This content was deleted by the author. You can see it from Blockchain History logs.

ভালোবাসার খুনশুটি

e6e770dd-14a5-4589-9ce7-f36d06709c59.jpg

অভ্রের বুকের ওপর মাথা রেখে শুয়ে আছে তুলি। এলোমেলো চুলগুলোয় তুলির মুখের একপাশ ঢেকে আছে। বড্ড মায়াবি লাগছে দুজনকে। পৃথিবীর সব মায়া যেন ভর করেছে তুলির নিষ্পাপ চেহারায়। এই ঘুমন্ত পরীকে দেখে কেউ বিশ্বাসই করতে পারবে না বাস্তবে মেয়েটা কতটা চঞ্চল। উচ্ছলতা তার হাসিমাখা মুখের নিত্যসঙ্গী।

সে শুধু ভালোবাসতে জানে, মন-প্রাণ খুলে শুধু ভালোবাসতেই জানে। তুলির প্রিয় মানুষগুলোর একটা তালিকা তৈরি করেছে সে। খুবই ছোট এই তালিকা। বাবা-মার একমাত্র মেয়ে সে। তার প্রিয় মানুষের তালিকায় সবার উপরে আছে বাবা, এরপর মা। তিন নম্বরে আছে টুইটুই। টুইটুই তার খুবই প্রিয় নিজের মনের সব কথা সে টুইটুইকেই বলে। ছোটবেলা থেকেই তার কথা বলার সাথী, খেলার সাথী সবই টুইটুই। টুইটুই, তুলির পোষা চড়ুই পাখি। সবাই সাধারণত ময়না পাখি পোষে না হয় টিয়া পাখি। কিন্তু তুলির পছন্দ চড়ুই। তাই তো মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করতে অনেক কষ্ট করে চড়ুই পাখি যোগার করেছিল তার বাবা। মেয়ের কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেন না তিনি।

এই তিনজনকে নিয়েই তুলির প্রিয় মানুষের তালিকা। কিন্তু আজ নতুন আরও একজনের নাম তার প্রিয় মানুষের তালিকায় লিখবে বলে ঠিক করেছে সে।

বসন্তের স্নিগ্ধ শীতল বাতাস বইছে। জানালা দিয়ে মিষ্টি রোদ তুলির চোখে মুখে উঁকি দিচ্ছে। চোখে মুখে রোদের আলো পড়তেই ঘুম ভাঙল তুলির। আড়মোড়া ভেঙে অভ্রের বুক থেকে মাথা তুলল সে। ঘুমন্ত অভ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে খুবই ভালো লাগছে তার। অভ্রের গাঢ় ভ্রুগুলোতে ডান হাতের অনামিকা বুলাতে লাগল সে।

গভীর মমতায় চিকচিক করছে তুলির চোখ জোড়া। মুচকি মুচকি হাসি ঠোঁটের কিনারায়। চোখ খুলল অভ্র।

অভ্র: কী হয়েছে? হাসছো কেন?

তুলি: কিছু না! কালকে রাতের কথা কিছু মনে পড়ছে? আমার ভাবতেই হাসি পাচ্ছে। লজ্জা লাগছে খুব।

অভ্র: হুম!

তুলি: তোমাকে কিছু প্রশ্ন করি?

অভ্র: করো।

তুলি: কোনো দুষ্টুমি না। সত্যি সত্যি উত্তর দেবে তো?

অভ্র: আচ্ছা, দেবো!

তুলি: প্রতিদিন কী আমার কথা তোমার মনে পড়ে?

অভ্র: না।

তুলি: তুমি আমাকে পেতে চাও?

অভ্র: না।

তুলি: তুমি আমাকে পছন্দ করো না?

অভ্র: না।

তুলি: তুমি এমন কিছু কি করতে পারবে যা আমার মুখে হাসি ফোটাবে?

অভ্র: না।

তুলি: আমি তোমাকে ছেড়ে চলে গেলে তোমার কষ্ট হবে না?

অভ্র: না।

তুলি: হয় আমি না হয় তোমার জীবন? কোনটা বেছে নেবে তুমি?

অভ্র: জীবন।

নিমিষেই ফ্যাকাসে হয়ে গেল তুলির নিষ্পাপ মুখের স্নিগ্ধতা। টলটল করে উঠল চোখদুটো। ম্লান হয়ে গেল সেই মনহরা হাসি। মাথা নিচু করে অঝোরে কাঁদতে লাগল সে। অভ্র দুহাতে আলতো করে তুলির মুখটা তুলে চোখে চোখ রাখল। মিষ্টি হেসে তুলির চোখের জল মুছে দিল।

অভ্র: আমার প্রতিদিন তোমার কথা মনে পড়ে না কারণ তুমি আমার মনেতেই থাকো। মনে তো তাদের পড়ে যাদের ভুলে যাই। তোমাকে তো আমি ভুলতে পারি না। তোমাকে আমি পেতে চাই না কারণ তুমি আমারই। নিজের জিনিসকে তো পুনরায় পেতে হয় না। আমি তোমাকে শুধু পছন্দ করি না আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিছু নয় আমি তোমার মুখে হাসি ফোটাতে সবকিছুই করতে পারি। শুধু একবার বলে তো দেখো!তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে আমার কষ্ট হবে না কারণ তুমি ছেড়ে গেলে আমি তো আর বাঁচাবোই না। তুমি আর জীবনের মধ্যে আমি জীবনকে বেছে নেবো কারণ তুমিই তো আমার জীবন। হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তুলি। তার চোখে মুখে আকাশ সমান বিস্ময়। এতটা সৌভাগ্যবতী সে কল্পনাও করেনি।

শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল অভ্র তাকে। লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে গেছে চেহারাটা। তার চোখে আবারও জল টলটল করছে কিন্তু এ জল কষ্টের নয়, মিষ্টির সুখের লোনা জল।

ভালোবাসায় বিভোর দুটি হৃদয় শুধু মনে একটাই প্রার্থনা করছে, ‘ভালো থেকো মোর ভালোবাসা শত সহস্র যুগ ধরে।’

পৃথিবীর সব ভালোবাসায় ভালো থাকুক শত সহস্রযুগ ধরে। দীর্ঘজীবী স্বচ্চ নির্মল বিশ্বাসে ভরে উঠুক প্রতিটা ভালোবাসার সম্পর্ক।