আমি যখন প্রাইমারি লেভেলের স্টুডেন্ট ছিলাম তখন কখনো আমার দ্বারা খেলাধুলার বিষয়টি হয়নি। এমনিতেই নিজের বান্ধবীদের সাথে সামান্য যেটুকু খেলাধুলা করা যায় আমিও অন্যান্যদের মতো তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলাম। স্কুল ফিল্ডে বা কখনো বাড়ির আশেপাশে আমার সাথীদের সাথে ডিম পোস, কিতকিত, গোল্লাছুট এই ধরনের খেলা করতাম। খুব মজা হতো কারণ আমাদের দেখে অনেক বড় মানুষও খেলতো আমাদের সাথে, মজাটা তখন দ্বিগুন হয়ে যেত।
কিন্তু আমি যখন মাধ্যমিক লেভেলের ছাত্রী হয় সেখানে দেখি সবাই অন্য ধরনের খেলা করে। যেমন ফুটবল, ক্রিকেট, হ্যন্ডবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, কাবাডি ইত্যাদি। আমি একদমই সেসব খেলার সাথে পরিচিত ছিলাম না। সব খেলাই আমার কাছে নতুন মনে হয়। কিন্তু ওখানে কেউ কিতকিত, ডিম পোস, গোল্লাছুট না খেলাই আমিও ওসব খেলা বাদ দিয়ে একে একে সবার সাথে মিলেমিশে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, কাবাডি খেলা শুরু করি। আস্তে আস্তে বেশ ভালো খেলোয়াড় হয়ে উঠি আমি। সবার প্রশংসায় আমি যেন পঞ্চমুখ হয়ে যায়।
আমাদের স্কুলে একবার ক্রিকেট আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা হয় সেখানে আমিও যোগ দিই। ক্রিকেট খেলাই আমাদের দল একেরপর এক বিজয় ছিনিয়ে আনে। শেষ পর্যন্ত আমরা ফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছায় কিন্তু রেফারি নিরপেক্ষ না হওয়ায় এবং আমরা খুব ভালো পারফরম্যান্স না করতে পারাই রানার্স আপ হতে হয় আমাদের। আমাদের জন্যে সেটা খুবই লজ্জাজনক হার হয় যেখানে সবার আশা ছিল আমরা চ্যাম্পিয়ন হবো। এতকিছুর পরেও আমরা খুশি হয় কারণ সেদিন দুই দলের মধ্যে ম্যান অফ দা ম্যাচ হয় আমি।
এরপর শীতকালীন খেলা শুরু হয় মার্চে, তাতেও অনেক খেলায় অংশ গ্রহণ করি আমি এর মধ্যে থেকে দৌড় প্রতিযোগিতায় আমার চাচাতো বোন প্রথম হয় এবং আমি লং জাম্প এবং বর্ষা নিক্ষেপে প্রথম হয়। কোনো না কোনো প্রথম পুরষ্কার নিয়ে বাড়িতে ফিরতামই আমি এবং আমার চাচাতো বোন।
এরপর আসে আন্তঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগীতা দুই হাজার ষোলো। আমরা পুরো স্কুল থেকে দল নির্বাচন করি এবং ফুটবল, হ্যান্ডবল ও কাবাডীতে অংশগ্রহন করি। তিনটি খেলাতেই আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে খেলি এবং প্রত্যেকটি খেলাতেই আমরা ফাইনাল রাউন্ড নিশ্চিত করি।কাবাডি এবং ফুটবলে আমার উপজেলা পর্যায়ে চ্যম্পিয়ান হয় এবং হ্যান্ডবলে রানার্স আপ বিজয়ী হয়। সবার খুশির শেষ থাকেনা আমরা সবাই হোটেলে গিয়ে বিরিয়ানি খায় এবং অনেক মজা করতে করতে বাড়ি ফিরে যায়।
কথা থাকে আমরা জেলা পর্যায়ে খেলতে যাবে কিন্তু অনেক সমস্যার জন্যে সেটি আর হয়ে উঠে না এদিকে আমাদেরও সামনে এসএসসি পরিক্ষা এগিয়ে আসে তাই আমরা পরিক্ষার জন্যে বেশি মনোযোগী হয়। কলেজে উঠে কখনো কোনো খেলাতে অংশগ্রহন করা হয়নি। কেউ জানতেও পারেনি আমি অতিতে কতোটা ভালো খেলােয়ার ছিলাম, জানাতেও চায়নি। জানাতে চায়লে অবশ্যই পারতাম।