আমরা সবাই জীবনে যে যা কিছু করছি না কেনো সবি নিজেদের "ক্যারিয়ার" গড়ার জন্য করছি।তাহলে এই ক্যারিয়ার মানেই বা কি! আর এই যে জীবন মানেই বা কি!
আজকে একটা সেশনে অংশগ্রহণ করেছিলাম, সে সেশনে যে মূল বক্তব্য পেশ করেন ওনি একজন সফল ডাক্তার।আমাদের দেশীয় মানদণ্ডেতো বটেই এমনকি সত্যিকারের মানদন্ডেও।একজন ডাক্তার ভালো নাকি মন্দ এটা আমাদের দেশে কিভাবে নির্ধারণ করা হয়?আমাদের দেশে এটা নির্ধারণ করা হয় শুধুমাত্র তার নামের পিছনে কতগুলো ডিগ্রি আছে এর উপর ভিত্তি করে।তো যে ভাইটি মূল আলোচনা করেছেন ওনার নামের পিছনে BCS,FCPS ,MRCP এর মতো ডাক্তারী জগতের বড় বড় ডিগ্রি রয়েছে।তো এই হিসাবে তিনি সফল।
তাহলে ডাক্তার কত উচ্চ পর্যায়ের এটা নির্ধারণ করার সত্যিকারের মানদণ্ডটা কি,সত্যিকারের মানদন্ড হচ্ছে,একজন ডাক্তার রোগীর সাথে কতটুকু আন্তরিক,মানে রোগীর রোগ নির্ণয় তিনি কত দ্রুত করতে পারেন এবং তার কতো সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেন।এইদিক দিয়েও ওনি অনেক ভালো একজন ডাক্তার।তিনি যেমন ভালো চিকিৎসক,তেমন ভালো শিক্ষক এবং তেমন ভালো বাগ্মী এবং ধর্মীয় বিশ্বাসেও সে উচ্চমানের।
তিনি আজকে আমাদের এতো সুন্দর করে ক্যারিয়ার আর জীবন সম্পর্কে বুঝালেন যে আমরা মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
আচ্ছা তাহলে মূল বিষয়ে আসি,প্রথমেই ওনি কথা শুরু করলেন এই প্রশ্ন দিয়ে যে ক্যারিয়ার মানে আসলে কি।ক্যারিয়ার বিষয়ে কথা বলতে হলেতো এটা সম্পর্কে আগে জানতে হবে।তো আমাদের একেকজন একেক উত্তর দিলো।আমাদের কেউ বললো,ক্যারিয়ার মানে পেশাগত জীবন,কেউ বললো ক্যারিয়ার মানে সামাজিক জীবন,আবার কেউ বললো আমাদের পুরো জীবনে চলার রাস্তা হচ্ছে ক্যারিয়ার।তখন তিনি জীবন মানে কি জিজ্ঞেস করলেন।একেকজন একেকউত্তর দিলো।এই যে আমরা বেঁচে আছি,চলাফেরা করছি,খাচ্ছি-দাচ্ছি,ঘুমাচ্ছি এটাই জীবন।একজন উত্তর দিলো,জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে সময়টা সেটাই জীবন।আবার কেউ বললো,জীবন মানে সময়।
হ্যাঁ জীবন মানে আসলেই সময়।এক দার্শনিক বলেছিলেন,"ঘুম এবং ঘুম তার মাঝখানের সময়টাই জীবন"।এটার ব্যাখ্যাতে বলা যায়,এক ঘুম থেকে উঠা হচ্ছে জন্ম আরেক ঘুম হচ্ছে মৃত্যু। তো এইদুই ঘুমের সময়টা জীবন।আবার এর ব্যাখ্যা এটাও হতে পারে যে,এইযে আমরা প্রতিদিন ঘুমাই,তো এই এক ঘুম থেকে উঠার পর থেকে আরেকবার ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত যা করি তাই জীবন।তো এই জীবনটাকে আমরা কিভাবে সুন্দর মতো গড়ে তুলতে পারি!
কেউ যদি ভাবে আসলে ক্যারিয়ার মানে হচ্ছে আমি এখন পড়ালেখা করছি বা একটা কাজ শিখছি,শিখার পর ঐটার মাধ্যমে আমি টাকা-পয়সা উপার্জন করবো আর জীবনধারণ করবো।এটা ভাবলে তার মন খুবি সংকীর্ণ।ক্যারিয়ারটাকে জীবনের সবদিক দিয়ে বিবেচনা করে ভাবতে হবে।শুধু টাকা-পয়সা উপার্জনই ক্যারিয়ার হতে পারে না।
আমরা যারা শিক্ষার্থী রয়েছি,বিশেষ করে মেডিকেল শিক্ষার্থী।মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি চারটা মাত্রা( Dimension) বললেন যেগুলোকে ঠিকঠাক মতো ভারসাম্য করে চলতে পারলে আমাদের ক্যারিয়ারটা হবে সর্বোত্তম।অবশ্য শুধু মেডিকেল শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থী না সবার ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।
প্রথম মাত্রা হচ্ছে, জ্ঞানার্জন।শিক্ষার্থীদের জন্য
সেটা প্রাতিষ্টানিক পড়ালেখা বা যেকোনো ধরনের পড়ালেখা হতে পারে।যারা প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা করে না, তাদের জন্যও জ্ঞানার্জন করা অপরিহার্য।তারা যে বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চায় সে বিষয় সম্পর্কেতো জ্ঞান অবশ্যই থাকা লাগবে।যে যত বেশি জানবে তত বেশি তার জন্য উপকার।আর মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার জন্য কি করতে হবে?বই(টেক্সট বই) এর প্রত্যেক লাইনের প্রত্যেকটা শব্দ বুঝে বুঝে পড়ে মনে রাখতে হবে।আর কিছু না, সবসময় এটাই করতে হবে,তাহলেই হবে।
দ্বিতীয় মাত্রা হচ্ছে সমাজ এবং পারিবারিক জীবন।শুধু পড়ালেখার বা জ্ঞানার্জনের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ হলেই তো হবে না,মানুষের জীবনের একটা অনেক বড় অংশ জুড়ে রয়েছে তার পরিবার,তার সমাজ।সুতরাং পরিবার এবং সমাজের প্রতি যে দায়িত্ব আছে সেগুলো পালন করতে হবে।পরিবারের সে যে অবস্থানে আছে সে অবস্থান থেকে যতটুকু করা যায় ততটুকু করতে হবে,পরিবারের যাদের উপর আমরা দায়িত্বশীল তাদের সব কিছুর দায়ভার আমার।সুতরাং তাদেরকে সঠিকপথে পরিচালনা করা আমাদের দায়িত্ব।আর সমাজের যেসব মানুষের কাছে আমরা পৌঁছাতে পারি তাদেরকে সঠিক জ্ঞান,জীবনের সঠিক মানে বুঝাতে হবে।কারণ শুধু নিজে আর নিজের পরিবারকে সঠিক পথে রেখে যদি সমাজকে অন্ধকারেই রাখাকে আমরা কোনো সমস্যা বলে মনে না করি,তাহলে সেটা হবে বড় মূর্খতা।তাই আমাদের সামর্থ্য যতটুকু আছে সমাজের মানুষকে সঠিক জ্ঞান,ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।আর সমাজ, রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে যা যা দায়িত্ব আমাদের উপর আছে সেগুলো পালন করতে হবে।
তৃতীয় মাত্রা হচ্ছে অর্থনৈতিক।অনেকেই বলে যে তাদের জীবনে চলার জন্য কোনো অর্থের প্রয়োজন নেই।তারা হয় মিথ্যা বলে, না হয় তারা মূর্খতার স্বর্গের বাসিন্দা।হাতেগুণা কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকতে পারে,কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই জীবনে চলার জন্য অর্থ প্রয়োজন।দ্বিতীয় মাত্রাতে যে পরিবার আর সমাজের দায়িত্ব পালনের কথা বলা হলো,অর্থ ছাড়া কখনও সেটা পালন করা সম্ভব নয়।অর্থ না থাকলে সব কাজই কঠিন হয়ে পড়বে।এমনকি প্রথম মাত্রাতে বলা জ্ঞানার্জনও কঠিন হবে,অর্থ ছাড়া।সুতরাং কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায় সে রাস্তায় থাকতে হবে।
আর চতুর্থ মাত্রা হচ্ছে আধ্যাত্মিক(Spiritual)।ধর্মীয় নিয়মকানুন মেনে চলা।ধর্ম কখনও ব্যক্তি,পরিবার, সমাজ,রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে এমন কথা বলে না।নৈতিকতার সব বাণীই ধর্মগ্রন্থে রয়েছে।তাই ধর্মীয় জ্ঞান নিজে অর্জন করে তা মানতে হবে, এবং সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে মানার সুযোগ দিতে হবে।
এই চারটি মাত্রা যে পূর্ণরূপে মেনে চলতে পারবে,সে বিস্তীর্ণ অর্থে ক্যারিয়ারে সফল হতে পারে।তার ক্যারিয়ার হবে সবার চেয়ে উচ্চতর,তার জীবন হবে সবার সেরা।জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার সফলতা অনিবার্য।
আজকের এই সেশনের মূল আলোচক ভাইটি,জীবনে এই মাত্রাগুলোর প্রতি বিশ্বাস রেখেছেন আর এগুলো মেনে চলেছেন বলেই আজ তিনি জীবনে সর্বদিক দিয়ে সফল।আর্থিক দিক দিয়ে যেমন সফল,সমাজে সম্মান প্রতিপত্তির দিক দিয়ে তিনি সফল,পারিবারিক জীবনেও তিনি সফল।এই চারটি মাত্রার সম্মনয়েই আমাদের জীবনের ক্যারিয়ারও হতে পারবে সফল।