ক্যাম্পাসে সবগুলো লেকের মধ্যে ট্রান্সপোর্টের পাশে এই লেকটি সব থেকে বেশি সুন্দর। একটা সময় ভোরে ঘুম থেকে উঠে এখানে চলে আসতাম। কিছুক্ষণ পরেই আস্তে আস্তে ট্রান্সপোর্টের দোকানগুলো এক এক করে খোলা শুরু করত। এখানে জালাল ভাইয়ের পরোটার দোকান। প্রতিদিন সকালে এখানে পরোটা, ডাল ও ডিম বেঁচে। প্রায় প্রতিদিন সকালেই এখানে চলে আসতাম নাস্তা করতে। নাস্তা করতে করতে লেকের চারিপাশের দৃশ্য অবলোকন করতাম। ক্যাম্পাসের মধ্যে এইখানের পরোটা ও ডাল সব থেকে বেশি ভালো লাগতো। অন্য কোথাও নাস্তা করে এতো তৃপ্তি পেতাম না। প্রথম বর্ষে থাকতে যখন ঢাকা থেকে ক্লাস করতাম ক্যাম্পাসের বাস থেকে নেমে সোজা এখানে চলে আসতাম নাস্তা করতে। নাস্তা শেষে প্রায় ঘণ্টাখানেক আড্ডা দেয়ার সুযোগ পেতাম। এরপরেই ক্লাসের জন্য দৌড়াতে হতো। করোনার কারনে প্রায় দেড় বছর এখানে নাস্তা করা হয় না, দোকানপাট সব বন্ধ। জানিনা আবার কখনো এখানে বসে আগের মত আড্ডা দিতে পারব কি না। আগের মত আবার সব কিছু স্বাভাবিক হবে কি না। সবকিছু যদি স্বাভাবিক থাকতো তবে এই সময়টা ট্রান্সপোর্ট সব থেকে বেশি মুখরিত থাকতো। এখানে সকাল থেকে রাত অব্দি প্রত্যেকটা চায়ের দোকানে আড্ডার ঝড় ওঠে। একটার পর একটা সিগারেট শেষ হয় তবুও কারও গল্প শেষ হয় না। কোন একপাশে চলে গানের আসর। একটার পর একটা গান চলতেই থাকে। এখানেই শুরু হয় কারও নতুন প্রেমের গল্প, আবার কারও বিচ্ছেদের গল্প।
সব থেকে বেশি ভালো লাগতো শীতকালে। এই সময় অতিথি পাখির আগমন ঘটে। চারিপাশে পাখির কোলাহল। কুয়াশা ভেদ করে যখন সকালের প্রথম সূর্যটা উঁকি মারে তখন অন্যরকম ভালো লাগে। লেকের মধ্যে পাখিরা খেলায় মেতে ওঠে। এখানে এসে পাখিরা বাচ্চা দেয়। মা পাখি সামনে থাকে আর পিছনে বাচ্চারা এক লাইন ধরে থাকে।
এই ছবিদুটো লেকের অপরপাশ থেকে তোলা। শীতের কোন এক দুপুরে এই ছবি তুলেছিলাম। লেকের মধ্যে দিয়ে ছোট্ট একটি মাটির রাস্তা। রাস্তার মাঝেই একটা জাম গাছ আছে। এখানে সুন্দর বসার জায়গা। লেকের অর্ধেকটা জুরে পাখি থাকে। পাতি সরালি, পানকৌড়ি, ধলাবুক ডাহুক ও পাতি পানমুরগির আরও অনেক অতিথি পাখিতে ভরপুর থাকে। শীত বারার সাথে সাথে পাখিদের সংখ্যাও বারতে থাকে। লেকের একটাপাশ লাল শাপলা দিয়ে ভর্তি। শাপলার মধ্যে দিয়ে পাখিদের আনাগোনা দেখতে দেখতে সময় যে কোনদিক দিয়ে চলে যায় বোঝা যায় না। শীতকালের প্রায় প্রতিটা দিন এখানে বসে পাখি দেখতাম। মন খারাপ থাকলে এখানে বসলে মন সাথে সাথে ভালো হয়ে যায়।