বাজার নিয়ে বিড়ম্বনা

মাসের শুরুতেই মায়ের পেনশন একাউন্টে ঢুকার সাথে সাথেই টাকা তুলে নিই। পেনশনের টাকা দিয়ে মাসের মুদির বাজারটা করেই ফেলি। মা একটা লম্বা ফর্দি দিয়ে কইলো এইসব নিয়ে আয়। আমাদের আবার চাল কিনতে হয় না। বাসায় টুকটাক যা চষাবাদ করা হয় তা দিয়েই চালের চাহিদা মিটে যায়। দোকানে গিয়েই চাল বাদ দিয়ে ডাল চা চিনি আটা তেল সব কিছুর দাম জিজ্ঞাসা করলাম। সব গুলোর দাম শুনে যা মনে হইলো তাতে আর রেহাই নেই।

দোকানদার কে বললাম লিস্টে তেল বাদ দিয়ে যা যা আছে সব দাও। দোকানদার একটু চোখ উপরে তুলে ভাই তেল নেবেন না!

আমি একটা আধ মন ওজনের হাই তুলে বললাম বেশি দেওয়ানীগিরি করতে হবে না। যেটা বলছি সেটাই কর। আমি ততক্ষনে সবজি বাজার করে আসতেছি।

সবজি বাজারে ঢুকতেই ক্রেতাদের আহাকার স্পষ্ট লক্ষ করা যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যে চান্দের দেশে যাওয়ার উপক্রম। ফুলকপি চোখে পরলো। একটু সখ জাগলো ফুলকপি নিব। কিন্তু সাইজের সাথে দামের মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সিম গুলো আমার দিকে তাকিয়ে ছিল দাম করার সাহস পাই নিই। কাচা মরিচ ২০০ টাকা ভাগ্যিস ৩০০ বলে নাই। কিছুদিন আগে ৩০০ টাকা কাঁচা মরিচ কেনার সৌভাগ্যও আমার হয়েছিল। যাক অল্প কিছু সবজিতেই পাঁচ শত টাকা বিল হয়েছে।

সবজি বাজার হতে কোন মতে বার হয়ে একটু মাছের বাজারে ঢুকলাম। মাছের বাজারে রীতিমত আগুন। কেজিতে কমপক্ষে সব গুলোতেই ১০০ টাকা বেশি। দেড় দুই কেজির একটা নাদুস নুদুস রুই মাছ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। দাম চাইলো ৫০০ টাকা আমি আর কিছু বলার সাহস পাইলাম না। আমাদের গরীবের জাতীয় মাছ পাঙ্গাস আর তেলাপিয়া নিয়েই হয়তো ক্ষান্ত হতে হবে।

একটু মুরগির দিকে নজর দিলাম। এতোদিন দেশি মুরগী কিনতে না পারায় সান্তনা দিতাম নিজেকে পাকিস্থানী কক আর দেশি মুরগীর মধ্যে পার্থক্যই কি। এখন তো দেখি গরীবের দেশী মুরগী নামে খ্যাত কক মুরগী ৩০০ টাকার উপরে। ধুর ব্রয়লার আর কক মুরগীর আর পার্থক্যই বা কিসে। সাদা আর লাল এটাই তো শুধু পার্থক্য। রং আর কি আসে যায়। পেটে গেলে তো সবেই এক।

মুরগী নিয়ে ঘুরতেই চোখে পরলো গরুর রান গুলো ঝুলছে। ফট করে চোখটা নিচে নামিয়ে নিলাম। এদিকে তাকানোর মত সাহস নাই আমার। একটু হাফ ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের দিকে চায়ে রইলাম আর পদ্মা সেতুর পিলার গলো দেখার চেষ্টা করতেই পদ্মার দশ নাম্বার পিলার কইলো ভাই আমারে ক্ষমা করেন মাফ চাই আমারে কিছু বইলেন না। আমি তো শুধুমাত্র উন্নয়নের খাম্বা।

মুদির দোকান হতে সব কিছু নিয়ে চললাম বাড়ি। বাসায় কোনমতে ব্যাগটা রাখে বেড়িয়ে পরলাম। মহল্লার একটা দোকানে গিয়ে আয়েসে বিড়ি ধরাইলাম। ওমনি মায়ের ফোন। আমি অবশ্য বীর পুরুষের মত ভাব দেখিয়ে ফোনটা ইগনর করলাম। জানি মা নিশ্চয়ই তেলের কথা বলবে।

বাসায় ঢুকতে মা সামনে হাজির। তেল কই? একটা লিস্ট দিছি তবুও দেখে শুনে আনতে পারিস না। কতদিন এভাবে চলবি। তেল ছাড়া রান্না হবে কি করে। আমি কোন কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে সোজা রুমে গিয়ে টিভি চালু করে দিয়ে চেক করে নিলাম ঠিক আছে কিনা। না টিভি ঠিক আছে। এখন বড় সড় এইটা ড্রাম ম্যানেজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন শুরু হলে টিভির নিচে ড্রামটা রাখলেই এক বছরের জন্য তেল জমা হয়ে যাবে। আর যদি মজা বাবু আর ফারজানা রুপাকে কচলে দেওয়া যায় তাহলে তো কথায় নেই।

আমি অবশ্য এই বুদ্ধিটা মায়ের সাথে শেয়ার করি নিই। মেয়ে মানুষের বুদ্ধি নাকি হাঁটুতে থাকে। তাছাড়াও সব কথায় যে বলতে হবে এমন কোন কথাও তো নেই।

images (3).jpeg
Source

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
1 Comment
Ecency