কুমিল্লা শহর ও আমার ছোট বেলা

আচ্ছা রবীন্দ্রনাথের একটা গানের কথা কি মনে পড়ে ! ঐ যে ওই টা

“ পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।“

আপাতত আমি এই ৪ লাইনই মনে রেখেছি যদিও এই গানটির সাথে আমার ছোট বেলা মিশে আছে। মনে পরে প্রথম স্কুলে গান গেয়ে খুব আদর পাওয়া মেয়েটি আমি ছিলাম। বলেছিল সবাই বড় হয়ে গান গাবে, ধরে রেখ রেওয়াজ টা । কিছু কারন বশত তা আর হয়ে উঠেনি। আমিও খুব জোর দেয় নি। বলতে পারেন “না” এর সাগরে গা ভাসিয়েছিলাম। আচ্ছা এসব কথা না হয় থাক, গানের রেশ ধরেই একটু কথা বলা যাক ছোট বেলা নিয়ে।
কথায় আছে জানেন তো, মানুষের সুখবেলা হল তার ছোট বেলা। আবার এটাও ঠিক প্রত্যেক মানুষের বেড়ে ওঠার গল্প একেক রকম। আমার টাও তেমনি, তাই আজ আমার গল্প নিয়ে বলতে পারেন জগা খিচুরি লিখার ইচ্ছা জেগেছে।

সত্যি বলতে আমার বেড়ে উঠা একেবারেই সাধারন। কর্মসূত্রে বাবা ছিলেন সরকারী কর্মজীবী তাই ছোটবেলা কেটেছে এক জেলা থেকে আরেক জেলা, এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগ। সেই জন্য আমার জন্মস্থান সিলেট এর মত সুন্দর এক জায়গাতে আর বড় হতে হতে ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্রগ্রামের মত ব্যাস্ততম শহর গুলোতে । যদি বলা হয় সব থেকে ভাল লাগার জায়গা কোনটি এক বাক্যে বলবো কুমিল্লা। যদিও আমার বেড়ে ওঠার গণ্ডিটা অনেক ছোট বলতে গেলে মফস্বল শহরের মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে আর ছোট থেকেই গুটিকয়েক মানুষের সাথে উঠা বসা, খেলাধুলা ছিল। হাতে গুনে চার চারটি বন্ধু ছিল, এখন অবশ্য কারোর অস্তিত্ব আর অবশিষ্ট নেই।

আমার যতটুকু মনে পরে আমারা ছিলাম চার বন্ধু আর সবাই এক ই বিল্ডিংএ থাকতাম। প্রত্যেকদিন আমাদের কাজ ছিল কিভাবে খেলা করতে বাহিরে যাওয়া যায়, সময় বুঝে গাছে চড়া। সময়টা ছিলও ভাল, না আছে পড়ালেখার চাপ না আছে কোন ঝামেলা। তার আগে কুমিল্লা সেনানিবাস সম্পর্কে কিছু বলে নেই। যদিও সব কিছু মাথায় নেই তাও এত টুকু মনে আছে আমরা সবাই মিলে পুরো এলাকা চোষে বেরিয়েছি। আমাদের ঐ দিকে পাহার ছিল, ইচ্ছা করেই সবাই ঐখানে জেতাম। জীবনে পাহার দেখা বলতে ঐটুকুই ছিল। পরে অবশ্য চট্রগ্রামের সেই বিশাল বিশাল পাহার দেখেছি বড় বেলায়। তবে যাই বলেন প্রথম সব কিছুই সুন্দর। আমরা একটু বর্ষাকালে ঐ দিকে যেতাম না। কারন একটাই সাপের ভয়, সেই ভয় মাঝেমধ্যে আমাদের বাসার আশে পাশেও দেখা যেত। বিশেষ করে বাড়ির পাশের বাগানটিতে। আমার মায়ের বাগান করার শখ ছিল বটে তাই এমন কিছু নেই যে সে তার বাগানে আনে নি । আমার নিজেরও খুব পছন্দের একটা জায়গা ছিল। সব থেকে লাকি ছিলাম একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ পেয়ে। বিশাল গাছ বলতে আমাদের বাগানটা ঐ গাছ জুড়ে ছিল। আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে নাম দিয়েছিলাম কৃষ্ণবাগান। মজার ব্যাপার হল আমি তখন কৃষ্ণ বলতে লাল বুঝতাম কিন্তু এখন জানি কৃষ্ণ মানে কালো, আসলে বড় বেলা আমাদের নিজের অজানাতেই অনেক কিছু শিখায় যা হয়ত আমাদের মাঝেমধ্যে ভ্যবাচেকাতে ফেলে দেয়। যাই হক এসবের মধ্যে একটা বন্ধুর কথা বলতেই হয়। হিন্দুধরমাবলী হওয়াতে মাঝেমধ্যেই নাড়ু, লাড্ডু খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার আর এই স্বাদ কখনো কোথাও আমি পাই নি। দুঃখের বিষয় বাবার ট্রান্সফার হয় ঢাকাতে আর তার সাথে আমার নাড়ু আর লাড্ডু খাওয়ার ভাগ্যও ।

9753f338c6469f9544edc2a64e20d016.jpg
Pinterest

আমাদের শহরের বড় ঐতিহ্য ছিল ময়নামতি। ময়নামতির গাঁ ঘেঁষে ছিল আমাদের স্কুল। প্রত্যেকদিন নিয়ম করে ময়নামতির টিলাতে দৌড়ে বেরেয়েছি আমরা। দেয়াল টপকাতে গিয়ে অনেকবার পড়ে গেলেও কেও আটকাতে পারেনি । তখন অবশ্য এখনকার মত এতো বিধিনিষেধও ছিল না।

aa34ae41fc384c239b036453c68cf5d4.jpg
Pinterest

কুমিল্লার কথা বলব আর রসমালাই এর কথা বাদ তা কি করে হয়। আমার এখন মনে আমার বোধহয় এই রসমালাই খাওয়াই ছিল এতো স্বাস্থ্যবান হওয়ার মূল রহস্য !! আমি তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই রসমালাই এর বিরাট ফ্যান । যাই হক , আমি যে পাহাড়ের কথা বললাম সেখানে একটি সিংগারা পাওয়া যেত, সত্যি বললে ঐ স্বাদ আর পাই নি আর কোন সিংগারাতে। এই কথাতে মনে হল, আসলেই মানুষের ভাল লাগার জিনিস গুলো হয়ত একটা পার্টিকুলার কিছুতেই আটকে যায় । আমি হয়ত আবার যাব ঐ একই শহরে , সব কিছু বদলে যাওয়ার মধ্যে পুরনোর ঘ্রাণ নিবো । এটাই হয় বা এইটাই হওয়ার থাকে !

আচ্ছা কৃষ্ণ অর্থ লাল না হয়ে কালো কেন !! তাহলে গাছটি নাম কৃষ্ণ দিয়েই বা কেন !!

হাই আমি জিবা । আশা করি গল্পটি আপনাদের কাছে ভাল লাগবে ।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
14 Comments
Ecency