গ্রামের গোলকধাঁধা, কে চালাক কে গাধা! || Village Paradox

আমরা যারা শহরে বড় হয়েছি, গ্রাম নিয়ে আমাদের একটা ফ্যান্টাসি কাজ করে। আমরা ছোটবেলায় বছরে এক-দুইবার গ্রামে যেতাম। তখন ঘোলাজল পুকুরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়তাম, গাছে গাছে উঠতাম, ক্ষেতের আইল ভেঙে দৌড়ে যেতাম।

সেই স্মৃতিগুলো আমাদের শৈশবের সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতির জায়গা করে নেয়। তাই গ্রামের কথা ভাবতে আমাদের এই সুন্দর সুন্দর স্মৃতিগুলি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ইচ্ছে করে সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে যদি গ্রামে চলে যাই!

বাস্তবতা আসলে কি এতটা রোমান্টিক? আমরা আসলেই কি পিউর গ্রামে গিয়ে একটানা থাকতে পারবো? ধরেন, সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে চলে গেলাম। কেমন হবে? আসুন, কল্পনার টিভিতে সেই দৃশ্য দেখি..

20200702_042624.jpg


ভোর হতে না হতেই মোরগ কক-কক.. কক-কক.. করে ডাকা শুরু করল, আর ঘুম ভেঙ্গে গেল। মেজাজটা খারাপ। আমার একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস। শুয়ে থাকতে পারলাম না। মুরগির ডাক, গরু ছাগলের ডাক আর মানুষের শব্দ... এর মধ্যে শুয়ে থাকা যায় না।

20200702_042734.jpg

উঠে গেলাম। এরপর আরেক যন্ত্রনা। শহরে বেসিনে আয়নার সামনে ব্রাশ-পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজি প্রতিদিন। কিন্তু এখন নাকি কল চেপে পানি তুলে নিমের মাজন অথবা ছাই দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে হবে! তাও মেনে নিলাম।

নাস্তা হিসেবে আসলো গরম পিঠা। খেতে ভালই লাগলো। যদিও ধোঁয়ার গন্ধ লাগছিল। একটু পর গোসল করব। গেলাম লুঙ্গি নিয়ে পুকুরে। খালি গায়ে সবার সামনে খোলা পুকুরে এভাবে গোসল করতে কিছুটা অস্বস্তি লাগে। তার উপর পানি ঘোলা এবং শ্যাওলা জমে থকথকে সবুজ হয়ে আছে।

20200702_042924.jpg

এদিকে আবার আমি সাঁতার পারি না। পিছলা ঘাট পায়ের নখ দিয়ে খামচে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ পিছলে গেল পা। আর আমি চলে গেলাম পুকুরের মাঝখানে। ডুবে যাচ্ছি। অথচ সবাই হাসাহাসি করছে। আমাকে তোলার নাম নেই! আমি মরে গেলে যেন কিছুই হবে না!

বেশ কয়েক ঢোক পানি খাবার পরে কে একজন আমাকে টেনে তুললো। পা ছিলে গেছে। একজন কোথা থেকে কতগুলো বন্য পাতা এনে তার রস আমার পায়ে লাগিয়ে দিলো। শুরু হল জ্বলুনি। সে কি ব্যথা! লজ্জায় না পারছি কাঁদতে, না পারছি দাঁতে দাঁত ঘষে সহ্য করতে!

একটু পরে দুপুর হয়ে গেল। খেতে বসলাম। মাটিতে বসতে হয় পাটি বিছিয়ে। খাওয়া শুরু করেছি। মোটা চালের ভাত দিয়ে মাছ। দেখি ভাতের মধ্যে কেরি পোকা। কয়েকটা পাথরও কামড় পরলো।

দুপুরে খাওয়ার পরে শুয়েছিলাম। চিতকারে লাফিয়ে উঠলাম। গুয়ে দেখি, ঝগড়া লেগেছি এ বাড়ি আর ও বাড়ির মহিলারা। সে কি ভয়ংকর ঝগড়া!

fight-2134407_1280.jpg
Source

কোমড় বেঁধে নেমেছে এরা। গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে মুখের ভাষায় শুনলে। আর সেগুলো বিশ্লেষণ করতে গেলে তো মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। মনে হয়- উপর থেকে আকাশটা সরে গেছে..

ঝগড়ার বিষয়বস্তু হয়ত একটা আম কুড়ানো নিয়ে... অথবা কার মুরগি কার ধান খেয়ে ফেলেছে... অথবা কার বাচ্চা কার বাচ্চাকে মেরেছে... এরকম কোন কারণ। এপাশ-ওপাশ করলাম। আওয়াজে, চিৎকারে ঘুম আর হলো না।

20200702_042704.jpg

বিকালে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। গিয়েছিলাম হাটে। আসার সময় কাদায় জুতো প্যান্ট ভরে গেছে। মেঠো রাস্তা। একটু বৃষ্টিতেই কাদা-কাদা হয়ে যায় একেবারে। বাড়ির কাছাকাছি আসার সাথে সাথেই পিছলে পরলাম। আজকে কপালটাই মন্দ!

images (15).jpeg
Source

দেখি কতগুলো ছোট ছোট লেংটা ছেলে দাঁত বের করে হাসছে। দিলাম ধমক। ভয় পাওয়ার নামগন্ধ নেই। বরং তারা মজা পেয়েছে। আমার পেছনে পেছনে আসা শুরু করেছে। আর স্লোগান দিচ্ছে- দাদাভাই আইজ্জা, গইজ্জাই গইজ্জাই পইজ্জে..

মিছিলের সামনে শিরোমণি আমি। নিজেকে নেতা নেতা মনে হচ্ছে কখনো কখনো মিছিলে শিরোমনি হওয়াও যে এতটা বিব্রতকর হতে পারে, আগে কখনো বুঝিনি।

সন্ধ্যা হতেই এখানে অন্ধকার নেমে আসে। হারিকেন বাতি জ্বালালে হাজারো রকমের পোকা এসে ভন ভন করে। এ আরেক বিরক্তিকর অবস্থা!

pexels-photo-316681.jpeg
Source

গ্রামের মানুষ তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে যায়। খেতে বসেছি। দেখি- আলোর কাছে উড়ছে পোকা। মাঝে মাঝে প্লেটে এসে পড়ে। ঘিনঘিন লাগে। এভাবে খাওয়া যায়!

খেয়ে না খেয়ে উঠে গেলাম। ঘুমোতে যাবার পালা। শুয়ে আছি অনেকক্ষণ ধরে। ঘুম আসে না। বাইরে হাজার রকমের অদ্ভুত সব শব্দ। ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ, ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ, চিকার ডাক, টিকটিকির টিক টিক.. সব মিলে কেমন ভুতুড়ে পরিবেশ! হঠাৎ ভয় ভয় লাগছে! ভাবছি কাল ভোরেই শহরের ট্রেন ধরবো..

images (16).jpeg
Source


আমাদের মত ডিজিটাল প্রজন্মের শহুরে মানুষরা এক দুই দিনের জন্য গ্রামে গিয়ে থাকা খুব উপভোগ্য। এর বেশি হলে...

20200627_034755.jpg


আত্মকথনঃ

poster_1593196763985_rd7uzi0du0.gif

আমি ত্বরিকুল ইসলাম
সখের বশে ব্লগিং করি। ইদানীং কিছুটা আঁকাআঁকি শিখার চেষ্টা করছি।
Hive: @tariqul.bibm
3speak: tariqul.bibm

"পড়াশোনায় ইঞ্জিনিয়ার। পেশায় শিক্ষক। নেশায় লেখক। সাবেক ব্যাংকার। পছন্দ করি লিখতে, পড়তে, ভ্রমণ করতে এবং জমিয়ে আড্ডা দিতে।"

        জীবনটাকে অনেক অনেক ভালোবাসি
H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
5 Comments
Ecency