আমাদের গল্পগুলো: সিফাতের সাথে একদিন।

img_0.10833842689047102.jpg

আজকে পরিচয় করিয়ে দিব আমাদের অফিসের ড্রাইভার সাহেবের সাথে। ভদ্রলোকের নাম সিফাত। বিয়স ৩০-৩২ এর মতো হবে। ছোট এক মেয়ের বাবা সে। এক মেয়ের বাবা হয়ে গেলেও ভদ্রলোকের বাচ্চামি এখনো কমে নি। তার সাথে যতক্ষণ থাকি, হাসতে বাধ্য হই। খুব মজার মজার কথা বলে লোক হাসাতে উস্তাদ সে। তাই শত মন খারাপের মাঝেও যতক্ষণ এই লোকের সাথে থাকি, মন ঠিকই ভাল হয়ে যায়।

কাজের প্রয়োজনে মাঝে মাঝে বিভিন্ন কারখানায় যেতে হয় আমার। তো আজকে দুপুরে গাজীপুরের চন্দ্রায় গিয়েছিলাম। সেখানকার এক ফ্যাক্টরিতে ইদের পর AOP এর কাজ শুরু হবে। AOP মানে All Over Print। অর্থাৎ কোনো ফ্যাব্রিক্স/কাপড়ের পুরো বডিতে যে প্রিন্ট করা হয় আর কি। তো আজকে ফ্যাক্টরি ভিজিটে গিয়েছিলাম মূলত অডিট করার জন্য।

img_0.8642325972068075.jpg
আমাদের AOP SAMPLE

তেমন বেশি কোনো কাজ না। শুধু ফ্যাক্টরির ওয়ার্কার, কাজের ধরন, ডেইলি প্রোডাক্টশনের পরিমান ইত্যাদি টাইপড কাজ চেক করলেই হবে। অন্যান্য দিন আমার সাথে আমার কলিগ থাকলেও আজকে আমি একাই ভিজিটে বের হয়েছি। আর সাথে তো আমাদের ড্রাইভার, সিফাত সাহেব ছিলই।

এই লোকের আচরণে আমি প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হই। মুখের সারাক্ষণ হাসি লেগেই আছে। দেখে মনে হবে এই লোকের জীবনে সুখের শেষ নাই। আমরা টানা কয়েক ঘন্টা কাজ করলে ক্লান্ত শ্রান্ত কিংবা বিরক্ত হয়ে পড়ি। অথচ এই লোক প্রতিদিন ১৩-১৪ ঘন্টা ডিউটি করেও হাসিমুখে আমাদের সবার সাথে কথা বলে, খোঁজ খবর নেয়। আর সুযোগ পেলেই মজার সব গল্প বলে বেড়ায়।

প্রতিদিন ১৩-১৪ ঘন্টা ডিউটি কিন্তু মুখের কথা না। রাস্তা ঘাটে জ্যাম থাকলে তো কখনো কখনো ১৬-১৭ ঘন্টাও ডিউটি করতে হয়। দেখা গেল যে কোথাও থেকে ফিরতে ফিরতে রাত ২ টা বেজে গেল, কিন্তু পরদিন সকাল ৮ টায় ঠিকই অফিসে ঢুকতে হবে। এই যে কষ্টটা, এটা কিন্তু আমাদের সিফাত সাহেবের একার না। বরং গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করা প্রতিটা শ্রমিক/কর্মচারীর জন্য এইটা প্রযোজ্য।

img_0.4105436698272486.jpg

ক্রীতদাস মানে যে দাসকে মালিক অর্থের বিনিময়ে কিনে নিয়ে নিজের কাজ করায়। এখন এই আধুনিক যুগে তো মানুষ কিনে দাস বানানোর সুযোগ নেই। এখন প্রতি মানে বেতনের মাধ্যমে ওয়ার্কার/স্টাফ হায়ার বা ভাড়া করে নেয়া হয়। আপনাকে এক মাসের বেতন দিচ্ছে মানে পুরো এক মাস আপনাকে একপ্রকার বাধ্য হয়ে কোম্পানির সব ধরনের কাজ করে দিতে হবে।

আমি যখনই কোনো কারখানায় যাই, সুযোগ পেলে ঐ কারখানায় কর্মরতদের সাথে কথা বলি। সত্যি কথা বলতে কী, আমার ২ বছরের চাকরি জীবনে খুব কম মানুষকেই দেখেছি, যারা তাদের কর্মস্থল নিয়ে সন্তুষ্ট। প্রত্যেকের অভিযোগের শেষ নেই। সবার অভিযোগেই বেশ কিছু কমন বিষয় আছে। যেমন অতিরিক্ত কর্মঘন্টা ও অনিয়মিত বেতন ভাতা পরিশোধ। তবে অতিরিক্ত কর্মঘন্টা সবাই মেনে নিলেও মাস শেষ যখন কেউ তার প্রাপ্য বেতন পায় না, তখন তার পক্ষে সেটা মেনে নেয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়, তাই না?

তবে আমাদের সিফাত সাহেবের মুখে কখনোও এমন অভিযোগ শুনি নি। কখনো আলসেমি করতেও দেখি নি। সারাক্ষণ প্রস্তুত কাজের জন্য। এধরনের মানুষকে সবাই পছন্দ করে, তাই না?

img_0.710698467639972.jpg

আজকের পরিবেশটা সুন্দর ছিল। আর যে ফ্যাক্টরিতে গিয়েছিলাম, সেটাও অনেক সুন্দর। ফুল গাছ আছে ভেতরে। আর একদম পেছনে ছোট খাটো একটা পুকুরও আছে। অনেক দিন পুকুরে গোসল করি নি, সাঁতার কাটি নি। চোখের সামনে এত সুন্দর ও পরিষ্কার পুকুর দেখে লোভ সামলাতে খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। তবুও কাজে যেহেতু আসছি, এতটা বাচ্চামি করলেও মানায় না। তাই নিজের লোভ সামলে নিয়েছিলাম।

img_0.4919303746237424.jpg

আমার আজকে তেমন কোনো কাজ ছিল না। তাই অডিট শেষে কিছুক্ষণ পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে ছিলাম। আর সিহাবের কথা শুনছিলাম। সে তার ব্যাক্তিজীবনের গল্পগুলো বলছিল। যদিও সব মজার গল্পই ছিল। তার গল্পে কোনো আক্ষেপ, অভিযোগ কিংবা অনুযোগের স্থান নেই...

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
2 Comments
Ecency