This content was deleted by the author. You can see it from Blockchain History logs.

কিছু বিছিন্ন প্রশ্ন

[আমি জানি না কেন আমার বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে। যেসব বিষয় আমাকে ভাবায় না তা আমাকে টানে না। এই পোস্টের বেশিরভাগ বাক্যই প্রশ্ন। বিচ্ছিন্নভাবে আমার মনে বিভিন্ন সময়ে এসেছে।]

১।
জীবনকে অর্থহীন ও উদ্দেশ্যহীন বলা অনেকের জন্যই কঠিন। বেশিরভাগ মানুষই এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে না যে জন্মালাম, কিছুদিন বেঁচে থেকে আবার শূন্যে মিলিয়ে গেলাম। আমাদের পরমাণু ভেঙে দিগ্বিদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো। তৈরি করছে অন্য কোন মানুষ, জন্তু বা বস্তুকে। আমি জানি যে এই বিষয়ে বহু জ্ঞানীগুণী অনেক কথা বলে গেছেন। আমি তার প্রায় কিছুই জানি না। নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সবাই-ই কমবেশি ভাবে মাঝে মাঝে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। কখনও কখনও আনমনে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকি, সবকিছু কেন যেন ফাঁকা লাগে। রাতের অন্ধকারে ছাদে বসে যখন তাকাই তখন দূরের হাইওয়ের গাড়িগুলোর হেডলাইটের আলোয় আমার চোখ ধাঁধিয়ে যায়। যতো রাতই হোক না কেন তাদের দেখা যায়। যে যার কাজে যাচ্ছে বা বাড়ি ফিরছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ফিরবে আবার অনেকেই ফিরবে না। পড়ে থাকবে নাম না জানা কোনো মর্গে লাশ হয়ে।

২।
২০১৪ সালে পেট্রোলবোমা হামলার ভয় বুকে নিয়ে বাসে চড়তাম প্রতিবার। বারবার এদিক ওদিক তাকাতাম কখন জানি ছুড়ে মারে পেট্রোলবোমা। পেটের দায়ে বাসে চড়তে হতো কমপক্ষে দুইবার। প্রতিবারই নতুন বৌ এর মুখটা ভেসে উঠতো চোখে (বিয়ের তখন মাত্র ২ মাস)। ভাবতাম, মরে গেলে কি সে কাঁদবে? হাস্যকর কথা! অবশ্যই কাঁদবে। আবার কিছুদিন পর ভুলেও যাবে। দু'মাসে আর কতোটাই বা ভালোবাসা যায়? বাসায় এসে আর এসব ঝুঁকির ব্যাপার ওকে বলতাম না। লাঞ্চের সময় আর ছুটির সময় দুবার ফোনে কথা বলতাম, এই যথেষ্ট ছিলো।

৩।
ধর্মীয় দৃষ্টিতে জীবনের উদ্দেশ্য অবশ্যই আছে। পরকাল একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সেখানে। জীবনের প্রায় সকল কিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় পরকালকে কেন্দ্র করে। পরকালের উপর এই যে বিশ্বাস তা মানুষকে আশা দেয় যে এই জীবনই শেষ নয়। এখানে সৎকর্ম করলে মৃত্যুর পর অনন্ত সুখের জীবন অপেক্ষা করছে, আর পাপ করলে ভয়ানক শাস্তি। এই যে অনন্ত সুখের স্বর্গ, এটার আশায় অনেকে সুন্দর জীবন-যাপন করেন। আমি ভাবি, এটা থাকাটা কি জরুরি ছিলো? কেন মানুষকে ভয় দেখিয়ে উপাসনা করাতে হবে, আর কেনই বা লোভ দেখাতে হবে? স্বর্গের মতো লোভনীয় জিনিস দিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তা কেন তার সৃষ্টিকে তাঁর উপাসনা করতে বলবেন? আর কেনই বা নরকের ভয় দেখাবেন? মহান ঈশ্বর কি নারীর স্বল্প পোশাকে রাগান্বিত হতে পারেন?

৪।
আমি বুঝি না, মানুষ পরকালের সাজাকে যদি এতোই ভয় পায় তাহলে এতো অনিয়ম, দূর্নীতি আর অসঙ্গতি কেন আমাদের চারপাশে? কারও ধর্ম তো আর দূর্নীতি করতে বা লোক ঠকাতে বলে না। তবে কেন এতো ধর্মের লেবাসধারী চোরে এই দেশ ভরে আছে? কেন ধর্ষনের প্রতিবাদ নাই, কেন ঘুষ-দূর্নীতির প্রতিবাদ নাই কেন পচে যাওয়া শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নাই, কেন দ্রব্যমূল্যের পেছনের কারসাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নাই? অথচ সুদূর ফ্রান্স বা ডেনমার্কে কোনো এক ম্যাগাজিনে ব্যঙ্গচিত্র আঁকার প্রতিবাদে সারাদেশ কেঁপে ওঠে! ভারতের এক নারীর মন্তব্যের প্রতিবাদে মানুষ নাওয়া-খাওয়া ভুলে রাস্তায় নেমে পড়ে! ব্যঙ্গচিত্র আঁকার কারনে কি ধর্মের কিছু যায়-আসে? যদি ব্যঙ্গচিত্র আঁকলে কোনো ধর্মের ক্ষতি হয় তাহলে সে ধর্ম কতোটা শক্তিশালী? যদি সামান্য মানুষের আঁকা ব্যঙ্গচিত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রবর্তিত ধর্মের ক্ষতি করে ফেলে তাহলে সেটা একটা হাস্যকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় না?

৫।
আবার অনেকেই মনে করেন সব সমস্যার সমাধান ধর্মগ্রন্থেই আছে। যদি তাই হয় তাহলে নতুন জ্ঞানের চর্চা করবেন কিভাবে? আপনি তো ধরেই নিচ্ছেন জগতে আর নতুন কিছু যোগ করার দরকার নাই, সব তো ধর্মগ্রন্থেই আছে। ধর্মগ্রন্থে অনেক কিছুই আছে সত্য। কিন্তু সেটা একটা নির্দিষ্ট সময়কে টার্গেট করে লেখা। ধর্মগ্রন্থে লেখা সকল আদেশ নিষেধ একটা নির্দিষ্ট সময়ের মানুষের জন্য উপযোগী ছিলো বলে বর্তমান সময়ে এসেও খুব কার্যকর হবে? পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার ভূ-প্রকৃতি আলাদা, মানুষ আলাদা, সংস্কৃতি আলাদা। একটা বই কেমন করে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের জন্য উপযুক্ত হয়? সেইক্ষেত্রে কি আমাদের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার না?

৬।
আবার কেউ যদি ধর্মগ্রন্থের অবমাননা করে তাহলে কি ধর্মের ভিত নড়ে যায়? ধর্মগ্রন্থ তো কাগজে ছাপানো একটা বই মাত্র। এটা কেবল একটা মাধ্যম। সেই বইয়ে কী লেখা আছে সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত ছিলো না? কতোজন মানুষ আজ সেসব বই অর্থ বুঝে পড়ে? তারা আজকাল ধর্মগ্রন্থ পড়ার চেয়ে বরং ধর্ম ব্যবসায়ীদের কথা শুনতেই বেশি আগ্রহী ঠিক যেমন করে গুগলে সার্চ করে কোনো জিনিস পড়ার চেয়ে ইউটিইবে সার্চ করে শুনে নেয়ার মতো হয়ে যায় ব্যাপারটা?

এসব প্রশ্ন নিজের কাছেই নিজে করি। ভেবে পাই না, আমিই ভুল ভাবছি নাকি অন্যরা ভুল ভাবছে। আর বলবোই বা কাকে? আমাদের দেশে সব সময় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকেই প্রাধান্য দেয়া হয় বেশি। ছাত্র-ছাত্রীরা মাঝে মাঝে অনেক প্রশ্ন করে, সঙ্গত কারনেই এড়িয়ে যেতে হয়, না জানি কে কী ভেবে বসে আর কে-ই বা ফোনে ভিডিও ধারণ করে মিছিল বের করে ফেলে। এমন এক সময়ের ভেতর দিয়ে আমরা যাচ্ছি যে সময় মানুষের চিন্তাশক্তিকে একদল মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা যদি খোলামনে চিন্তা না করতে পারে তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোথায় যাবে? সারা বিশ্ব আজ কোথায় চলে গেছে আর আমরা কোথায় পড়ে আছি! মাঝে মাঝে খুব হতাশ লাগে। মানুষ আজকাল আর কথার জবাব কথা দিয়ে দিতে চায় না। প্রশ্নের জবাবেও লাঠি/রামদা দেয়। কিন্তু লাঠি/রামদা বা চাপাতি দিয়ে তো আর মানুষের চিন্তাকে থামানো যায় না।