ধোঁয়াশা পর্ব ৩

সঙ্গদোষে লোহা ভাসে। কথাটা মানুষ এমনি এমনি বলে না। তা আপনি যত ভালো মানুষই হন না কেন। যদি সাথে বা আপনার খুব কাছের কেউ যদি খুবই বাজে মানুষ হয়, আর আপনি যদি তার সাথেই সারাক্ষণ থাকেন, কিছুটা হলেও তার স্বভাব আপনার ভেতর আসবেই। তা আপনি যত ভদ্র হন বা যত সম্মানিত লোক হোন না কেন।

শুধু টাকার জন্য মানুষ এত বড় রিস্ক সহজে নেয় না। তেমনি সোহেল স্যার ও শুধু যে কিছু টাকা পাচ্ছে বলেই রিপন স্যারের সাহায্য করেই যাচ্ছে, এমন নয়। তার ও এক কলুষিত অতীত আছে। যা রিপন স্যার জানে। আসলে শুধু জানে বললে ভুল হবে, যেখান থেকে তাদের বন্ধুত্ব শুরু আরকি। জানোয়ার সবার মধ্যেই থাকে। শুধু কেউ জলদি দেখায় বা কেউ পুষে রাখে। কেউ সে জানোয়ারকে কন্ট্রোল করতে পারেনা। আবার কেউ খুব সুন্দর করে কন্ট্রোল করে সারা জীবন সুখে শান্তিতে বাস করতে পারে। কিন্তু অনেক সময় একটা ভালো মানুষও তার ভেতরের পৈশাচিক আনন্দকে কন্ট্রোল করতে পারে না। সে শুধু একটা বাহানা খুঁজে। সে বাহানা দিয়ে সে তার খারাপ কাজগুলো ঢেকে রাখতে পারবে ভালো মানুষের আড়ালে।

প্রায় ১২-১৩ বছর আগের কথা। সোহেল স্যারের স্ত্রী তখন সন্তান সম্ভাবা। আর প্রেগনেন্সির সময় মেয়েদের মন মেজাজ এমনিতে অনেক সময় খারাপ থাকে। তার ওপর সোহেল স্যারের সাথে মাঝে মাঝেই ঝগড়া লেগেই থাকতো। একেতো স্কুলের প্রেসার, তার ওপর বাসায় স্ত্রীর সাথে অশান্তি, তার উপর দীর্ঘদিন শারীরিক মিলনের অভাব, সবকিছু মিলিয়ে সোহেল স্যারের মন মেজাজ ২৪ ঘন্টাই খারাপ থাকতো। রিপন স্যার আর সোহেল স্যার তখন একই স্কুলেই ছিল। যেহেতু পূর্ব পরিচিত তাই অন্যান্যদের থেকে একটু ভালোই মেলামেশা হতো রিপন স্যারের সাথে। কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন যে রিপন স্যারের সমস্যা আছে। তার ছোট মেয়েদের দিকে চাউনি একটু অন্যরকম। তারপর একদিন তার সন্দেহ হয়। কিন্তু তিনি পুরোপুরি ভাবে শিওর ছিলেন না। উনি চাইলেই শিওর হতে পারতেন কিন্তু ওই মুহূর্তে তার মাথায় অন্য ধান্দা ছিল।

খাদিজা বিবি নামে এক দরিদ্র মহিলা ঝাড়ুদার হিসেবে ছিল। বয়স কম দেখতে সুন্দরী। গরিব ঘরে জন্ম নেয়ায় পড়াশোনা করতে পারিনি। আর এক রিক্সাওয়ালার সাথে বিয়ে হয়েছিল খুব ছোটবেলাতেই। খুবই দুঃখের জীবন তার। এই স্কুলের ঝাড়ুদার হয়ে যে টাকা কামায় তা দিয়ে তার ছেলেকে পড়াশোনা করায়। কারণ তার স্বামী ছেলের পড়াশুনা করার কোন টাকা দেয় না। এই সরল মানুষটা জানতো না, ঝাড়ু দিতে দিতে কবে তিনি এক ভদ্র মানুষের মুখোশ পড়া লোকের কুদৃষ্টির শিকার হন।

এভাবে দেখতে দেখতে একদিন রিপন স্যার সোহেল স্যারের কাছে ধরা পড়ে যান। আর যে মেয়েটিকে নিয়ে ধরা খান, সেই মেয়েটিকেও রিপন স্যার কন্ট্রোল করতে পারেনি। সে তার বাবা মাকে বলে দেয়। প্রথমে সোহেল স্যার কোনোভাবেই রিপন স্যার কে সাপোর্ট করছিল না। সে খুব ভালো করেই জানে কত বড় অন্যায় করছে সে। কিন্তু উনি জানতেন না, যে ভদ্র মানুষের আড়ালে তার যে জানোয়ারটি লুকিয়ে আছে সেটা অনেক আগেই রিপন স্যার বুঝতে পেরেছিল। সোহেল স্যার সাক্ষী হিসেবে মেয়েটির পাশে থাকবেন বলে জানিয়ে দিলেন রিপন স্যারকে। তাই রিপন স্যার ভাবতে শুরু করলেন কিভাবে সোহেল স্যারকে কাবু করা যায়।

সরকারি স্কুল গুলো অনেক বড় হয়। তাছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরাও থাকেনা সব জায়গায়। থাকেই না বলা যায়। তাই কোথায় কি হচ্ছে তার খোঁজ রাখা খুবই টাফ ব্যাপার। সেই সাথে খাদিজা বিবির উপর যে সোহেল স্যারের নজর আছে সেটা অনেক ভালোভাবেই আন্দাজ করে নিয়েছিলেন রিপন স্যার। এখন তার মূল লক্ষ্য সোহেল স্যারকে খাদিজা বিবির কাছে আনা। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত যেমন ঠিক তেমন সোহেল স্যার সর্বোচ্চ খাদিজা বিবির বুকের দিকে তাকানো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। কারণ যতই হোক সে ভদ্র মানুষের মুখোশ পরা। তাই রিপন স্যার খাদিজাকে রাজি করানো ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। কিন্তু এত সহজে খাদিজাকে তো কাবু করাও যাবে না। তাই এমন কিছু করতে হবে যাতে খাদিজা বাধ্য হয় সোহেল স্যারকে কাছে আনতে। নোংরা মস্তিষ্কে আরেক নোংরা খেলায় মেতে উঠে রিপন ।

চলবে…

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now