শিশু শিক্ষা

IMG_20210920_162509.jpg

বাংলা ভাষায় শিশুদের জন্য বর্ণমালা শেখার একটি বই সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৪৯ থেকে ১৯৫৩ সালের মধ্যে। বইটির নামকরণ করা হয়েছিল "শিশু শিক্ষা"। বইটির লেখক ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার মদনমোহন তর্কালঙ্কার। সেখান থেকেই শিশুদের বর্ণমালা শেখার পরিচিতি শুরু হয় ।

আমি শিশু বিশেষজ্ঞ বা মনোবিদও নই। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমার অমূল্য ধারণা গুলো তুলে ধরছি। আমি জানি এই ক্ষেত্রে আমি একেবারেই সঠিক হব না । কিন্তু আমি মনে করি বইয়ের বর্ণমালা শেখার আগেও শিশুদের এর বাইরে কিছু শিক্ষা রয়েছে। শিশুর জন্মের পর থেকে অনেকগুলো বছর বাবা-মায়ের ছায়াতেই বড় হয়। তাদের ভালোবাসা, আদর-সোহাগে কয়েকটি বছর শিশুদের কাটতে থাকে। বাবা-মার মাধ্যমে শিশুদের নিজেকে চেনার একটি আয়না তৈরি হয়।

সে-বয়সে শিশুদের নিজের নাম পর্যন্ত জানা থাকে না । শিশুদের কোন ধর্ম তখন তৈরি হয় না । যদি তাদেরকে এই বিষয়ে কোন কিছু জিজ্ঞেস করা হয়, সেটা হবে মূর্খতা। মানুষের গায়ের রং, আকাশের রং, সাদা কালোর তফাৎ তখনও শিশুদের মধ্যে তৈরি হয়নি। বাবা মায়ের বুলিতেই শিশু কথা বলা শেখা শুরু করে। বাবা মায়ের চোখ দিয়েই তারা নতুন পৃথিবীকে আপন করতে শুরু করে। তারা পিতা-মাতার মাধ্যমে বুঝতে পারে পুরোটা দিন যাওয়ার পর, রাত্রি নেমে আসে।

নিজের নাম থেকে শুরু করে, শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গর নাম পিতামাতার কাছ থেকে শিখে। নিজের পোষাক এর ব্যবহার এবং মানুষের প্রতি ভালো ব্যবহার সব কিছুই শুরু হয় পারিবারিক শিক্ষা থেকে। এই পরিচিত শেখানোর জন্য কোন পাঠ্যপুস্তক তৈরি হয়নি কখনো।

বাবা-মায়েদের এত বছরের বোধ , বুদ্ধিমত্তা, শিক্ষা সব কিছু দিয়েই নিজের সন্তানকে একটি মোড়কে চারিপাশে বেঁধে রাখে। বাবা মায়ের মন যতটা উন্মুক্ত থাকে, শিশুর শিক্ষা ও ততটাই অগ্রসর হয়। ছোটবেলায় ছোট বাচ্চারা অনেক বেশি প্রশ্ন করতে পছন্দ করে । তাদের মনের মধ্যে সবকিছু নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয় । আমাদের কাছে যেটা জানা, শিশুদের কাছে সেটা সবটাই অজানা । এই শিক্ষাগুলো শুধুমাত্র স্কুলের বই এ পাওয়া যায় এটা ভুল। শিক্ষাগুলো তার পরিবারের কাছ থেকে পায়। নিজের বাবা-মায়ের ব্যবহার, ভালোবাসা, সবকিছু দিয়েই তাদের এই শিক্ষাগুলোর দেওয়া হয়। যেটা আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া সম্ভব নয়।

পারিবারিক শিক্ষা সব সময় যে ভালোর দিকেই যায় এটাও আবার অনেক ক্ষেত্রে ভুল । বাঙালী বাবা-‌মায়েদের ‘‌চাবকে পিঠের ছাল তুলে দেব’-‌র গতানুগতি‌ক অভ্যেসে লাগাম টানতে হবে। আঘাত দিয়ে শিক্ষা সবসময় হয় না। তাকে বুঝতেও তো হবে তার ভুলটা ঠিক কোথায় ও কেন। তাই যাবতীয় বকাঝকা ইত্যাদির সঙ্গে তাকে শান্তভাবে আগে বোঝান যে সে কোন ভুল পদক্ষেপ উঠিয়েছে ও তার ফল কত খারাপ হতে পারে।

আবার অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখে থাকি পিতা-মাতার কারণে শিশুরা অনেক বেশি ভয় বেড়ে ওঠে। অনেকেই শিশুদের বারবার প্রশ্ন করাটা বিরক্তির সাথে নেয়। অনেকে চেষ্টা করে শিশুদের ছোট থেকেই কিছুটা শাসন করার। কারণ অনেকের ধারনা থাকে, শাসনে থাকলেই হয়তো বড় হলেও সে নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

শিশুরা ভুল করলে আপনি তাকে বলবেন এবং সে যদি সঠিক করে সেটায় সাবাসি দিবেন । পিতা-মাতার চিন্তাভাবনা যতটা উন্মুক্ত হয়। শিশুদের মনোবলও ততটাই উন্মুক্ত থাকে। শিশুদের এটাই বুঝানো সবথেকে বড় দরকার , শিশু কখনো পৃথিবীতে একা নয়। সে যেটাই করুক তার বাবা মা তার সাথে সব সময় থাকবে। আর এই শিক্ষা টাই প্রতিটা পরিবার তার শিশুকে দিয়ে থাকে । ভালো-মন্দের পার্থক্য , শ্রদ্ধা করা, ধার্মিক শিক্ষা সবকিছুই।

ছোটরা ঠিক শিখবে। শুধু আপনি তার ওপর থেকে বিশ্বাস হারাবেন না।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
2 Comments
Ecency