনেক জঙ্গল থাকার কারনে নিজের মনের ভিতরেও কেমন একটা ভয় কাজ করছিল। যদি কোনপাশ থেকে সাপ চলে আশে। প্রায় সপ্তাহখানেক পরে আমরা ক্লাস রুম পেলাম। মাস্টার্সে আমাদের এক বছরে ১২ টা প্রাক্টিকাল কাজ জমা দিতে হবে। যেকোনো সময় ডিপার্টমেন্টে এসে কাজ করা যাবে। এই বিষয়টা অনার্সে ছিল না। সকাল নটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের অনেকেরই দিনের থেকে রাতে কাজ করতে বেশি ভালো লাগতো। আমরা চাইতাম যেন ডিপার্টমেন্টের ক্লাস রুমগুলো রাতেও খোলা রাখে তাহলে আমরা ক্লাস করতে পারবো। মাস্টার্সে এই বিষয় টা পেয়ে অনেক ভালো লাগছিলো।

IMG_20200125_123724_2.jpg

সকালে ডিপার্টমেন্টে আসতাম। পাশেই সালাম বরকত হলের পাশে সকালের খাবার খেয়ে নিতাম। ক্যাম্পাসে এখানের খাবার ভালো। প্রতি বেলায় রান্না করা হয়। গরম ভাতের সাথে ডিম ভাজি, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা ও ডাল থাকতো। খাওয়া শেষ করে ক্লাসের জন্য যেতাম।

IMG_20200302_124726_2.jpg

কাজের ফাঁকে ফাঁকে সবাই আড্ডা দিতাম। কোনদিক দিয়ে সময় পার হয়ে যেতো কিছুই বুঝতাম না। কেউ পেইন্টিং করছে, কেউ কাঠের কাজ করছে কেউবা আবার এ্যাপ্লিক করছে। বিকালের দিকে বাসায় যেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যার পরে আবার ডিপার্টমেন্টের দিকে সবাই আসতাম। রাতভর আড্ডা চলতো। কেউ কাজ করতো আবার কেউ গিটার নিয়ে গান শুরু করতো। মাঝে মাঝে সারারাত থাকতাম ডিপার্টমেন্টে। গভীর রাতে রান্না করা হতো সবাই মিলে। খাওয়াদাওয়া করে ভোরের দিকে ক্লান্ত হয়ে হলে ফিরতাম সবাই।

IMG_20200302_124744.jpg

এভাবে সময় ভালোই চলে যাচ্ছিলো। দেখতে দেখতে মাস্টার্সের কাজ সাবমিশানের সময় চলে আসলো। সবাই দিন রাত এক করে কাজ করা শুরু করলো। রুমের দেয়াল সব পেইন্টিং দিয়ে ভর্তি হয়ে গেলো। প্রায় মাসখানেক সবাই ঘুম থেকে উঠেই ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে আসতাম আর রাতের দিকে হলে চলে যেতাম। সব থেকে বেশি প্যারা লাগছিলো সাবমিশানের আগের দিন। অনেকের কাজ শেষ হয়নি। সারাদিন সারারাত কাজ করতে হইছে। সাবমিশানের দিন সকাল পর্যন্ত কাজ । সারারাত কেউ না ঘুমিয়ে এক এক জনের অবস্থা অনেক খারাপ।

IMG_20200302_171606.jpg

কিছুদিন পরেই ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো। পরীক্ষা শেষ না হতেই করোনার জন্য সব বন্ধ। প্রায় দেড় বছর ধরে ক্লাস করিনা। সাবমিশানের এই সময় টা সব থেকে প্যারার মধ্যে কাটছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু এখন মনে হয় ঐ সময়টাই অনেক ভালো ছিলো। সবার সাথে দেখা হতো। পরিচিত মুখগুলো কতদিন দেখিনা।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Logo
Center