বাংলায় সুন্দর করে গুছিয়ে লেখা কখনো হয়ে ওঠেনি। তবুও আজ খানিকটা চেষ্টা করে দেখা। গদ্য-পদ্য রচনা আমায় দিয়ে হবে না, তবে সাধারণ গোছের কিছু একটা বের হয়ে আসবে আশা করি - সাধারণ গোছের বলতে, অন্য দুই চার জনে যেভাবে লেখে সেভাবে। আমি বরাবরই বলি, আমি বড়ই এ্যাভারেজ - তাতে অবশ্যই দোষের কিছু নেই।
আমি এ্যাভারেজ না হলে তুমি উত্তম হবে কিভাবে?
বোঝা হল না? খুবই ছোট্ট বিষয়। কারও উত্তম হতে হলে, কাউকে সাধারণ হতে হয়। এবং সত্য বলতে, উত্তম লেখক কম দেখলাম না – এদের তুলনায় আমি বড়ই সাধারণ। এই যে আমাদের কার্তিক কি সুন্দর বাংলা লেখে – বাংলায় সুন্দর শাপও দেয়। আছে আবার সিনেমাখোর ভেড়াবেশি মুরগীবাবু – তার বাংলার দৌড়ের কথা নাই বললাম – সেই যে গোপালের পোড়া কপালের গল্প আজ অবধি সার্ভারে ঘুরে বেড়ায়। আছে ওদিকে নেত্রি যে কিনা কিছুদিন আগেই একটা কবিতা লিখে ফেললো বাংলায় এবং সব সময় বলে বেড়ায় আমি পারি না, আমি পারি না, আমি কিছুই পারি না - মার খাবি। আমাদের গেগে-এর কথা যে কি বলবো – যত্ত দোষ নন্দঘোষ, এখন ওনাকেই ঘোষবাবু বানিয়ে এই বাংলা লেখার আমার পিনিক তার ঘাড়ে প্রথম চাপালাম। দ্বিতীয় ঘোষ হল নেত্রি। এখন আমিও বসেছি ২-৪ লাইন লিখে ফেলতে। এই যে এখন লিখছি তাতে মনে হচ্ছে ইংরেজিতে লিখে সেটা deepl এ ট্রান্সলেট করে লেখা।
বাংলা লেখা পারি না, এই মিথ্যা বলবো না। অ, আ, ক, খ সব শেখা হয়েছে, বাংলায় গরু রচনাও লেখা হয়েছে – কিন্তু ও সব পানিতে ভেসে গেল যবে ইউনিভার্সিটিতে পা দিয়েছি। বাংলা সব বইয়ের বদলে, ধরেছি ইংরেজি বই। ইংরেজিতে তখন বড্ড কাঁচা ছিলাম। লিখতে গিয়ে ব্যাকরণে খুব ভুল হত না কিন্তু একটা লাইন বলতে ৩ বার আমতা আমতা করতাম। এখন, এই বাংলা, ইংরেজি এবং বাংরেজি “টাগ অফ ওয়ার” খেলতে খেলতে “না ঘর কা, না ঘাট কা” হয়ে রইলাম – অনেকটা “দুই নৌকায় পা দেয়ার” মতো অবস্থা যেখানে নৌকাদ্বয় যার যার পথে চলিছে আর আমি মাঝ পুকুরে হাবুডুবু খাচ্ছি। গেল জলে “ওই আমাদের তাল গাছ” গেল সেই “My Aim In Life” রচনা।
কি করলাম, কি করলাম, হায়! এইম ইন লাইফ রেল-চুত্য হল।
আজ চিন্তা করলাম “যাহ, লিখেই ফেলি কিছু একটা" কিন্তু অনেক চিন্তার পরও মাথায় এলোনা কি লেখা যায়। কিছু সাধু চলিত শব্দ মিশিয়ে জগাখিচুড়ি বানিয়ে লেখা একটা তৈরী করছি বাংলায় আমি কত পারদর্শী তা নিজেই যাচাই করার জন্য। বাংলায় লিখি না, কারণ লেখা খুবই সাধারণ। সবাই অল্পস্বল্প পছন্দ করে বলে কেউ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলবে না ”এই যে, এখানে বানান ভুল, ঐ যে ওখানে ভাষার দূষণ করেছো”। এই বানান নিয়ে হলো যত মাথাব্যাথা, কোথায় বসে ণ আর কোথায় ন আরও আছে স, শ এবং ষ গবেষণা। আর এরচেয়েও বড় যন্ত্রণাদায়ক হল মামা “চন্দ্রবিন্দু” – এই শালার ভাইয়ের মামা কোথায় বসে আর কোথায় বসে না বোঝা দায়। এখন এই চান্দার পিছে মাথা ঘামাবো না। এরপরও লোকে এই ছোট্ট প্রয়াসের জন্য ভালো বলবে।
বায়াস্ড লোকে কি বলে তা শুনবেন না। আপনাকে পছন্দ করলে ভালো কথাই বলবে।
কাল নেত্রি বলছিল আমায়,"মেডুসা তুমি বায়াস্ড, তুমি ভালই বলবা।" হ্যাঁ রে? আমি বায়াস্ড তো কি হয়েছে? কথার দামই রইল না? রাগ করলাম, কাট্টি নিলাম।
ডিম কে পাত্তা দেয়া হলো না - দিস ইজ এ স্টেট্মেন্ট।
বর্তমানে, বাংলা লেখা বলতে অফিসিয়াল নোট এবং চিঠি ছাড়া কিছুই লেখা হয় না। ঐ যে সেই নোট গুলো যার প্রথমেই লেখা হয় “আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে” এবং শেষ হয় “সদয় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলো”। হ্যাঁ, অফিসিয়াল নোট। আশা করি আপনাদের কোন দিন তা যেন লিখতে না হয়। এখানে বাংলা টাইপের জন্য সবাই বিজয় ৫২ ব্যবহার করে, আর আমি ফাঁকিবাজির অভ্র চালাই - কতো যে বকা খাই। বিজয় আর অভ্রর বড় সংঘাত – বিজয় বলে “শৃঙ্খলার মধ্যে থাকো” আর অভ্র বলে “বাহ রে, লিখতে সুবিধা আগে না তোমার বিশৃঙ্খলা আগে।” যাকগে, ওসব অনেক প্যাড়াদায়ক। একটা চিঠি লিখলে সেটা অন্তত ১০ বার সংশোধন করা হয়। সাধু-চলিত তাঁরা গোঁজামিল দেয় না এমন না, কিন্তু তাঁরা বছর কে বছর এই দাপ্তরিক গাঁজাখুরি লিখছে আর আমি সবে গুটি কয়েক বছর ধরে লেখি – আমি কি ওসব দাপ্তরিক বৈসাদৃশ্য কিছু বুঝি? নিতান্ত সাধারণ আমি। অবশ্য মুরগীবাবু বা কার্তিককে দিলে বোধয় তারা ভালই লিখতে পারবে।
এই দাপ্তরিক জ্বালা বুঝি খুব তাড়াতাড়ি মিটবে, তা বোধোদয় হয়।
বলবো না আমি পারি না – কিন্তু আমি সাধারণ, এটাই সত্য। সাধারণ হওয়ার মধ্যে কিছু ভালো আছে। আমি খুব ভালো লেখি না, কিন্তু খারাপও লেখি না। ব্যাকরণে একটু আধটু ভুল আজও হয়। বিশ্বাস করেন, অফিসে যখন কেউ ভুল দেখিয়ে দেয় একটু খারাপ লাগে, কিন্তু আপনারা ধরিয়ে দিলে গায়ে লাগবে না। সকল সামঞ্জস্যহীনতার জন্য আখিরে ক্ষমাপ্রার্থী।
দয়া করিয়া "নাইস পোস্ট" লিখবেন না।
বিঃদ্রঃ ছবিরে কিয়ের তে কি বানানির লাই আমি নিজে দায়ী।
Source: মুই মেডুসা