ধোঁয়াশা পর্ব 2

"স্যার! ছাইড়া দেন স্যার! খোদার কসম স্যার! আর এই ভুল হবে না স্যার! খুব ব্যাথা লাগে আমার স্যার! প্লিজ স্যার প্লিজ!"
কাজ শেষ করার পর পায়জামার দড়িটা খুব সুন্দর করে বাধলেন রিপন স্যার। একটা বার আশেপাশে একটু তাকিয়ে দেখলেন কেউ আবার দেখে ফেলল কিনা না। নাহ্! তার টাইমিং সেন্স এখনো আগের মতোই ভালো। অন্যদিকে টেবিলের উপর একটি নিথর দেহ পড়ে আছে। ব্যথায় নড়তেও পারছে না। ১২ বছরের একটি দেহ কতটুকুই বা নিতে পারে! তাও নিয়ে যাচ্ছেই। খুব গরীব পরিবারের হওয়ায় প্রতিবাদ ও করতে পারে না মেয়েটা। তার বাবা খুব শখ করে নাম রেখেছিল ময়না। নাম ময়না হলেও ময়নার মত কথা সে বলতে পারেনা। তাকে থেমে যেতে হয়। পরাজয় মানতে হয়। রিপন স্যারের এই হিংস্রতার শিকার সে চার পাঁচ দিন ধরেই হচ্ছে। আজকে একটু সাহস করে হেডমাস্টার কে বলতে চেয়েছিল কিন্তু কিভাবে রিপন্ স্যার আগেই বুঝে গেলেন ছোট মাথায় তার এখনো সেই বুদ্ধি কাজ করছে না। আজকেও ময়নার নিচে ব্যাথা নিয়ে উঁচু নিচু করে হেঁটে বাসায় যেতে হবে। মায়ের হাজারটা জবাব এড়িয়ে চলতে হবে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? ময়নার নিজেকে খুব ঘেন্না লাগে। নিজের শরীরকে খুব ঘেন্না লাগে। বারবার মনে হয় কেন মেয়ে হয়ে জন্ম নিল?

রিপন স্যার
পুরা নাম মোঃ রিপন আলী। বাড়ি টাঙ্গাইলের কোন এক প্রত্যন্ত গ্রামে। এক বছর হল এই সরকারি স্কুলের অংকের মাস্টার হয়ে এসেছেন। পরান ক্লাস ফাইভ সিক্সের মেয়েদের। মাস্টারমশাই বাদেও তার আরেক পরিচয় আছে। তিনি একজন পেডোফাইল। কম বয়সী মেয়েদের প্রতি তার এক আলাদা নেশা আছে। তাছাড়া ক্লাস ফাইভ সিক্সের মেয়েরা অনেক কিছু বুঝেও না। খুব সহজে তাদের মুখ বন্ধ করা যায়। এর জন্য উনি আরো ছোট মেয়েদের পড়ান। শাস্তির নাম করে প্রায় অনেক ছোট মেয়ে তার ভিকটিম হয়ে গেছে। আগের স্কুলে কয়েকজন গার্জিয়ান কমপ্লেন করার পর নিজেই চাকরি বদলি করে নেন। এখন এখানে এসেছেন তার নতুন শিকারদের খোঁজে। এই স্কুলেই তার পুরনো বন্ধু আছে যে কিনা বাংলা পড়ায় মেয়েদের। খুবই সাধারণ মানুষ। বিয়ে করে এক মেয়ে নিয়ে যথেষ্ট সুখেই আছে। তার নাম সোহেল আলী। উনি আবার রিপন সাহেবের পুরনো সবকিছুর ব্যাপারেই জানে। সোহেল স্যার আছে দেখেই এই স্কুলের রিপন স্যারের বদলি হওয়া। যেহেতু তার পুরনো বন্ধু আছেই তাই তার দোষ গুলো ঢাকা সহজ হবে। এর বদলে কিছু টাকা উনি সোহেল স্যার কে দেন। এখন সামান্য স্কুলের মাস্টাররা কত টাকাই পায়। এই অল্প টাকার লোভে নিজের বিবেককে বিক্রি করে দিয়েছেন সোহেল সাহেব।

এই স্কুলের মর্নিং শিফটে মেয়েরা ও ডে শিফটে ছেলেরা পড়ে। তো একদিন এক ক্লাস পরের মেয়েকে ধস্তাধস্তি করার সময় ক্লাস টেনের এক ছেলে দেখে ফেলে। অন্যান্য সময় রিপন স্যারের অ কাজ করার রুমের বাইরে সোহেল স্যার দাঁড়িয়ে পাহারা দেয়। কিন্তু আজ উনার ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য কখন একটি ছেলে তার ক্লাস শুরুর অনেক আগেই স্কুলে চলে এসেছে কেউ খেয়াল করেনি। কিন্তু বাজে বিষয় হচ্ছে ছেলেটার চেহারা নিপুন স্যার ঠিকমতো দেখতে পারেনি। তাই এখন দুজনই যথেষ্ট ভয়ে আছে। আর ওই বাচ্চা ক্লাস ফোরের মেয়েটিকে ধমকিয়ে তার খারাপ মার্কস তার বাবা-মাকে দেখাবে এই ভয়ে তাকে চুপ করে রেখেছে। সোহেল স্যার খুব কড়া করে এবার রিপন স্যার কে বলে দিলেন টানা কিছুদিন এসব কাজ বন্ধ রাখতে। কারণ রিপন স্যারের সাথে সোহেল স্যারের নামও এবার জড়ানো। তার ওপরে তার নিজেরও একটি মেয়ে আছে। তো কোন ভাবেই এসব জানাজানি হওয়া যাবেনা। রিপনের এই বাজে স্বভাবের জন্য সোহেল সাহেব তার বাসায় এখনো পর্যন্ত দাওয়াত দেয়নি। যতই ধরা খাওয়ার অবস্থা হোক নেশা কি এত সহজে ছাড়া যায়? রিপন স্যার এবার মনে মনে বুদ্ধি বের করা শুরু করলেন এবার তার কাজগুলো অন্য জায়গায় করতে হবে।

চলবে . . .

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now