মহল্লার রাস্তাগুলো যেমন হয়, খুব সরু। সামান্যতেই জ্যাম লেগে যায়।
এরকম জায়গায় বাইক নিয়ে জ্যামে আটকে থাকা আনন্দের কথা না। বাইক চালালে জ্যামে বসে থাকাকে অপমান মনে হয়। আধুনিকতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তাই সামান্যতেই ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। রাগ চড়ে যায় মাথায়।
হাতে সময় নেই, ভাবছি অসময়ে জ্যামটা লাগালো কোন শালা! মেজাজ খুব খারাপ হলো। আমার মতো আরো অনেকে, যাদের খুব তাড়া, ক্ষেপে উঠলো। মনের অসিহষ্ণুতা লুকিয়ে ফেলে একসময় সভ্য থাকার রেওয়াজ ছিল, আজকাল অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করতে না পারলেই যেন নিজেকে দুর্বল দুর্বল মনে হয়।
কিছুক্ষণ পর বোঝা গেল জ্যামের কারণটা। সামনে একটা অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে রাখা, ফলে রাস্তার একপাশ ব্লক হয়ে গেছে। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর নিহত কোনো মানব সন্তান, আয়ু ফুরিয়ে গেছে। সেখান থেকে কে যেন বললো, ভাই দুইটা মিনিট, লাশটা নামিয়েই গাড়ি সরে যাবে। এদিকে আমরা জ্যামের মানুষেরা নিজেদের হাতঘড়ি দেখছি। হয়ত হিসাব গুণছি, আর কতক্ষণ মানবিকতার ছদ্মবেশে জ্যামটা সহ্য করা যাবে।
সাদা কাফনে মোড়ানো লাশটা নামাতেই নারীকণ্ঠী কে যেন আল্লাহ গো বলে কেঁদে উঠলো। বড় চেনা শোক, তবুও বুক মোচড় দিয়ে উঠলো না৷ যে মৃত্যুর শোকে নিজেরও একটা অংশ মরে যায়, সেই মৃত্যুই কেবল আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। তড়িঘড়ি করেই অ্যাম্বুলেন্স থেকে খাটিয়ায় তুলে নেয়া হলো লাশ, জানাজা পড়াতে হবে, আগরবাতি জ্বলবে সারারাত, সান্তনা দিতে দিতে নিজেই কেঁদে ফেলবে কেউ কেউ, অনেক কাজ তাদের ।
আমাদেরও অনেক কাজ। তাই, আমরা একটু একটু করে এগোচ্ছি। হালকা এক্সেলেটর দিয়ে ক্লাচ চেপে ধরছি। বোঝাচ্ছি তাদের, আমাদের যেতে দিন। আমরা জীবিত।
জ্যাম পুরোপুরি কেটে গেল না।
তবে লাশ খাটে তুলে ফেলতেই, আটকে থাকা গাড়িগুলো হর্ণ বাজাতে বাজাতে লাশবাহী খাট বয়ে বেড়ানো মিছিলটাকে অতিক্রম করে গেল, যত দ্রুত পারা যায় ।কারণ, আমরা জীবিত, আমাদের অনেক তাড়া।