সংসার সুখী হয় রমনীর গুনে

সংসার সুখী হয় রমনীর গুনে

people-2561053_960_720.jpg
Image score

আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছি আজ প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেলো। আমি যখন ক্লাশ নাইন এ পড়ি তখন আমার মায়ের ক্যানসার ধরা পরে। বাবা অনেক কষ্ট করে মায়ের চিকিৎসার খরচ বহন করে ও আমার পড়ালেখা করায় । এক পর্যায়ে মায়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার হলে বাবা আমাদের বাড়ির জায়গার কিছুটা অংশ বিক্রি করে দেয়। মাস ছয় মাস পর মা হসপিটালে ভর্তি অবস্থায় মারা যান। মা মারা যাওয়ার পর বাবা মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পরে। তারপর থেকে আমি নিজেকে আস্তে আস্তে মানিয়ে নিয়েছি। নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছি। পরিবারে এখন শুধু আমি আর বাবা।

বর্তমানে আমি ভালো একটা চাকরি করার কারণে আর্থিক দিক দিয়ে বেশ ভালোই আছি। হঠাৎ বাবা একদিন আমার বিয়ের কথা বলতে লাগলো। বাবা তার কোনো এক বন্ধুর মেয়ের সাথে আমার বিয়ের কথা বলে এসেছে। আমি বাবার কথার অবাধ্য কখনো হয় নি। তাই আর কিছু না বলে রাজি হয়ে গেলাম।

পারিবাবারিক ভাবে আমাদের বিয়ে হয়। খুব সুন্দর সুখের একটি ছোট্ট সংসার আমাদের এখন। বিয়ের পর বেশ কিছু দিন কেটে গেলো আমাদের। ইদানিং আমার অফিসের কাজের চাপ একটু বেড়ে গেছে , তাই অফিস থেকে ফিরতেও একটু দেরি হচ্ছে। আমার স্ত্রী আমাকে নিয়ে মার্কেটে যাবে কিছু কিনাকাটা করতে এই কথা টা বেশ কিছুদিন যাবৎ আমাকে বলছে। কিন্তু আমি সময় করে উঠতে পারছিনা। অনেক কষ্ট করে আমি একদিনের ছুটি নিলাম অফিস থেকে। ছুটির দিন সকালে আমি ও আমার স্ত্রী প্রস্তুত হয়ে বাসা থেকে বের হবো এমন সময় বাবা এসে সামনে হাজির হলো।

বাবা আমাকে বলতে লাগলো তোর কাছে কি ২০০ টাকা হবে ? হঠাৎ কেমন জানি একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো আমার। মনে পরে গেলো সেই ছোটবেলার কথা। যখন স্কুলে যাওয়ার সময় আমি বাবার কাছে ৫ টাকা চাইতাম ,তখন বাবা জিজ্ঞাসা করতো বাবা তুমি ৫ টাকা দিয়ে কি করবে ? তখন আমি বলতাম বাবা আজকে আমরা সব ফ্রেন্ড রা মিলে ৫ টাকা করে চাঁদা দিয়ে একটি বল কিনবো। আর স্কুল শেষে আমরা ক্রিকেট খেলবো। বাবা তখন আমার কথা শুনে বুক পকেটে হাত দিয়ে ৫০ টাকার একটা নোট বের করে দিয়ে বলেছিলো , তুমি নিজেই একটা বল কিনে নিও । যখন আমি বাবার টাকা দিয়ে বল কিনে মাঠে যাচ্ছিলাম গর্বে আমার বুক ভরে আসছিলো। তবে নিজের জন্য নয়। এই গর্ব আমার মধ্যবিত্ত বাবার জন্য। যে বাবা আর্থিক দিক দিয়ে মধবিত্ত হতে পারে কিন্তু নিজের অনেক না পাওয়া দিয়ে আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। সময় কতটা দ্রুত চলে যাই। বাবা তার ছোট্ট চাকরিটা এখন আর করেন না।

কেন জানি খুব কষ্ট হলো জানি না। মার্কেটে যাওয়ার জন্য আমার মানিব্যাগে প্রায় দশ হাজার টাকার মতো ছিল। সেখান থেকে পাঁচ হাজার টাকা বাবার দিকে এগিয়ে দিলাম। ঠিক তখনি আমার স্ত্রী আমার কাছ থেকে টাকাগুলো ওর হাতে নিয়ে নেই সাথে আমার হাতে থাকা মানিব্যাগ টাও নিয়ে নেই। ঘটনার আকর্ষিকতাই আমি পুরো স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আজ ছয় মাস হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। এই কয়দিনে ওকে খুব ভালো মনের মানুষ বলে মনে করেছিলাম। যে কিনা আমার পরিবারকে নিজের পরিবার হিসেবে মেনে নিয়েছে। তাহলে কি আমি মানুষ চিনতে ভুল করলাম ?

এর পর যেটা ঘটলো তার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। আমার স্ত্রী মানিব্যাগে যা টাকা ছিল তার থেকে ৫০০ টাকা রেখে বাকি সবগুলো টাকা আমার বাবার হাতে তুলে দিলো। বাবা বলতে লাগলো আরে পাগলী আমি এতো টাকা দিয়ে কি করবো ? আমার স্ত্রী বলতে লাগলো বাবা আপনি আপনার যা লাগে যে ভাবে ইচ্ছা হয় সে ভাবে আপনি টাকা খরচ করেন। আপনার যা খেতে ইচ্ছা করে খান। বাবাকে এই কথা গুলো বলে আমার হাতে মানিব্যাগটা দিয়ে আমাকে বলতে লাগলো বাবার যাতে কখনো তোমার কাছে টাকা চেয়ে নিতে না হয়। আমি যেন নিজে থেকে বাবাকে টাকা দেয়। আমি শুধু ওর দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম এতক্ষন। বলার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

ওর কথা শুনে চোখে জল এসে পড়লো। চোখের জল মুছেই বেরিয়ে পড়লাম তাড়াতাড়ি। জীবনে দ্বিতীয় বারের মতো আমার বুকটা গর্বে ভরে উঠলো। পরম শ্রদ্ধার ভালোবাসা আমার স্ত্রী হাত টা যখন ধরলাম নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বলে মনে হলো। আপন জনের জন্য সময় মতো কিছু করতে না পারলে কিসের এত টাকা পয়সা কিসের এত ধনদৌলত। আপন মানুষের ভালোবাসা ছাড়া বাকি সবকিছু ক্ষণস্থায়ী।

পৃথিবীতে হয়তো অনেকের স্ত্রী তার স্বামীকে বাবা মা থেকে দূরে সরিয়ে নিতে চাই। আবার আমার স্ত্রীর মতো এমন স্ত্রীও আছে যারা শশুর শাশুরিকে নিজের বাবা মার মতোই ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে। তাদেরকে খুশি করতে দামি রেস্টুরেন্ট অথবা দামি দামি ব্রেন্ডের জিনিস কিনে দেয়া লাগেনা। বাবা মায়ের মুখের হাসি , পরিবারের উপর বিশুদ্ধ ভালোবাসা মন মানসিকতা থাকলেই হয়।

Thank you all for visiting my page and giving your nice support.
@aislam
Check my others social sides profile-
Facebook - https://www.facebook.com/profile.php?id=100007607950342
Instagram- https://www.instagram.com/aminul6032/?hl=en

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Logo
Center