"মাঝে মাঝে মনে হয় মৃত্যু হয়ত সহজ,বেঁচে থাকাটাই বোধহয় কঠিন"

IMG_20210222_161901.jpg

প্রিয়,
পাঠকগণ,

আশাকরি আপনারা সকলেই সুস্থ আছেন। আর সমস্ত রকম সাবধানতা অবলম্বন করছেন।

কালই আমি আপনাদের সাথে আমার লেখা পোস্টে বর্তমান পরিস্থিতিতে ভয় নিয়ে কথা বলেছি। আর আজই হটাৎ করে একটা দুঃসংবাদ পেলাম।

আজ বলাটা ভুল হবে, বেশ কয়েকদিন ধরেই তার শরীরটা খারাপ ছিল, তবে পরশুদিন রাত থেকে অবস্থা অনেকটা খারাপ হয়ে যায়। আর কাল সে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরলোক গমন করেন।

পরশুদিন রাতে হসপিটাল নিয়ে যাওয়া হলে ভর্তি রাখে নি। কারণ এই করোনা কালে অন্য কোনো সমস্যা নিয়ে ভর্তি হলেও অনেক সময় দেখা যাচ্ছে রোগীর পরিবারের অনেক রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।তার উপর দাদার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।

রাতটা কোনো মতে কাটলেও সকালে সব শেষ হয়ে গেলো।সবথেকে অদ্ভুত কি জানেন লোকের অভাব।এই পরিস্থিতিতে মানুষ এগিয়ে আসতে একটু হলেও দ্বিধা বোধ করেন, আর সেটাই স্বাভাবিক। দাদার যদিও করোনা হয়নি, কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তবুও, পরশুদিন রাতে হসপিটালে যাওয়ার সময় কোনো মানুষ পাওয়া যায়নি।পাশের বাড়ীর একটা ছেলেকে নিয়েই গিয়েছিল। তবে কাল বেশ কয়েকজন মানুষ কিন্তু এসেছিলেন।

আসলে এই দাদা প্রচুর মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন।তাদের সাহায্য করেছেন, তাই বোধহয় এই পরিস্থিতিতেও তাকে সাহায্য করার জন্য এতো মানুষ একসাথে হয়েছে।

আমি কথা বলছি আমার ননদের ভাসুরের।দাদা খুবই ভালো মানুষ ছিলেন।তবে ওনার একটাই সমস্যা ছিলো, তিনি বড্ড শুচিবাই ছিলেন।দিনের মধ্যে কতবার যে হাত পা ধুতেন তার ঠিক নেই,কলে গেলেই আগে পুরো কল তিনি জল আর সাবান দিয়ে আগে ধোবেন, তারপর হাত পায়ে জল দেবেন। আসলে এটা এক ধরনের মনের রোগ।

তবে শুধু এটা বাদ দিলে একেবারে মাটির মানুষ ছিলেন। তিনি বিয়ে করেননি। মায়ের সাথে একা থাকতেন, বাবা মারা গেছেন প্রায় বছর খানেক হলো।আমার বিয়ের পর যেদিন প্রথম ননদের বাড়ি গিয়েছিলাম ওনার কল ধোয়া দেখে আমি পুরো অবাক।পড়ে ননদের থেকে সবটা জানলাম।

আমাকে দেখলেই এক গাল হাসি দিয়ে কথা বলতেন। আমি প্রথমবার ওনাদের বাড়ি গিয়েছি,কি দেবেন না বুঝতে পেরে তিনি আমার জন্য একটা পারফিউম কিনে এনেছিলেন। এনে আমার হাতে দিয়ে বললেন - আমি অত বুঝিনা,দোকানদার বলল এটা ভালো, তোমার ভালো লাগবে কিনা জানিনা।

দাদার সাথে যতবার দেখা হয়েছে, কখোনো মুখ কালো দেখিনি,আজ মানুষটা নেই ভাবতেই খারাপ লাগছে। আর ও বেশি খারাপ লাগছে ওনার মায়ের জন্য। স্বামী মারা যাওয়ার পর এই বড় ছেলেকে আঁকড়ে বেঁচে ছিলেন। আজ একেবারে একা, ওনার কান্না যেন এখনো কানে ভাসছে। সন্তান হারা এক মায়ের আর্তনাদ।বাইরে যখন দাদাকে শুইয়ে রেখেছে কত আদর করছে,বারবার বলছে এবার উঠে পর, তোর খিদে পেয়েছে, খাবি না।কি অদ্ভুত জীবন মানুষের তাইনা?

কাল অনেক রাতে ফিরেছি বাড়িতে।মনটাও খুব খারাপ।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।আসলে কি বলুন তো কারোর আপন জনকে চলে যেতে দেখলেই নিজের মনের ভেতরটা হাহাকার করে।তার উপর আজকাল কার পরিস্থিতি মানুষকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।

যাইহোক, দাদা যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক এই টুকু প্রার্থনা করতে পারি। আর আপনারাও সকলে ভালো থাকুন। দিনটা সকলের ভালো কাটুক।🙏

দাদার আগের কোনো ছবি আমার কাছে নেই, আর কালকে ছবি তোলার অবস্থায় ছিলাম না।তাই কোনো ছবি শেয়ার করতে পারলাম না বলে দুঃখিত।
IMG-20181024-WA0013(1).jpg

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Ecency