শৈশবের মারবেল খেলায়!

শৈশবে আমরা কত ধরনের খেলার সাথে যুক্ত ছিলাম, তা কখনো খেয়াল করেছেন? ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, ভলিবলের মতো বিদেশি খেলা থেকে শুরু করে দেশীয় কাবাডি, কানামাছি, এক্কাদোক্কা, মারবেল খেলা, বউছির, সাত চারা, ফাটাফাটির মতো আরো অনেক ধরনের খেলা খেলতাম। এগুলোর মাঝে সবগুলো নাম সকলের কাছে পরিচিত হলেও ফাটাফাটি অপরিচিত হবার কথা। তবে সাতচারা যারা খেলেছন, তাদের কাছে এই খেলার নিয়মটা কিছুটা পরিচিত মনে হতে পারে৷

ফাটাফাটি খেলার আসল নাম কী, তা আমি জানি না। ছোটবেলায় ফাটাফাটি হিসেবেই বলতাম। তবে কেউ কেউ বোম্বাস্টিংও বলত৷ এই খেলার নিয়ম হল একজন আরেকজনকে বল ছুড়ে মারতে হবে৷ টেনিস বল দিয়ে খেলতাম আমরা। সাতচারা তে তো বল ছুড়াছুড়ির ফাঁকে ফাঁকে ভেঙ্গে যাওয়া চারাগুলো আবার জায়গামতো বসিয়ে দিতে হয়৷ কিন্তু এখানে তো কোনো চারা নেই। তাই ইচ্ছে মতো যতক্ষণ ইচ্ছে, ততক্ষণ এই খেলাটা চালিয়ে নেয়া যায়৷ যেহেতু টেনিস বল দিয়ে খেলতাম, তাই গায়ে লাগলেও খুব বেশি ব্যাথা লাগগো৷ কিন্তু তার মানে এই না যে কখনো খুব বড় কোনো ব্যাথা পাই নি। অনেকবারই পেয়েছি, কিন্তু শৈশবের সময়ে এইসব ব্যাথা আমাদের কোনো ভাবেই দমিয়ে রাখতে পারতো না৷

যায় হোক, আজকের লেখার টপিক কিন্তু এই বিষয়ে না৷ প্রথম ছবিটা দেখেই বুঝতে পারার কথা যে কোন বিষয়ে লিখতে যাচ্ছি আজ৷ উপরের ছবিতে দুইজন পিচ্চি বাচ্চাকে মারবেল খেলতে দেখা যাচ্ছে৷ আজ সকালে এদের মারবেল খেলা দেখে অবাকই হলাম। কারণ শেষ কবে মারবেল খেলেছিলাম, মনে নেই৷ গত ১০-১২ বছরে চোখের সামনে কখনো কাউকে মারবেল খেলতে দেখেছি বলেও মনে পড়ে না৷ এরা কোত্থেকে এই খেলাটা শিখে আসছে, কে জানে! দুই ভাই মিলে মনের আনন্দে খেলে যাচ্ছে৷

এই বয়সে বাচ্চারা মোবাইলের প্রতি বেশি আকর্ষণ বোধ করে। আমার পরিচিত যাদের ছেলে মেয়ে আছে এই বয়সী, তাদের সবাইকেই সারাক্ষণ মোবাইল হাতে নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়৷ বাবা-মায়েরাও এখন আর এইসব বিষয়ে আপত্তি করে না৷ উনারা ভাবেন, মোবাইল হাতে নিয়ে বাসায় বসে থাকলেই ভাল৷ অন্তত বাইরে তো যাচ্ছে না৷ কোনো এক অদ্ভুত কারণে বর্তমান সময়ের বাবা-মায়েরা মনে করেন তাদের ছেলে মেয়েরা ঘরের বাইরে সময় কাটালেই বিপদে পড়বে, বা খারাপ হয়ে যাবে। এই ধারনার পেছনে বেশ কিছু শক্তিশালি যুক্তিও আছে, যেগুলো মোটেও ফেলে দেয়ার মতো না। কিন্তু কিছুটা সতর্ক থাকলে সেই সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি৷

যায় হোক, ছবিতে যে দুই পিচ্চি বাচ্চাকে দেখা যাচ্ছে, এরা কিন্তু অন্যদের মতো না। মোবাইল কিংবা টিভির চেয়ে এদের আগ্রহ বাইরের জগতের প্রতি বেশিই। সারাদিন টই টই করে পুরো এলাকা ঘুরে বেড়ায় আর একেক সময় নতুন নতুন জিনিস দিয়ে আসে। কিছুদিন আগে লাঠিম নিয়ে এসেছিল৷ যদিও তারা পারে না লাঠিম ঘুরাতে, কিবতু চেষ্টা করছিল। পরে অবশ্য আমি নিজেই তাদের লাঠিম ঘুরানো শেখাতে সাহায্য করেছিলাম৷ দুইজনের মাঝে বড়জন এখন মোটামুটি শিখে ফেলকেও ছোট জন এখনো শিখতে পারে নি৷ বলেছিলাম কিছুদিন চেষ্টা করার জন্য৷ কিবতু কিসের কী! লাঠিম ফেলে দিয়ে এখন মারবেল নিয়ে বসে পড়েছে৷

মারবেলটা অবশ্য আমার শেখাতে হয় নি। যেখান থেকে মারবেল পেয়েছে, সেখান থেকেই শিখে এসেছে৷ কথাবার্তা শুনে মনে হল গত দুইদিন এরা স্কুলেই তাদের কোনো এক বন্ধুর কাছ থেকে এই মারবেলগুলো নিয়ে এসেছে। ওদের আগ্রহ দেখে ভেবেছিলাম, কয়েকটা মারবেল কিনে দিই ওদের৷ কিন্তু আমাদের এলাকায় কোথাও মারবেল পাই নি৷ অথচ ছোটবেলায় বেশিরভাগ দোকানেই কাচের বয়ামের চেতর নানা রকমের সুন্দর সব মারবেলের কালেকশন দেখতাম। নরমাল মারবেলগুলো ১ টাকায় চারটা পাওয়া যেত। কিন্তু যেগুলো একটু বড় বা সুন্দর, সেগুলোর দাম দুই টাকা পর্যন্ত হত৷ কিন্তু সেসময় ২ টাকাও আমাদের জন্য অনেক বড় বিষয় ছিল। বাসায় কান্নাকাটি করেও মারবেল কেনার জন্য সেই টাকা আদায় করতে পারতাম না।

ছোটবেলায় আমাদের প্রিয় খেলা ছিল ক্রিকেট। ফুটবল শুধু বর্ষাকালে খেলা হত। আর ব্যাডমিন্টন তো শীতকাল ছাড়া কখনো খেলি নি। কিন্তু ক্রিকেটটা সারা বছরই খেলা হত। তবে মারবেলটা অবশ্য সবসময় খেলা হত না৷ মাঝে মাঝে টুকটাক খেলা হত। তবে রমজান মাসে মারবেলটা বেশি খেলা হত। কারণ এই খেলায় কোনো পরিশ্রম নেই। সময়গুলোও খুব সুন্দর পার হয়ে যেত। এখন তো আর সেই সময় নেই। মোবাইল হাতে নিয়েই ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার করে দিতে পারি৷

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
2 Comments
Ecency