প্রথম প্রজেক্ট এর সুন্দর সমাপ্তি!

গত এক সপ্তাহে যে পরিমান কাজের চাপে ছিলাম, তাতে মনে হয় না যে আমার গত ২ বছরের চাকরি জীবনে এতটা চাপ ভোগ করতে হয়েছিল। এর আগে অবশ্য হেড অফিস থেকে সবকিছু অপারেট করতে হতো, তাই তেমন একটা কাজের প্রেসার ছিল না। ফ্যাক্টরির কোনো সমস্যা আমার ফেইস করতে হতো না। বরং ফ্যাক্টরির ভেতরের সমস্যা সমাধানের জন্য ফ্যাক্টরির ভেতরেই আরো অনেকে ছিল। তবে এবার নতুন চাকরিতে এসে সবকিছু যেন একেবারেই ভিন্ন হয়ে গিয়েছে।

এখন এখানে অফিস এবং ফ্যাক্টরির চাপ দুইটাই সামলাতে হচ্ছে। অফিসের ভেতর সময় দিব নাকি ফ্যাক্টরির ফ্লোরে সময় দিব, সেইটাই মাঝে মাঝে বুঝে উঠতে পারি না। তার উপর বায়ারের সাথে মিটিং, সাপ্লায়ারদের সাথে মিটিং সব মিলিয়ে প্রতিটা দিন আমার খুব ব্যাস্ততার মাঝেই কেটে যাচ্ছে। ফলাফল হিসেবে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে একই সাথে সবজায়গায় সময় দিতে গিয়ে আসলে কাওনো জায়গারই কাজ ঠিক ঠাক মতো হচ্ছে না। আর আরেকটা কথা, সত্যি বলতে কী, নিজেকে নিজেই এমুহুর্তে কোনো সময় দিতে পারছি না।

img_0.20454181322842446.jpg

প্রায় দুই মাস আগে আমি এই অফিসে জয়েন করেছিলাম। জয়েন করার পর অফিস এবং ফ্লোরের সবকিছু নিজের মতো করে গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমি সফল হয়েছি। কিন্তু একটা সমস্যা সমাধান করতে পারি নি। আর তা হলো ম্যানপাওয়ার। আমি যেমনটা আশা করেছিলাম, সেই অনুপাতে আমি ম্যান পাওয়ার যোগাড় করতে পারি নি। ফলে আমার কাজের গতি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক অনেক কম ছিল।

আর এই গতি কম থাকার কারণে এমুহুর্তে সবচেয়ে বেশি সমস্যা ফেইস করতে হচ্ছে। আগামী ২৬ তারিখ আমাদের বর্তমান অর্ডারের শিপমেন্ট ছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরেও আমি ২৬ তারিখ শিপমেন্ট দিতে পারব না। এই লেখাটা যখন লিখছি, তখন আমাদের ফ্লোরে ওভার টাইম ডিউটি করানো হচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত ৭৫% শিপমেন্ট এর কাজ আমি কমপ্লিট করতে পেরেছি। আমার আরো ২৫% কাজ বাকি রয়ে গিয়েছে। যা আগামী দুই দিনের মধ্যে শেষ করা কোনো ভাবেই সম্ভব না।

img_0.8859711486505281.jpg
BOYS PROGRAM: T - SHIRT

তো শিপমেন্ট এর নিয়ম অনুসারে আমরা শিপমেন্ট এর জন্য দুই থেকে তিনটা ডেইট পেয়ে থাকি। এর বেশি সময় লাগলে এলসি থেকে কিছু পার্সেন্ট ডিউস্কাউন্ট কেটে রেখে দেয়া হয় পেনাল্টি হিসেবে। আমাদের ইতিমধ্যেই ২ টা ডেইট পার হয়ে গিয়েছিল আর আগামী ২৬ তারিখ তৃতীয় ডেইট ছিল। কিন্তু আমাদের অদক্ষতার কারণেই হয়তো এই সময়ে এসেও আমরা শিপমেন্ট কমপ্লিট করে দিতে সক্ষম হই নি। ফলাফল হিসেবে ২৫% ডিসকাউন্ট পেনাল্টি হিসেবে কেটে নেয়ার ভয় মনের ভেতর তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ফলে এই কয়েকদিন আমি খুব বেশি প্রেসারে ছিলাম।

তবে আজকে বায়ারের সাথে মিটিং করার পর তারা আমাকে আরো ৪ দিন সময় বাড়িয়ে দিয়েছে শিপমেন্ট কমপ্লিট করার জন্য। এই চার দিন সময় আমার কাছে যে কী, তা আমি বলে বুঝাতে পারবো না। আজকে সকালেও আমি সবকিছুর চিন্তায় মুষড়ে পড়েছিলাম। তবে বায়ারের সাথে মিটিং শেষ করার পর বুকের উপর থেকে খুব ভাড়ি একটা পাথর যেন মুহুর্তের মাঝেই উধাও হয়ে গিয়েছিল। টানা ৪-৫ দিনের এত প্রেসার একটু হলেও আমার মাথা থেকে সরে গিয়েছিল। আমাকে যে সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, এই সময়ের মাঝেই যে আমি বাকি শিপমেন্ট কমপ্লিট করতে পারব, সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

img_0.5299666918391341.jpg
GIRLS PROGRAM: T - SHIRT

আজকের লেখায় আমার বর্তমান অর্ডারের গার্মেন্টস এর ডিজাইনগুলো শেয়ার করলাম সকলের সাথে। আমাদের এই অর্ডারটি ইতালিতে শিপমেন্ট করা হবে। সঙ্গত কারণেই আমি বায়ার এবং ব্র‍্যান্ড এর নাম এখানে শেয়ার করছি না। এই ডিজাইনগুলো যদিও আমাদের দেশের বেশ কিছু গার্মেন্টস এ ইতিমধ্যেই প্রোডাকশন করা হয়েছিল। তবে আমার জন্য এসব ছিল একেবারেই নতুন এক্সপেরিয়েন্স।

আমাদের এই অর্ডারটা মূলত দুইটা আলাদা প্রোগ্রাম হিসেবে ভাগ করা ছিল। একটা হল বয়েজ প্রোগ্রাম, অন্যটা গার্লজ। বয়েজ প্রোগ্রামের সবগুলো টিশার্ট হলেও গার্লজ প্রোগ্রামে টি শার্টের পাশাপাশি ট্যাংগ টপও ছিল। সাথে বটম হিসেবে প্যান্টস এবং ডিজাইনের সাথে মিলিয়ে মাস্কও প্রোডাকশন করেছিলাম আমরা। সব মিলিয়ে এই শিপমেন্ট ছিল ৪৫ হাজার সেটের। টপ, বটম এবং মাস্ক মিলিয়ে ১ সেট হিসেবে ধরা হয়েছে।

এটা মূলত বাচ্চাদের প্রোগ্রাম ছিল। ২ থেকে ১০ বছরের বাচ্চাদের জন্য এই গার্মেন্টস তৈরি করা হয়েছিল।

img_0.7147250392824422.jpg
GIRLS PROGRAM: TANG TOP

সবকিছু মিলিয়ে একটা বলতে পারি যে, যত সমস্যাই হোক না কেন, অবশেষে আমি আমাদের শিপমেন্টটা কমপ্লিট করতে যাচ্ছি। যদিও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ কিছু সময় আমার বেশিই লেগেছিল। এটা নিয়ে বেশ কয়েকদিন খুব বেশি চাপে থাকলেও আজকে আর তেমন কোনো চাপ নেই। সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলে ৩০ তারিখ রাতেই আমি সব কাজ শেষ করে ফেলতে পারবো।

img_0.6272070956127859.jpg

আর যেদিন কাজ শেষ হবে, সেদিন লম্বা একটা ছুটি নিব। কারণ এই শিপমেন্ট এ ম্যান পাওয়ার স্বল্পতার কারণে ফ্যাক্টরি প্রতি শুক্রবারেও চালু রাখতে হয়েছে। আর ফ্যাক্টরি চালু থাকা মানে আমারও অন ডিউটিতে থাকা। অর্থাৎ টানা একুশ দিন ধরে কোনো ধরনের হলিডে ছাড়া আমি এহং আমাদের অফিসের অন্যান্যরা টানা কাজ করে গিয়েছি। আরেকটা কারণ অবশ্য আছে। আর সেটা হল আমাদের নেক্সট শিপমেন্ট এর অর্ডারের কাজ শুরু করতে করতে অন্তত ২-৩ দিনের সময়ও পাওয়া যাবে মাঝখানে। সুতরাং, সুযোগ যেহেতু আছে, তাহলে তা কাজে লাগাবো না কেন?

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
1 Comment
Ecency