উলচাপাড়ায় আবারও...

গত বছরের কোনো এক লেখায় আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটা গ্রামের কথা বর্ননা করেছিলাম। মাত্র কয়েক ঘন্টা ছিলাম সেখানে। অথচ ছবির মতো সুন্দর সেই গ্রামটি আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছিল। গ্রামের রাস্তা ধরে যখন ঘুরাঘুরি করছিলাম, তখন প্রকৃতির সৌন্দর্যে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। বার বার শুধু মনে হচ্ছিল, "ইশ, আমাদের দেশের গ্রামগুলো কত সুন্দর!" সেই সৌন্দর্যের টানে গতকাল আবারও সেই গ্রামে গিয়েছিলাম।

img_0.8878711099864264

গ্রামটির নাম ছিল উলচা পাড়া। এই গ্রামের ইতিহাস অবশ্য অনেক পুরানো। বিশেষ করে এখানে একটু পুরানো মসজিদ আছে। মসজিদের নির্মাণ কৌশল ও মসজিদে ব্যবহৃত ইট দেখে মনে হয় যে, মসজিদটি খুব সম্ভব সপ্তাদশ শতাব্দীতে নির্মিত । মসজিদে পাওয়া শিলালিপি পাঠ থেকে জানা যায় যে, ১১৪০ হিজী (১৭২৭-২৮ খ্রিঃ) সালে জনৈক পশ্চিম দেশীয় বনিক কর্তৃক মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল ।

এই মসজিদ ছাড়াও আরো কিছু কিছু সুন্দর স্থাপনা আছে এই গ্রামে। তবে এসব স্থাপনার চেয়েও আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষিত করেছিল মূলত এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ। উলচাপাড়ার অবস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে খুব বেশি একটা দূরে না। রিকশা করেই যাওয়া যায়। তবে আমরা গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে হেঁটে হেঁটেই সেই গ্রামে গিয়েছিলাম। এমনিতে বিকেল বেলা আমার খানিকটা হাঁটাহাটি করার অভ্যাস আছে। সেই সুবাদেই মূলত কাল হাঁটতে হাঁটতে আমি আর আমার এক বন্ধু মিলে উলচাপাড়ায় চলে গিয়েছিলাম।

img_0.36007227055659885

তবে প্রকৃতির দৃশ্য দেখতে গেলেও পাশাপাশি অন্য একটা দৃশ্যও দেখে ফেলেছিলাম কাল। উলচাপাড়ায় গিয়ে দেখি একটা মাঠের পাশে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। কৌতুহলবশত কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম ফুটবল খেলা চলছে। তাও আবার গ্রামের দুইটি ক্লাবের মাঝে। এধরনের ক্লাবের খেলার দর্শন এতবেশি হতে পারে বা আগ্রহের সাথে দেখতে পারে এখনো, সেটা ভেবেই অবাক লাগল।

ছোটবেলায় স্থানীয় পর্যায়ে এরকম টুর্নামেন্ট দেখতাম আমরা। এক ক্লাবের সাথে অন্য ক্লাব অথবা এক পাড়ার সাথে অন্য পাড়ার খেলা। এই টুর্নামেন্টগুলো নিয়ে স্থানীয় মানুষের উন্মাদনারও শেষ ছিল না। খেলা উপলক্ষে বাড়ি বাড়ি থেকে চাঁদা তোলা, বিভিন্ন ধরনের মেলা, আনন্দ উৎসব কোনো কিছুরই কমতি ছিল না। কিন্তু এখন তো আমরা সবাই ঘুরে ফিরে টিভি, কম্পিউটার আর মোবাইলের ভেতর আটকে পড়ে গিয়েছি।

img_0.46153098943434445

যায় হোক, গতকালকের ম্যাচটা ভালই উপভোগ্য ছিল। তবে একটা মজার কাহিনীও ঘটেছিল। মাঠের পাশে বেশ কয়েকটা নারকেল গাছ ছিল। এক প্লেয়ারের কিকে বল গিয়ে সোজা সেই নারকেল গাছগুলোতে গিয়ে পড়ে। সাথে সাথে ২ টা নারকেলও ঠাস করে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। ঠিক সেই মুহুর্তে দর্শকেরাও খেলা বাদ দিয়ে নারকেল গাছের দিকে দৌড় লাগিয়েছিল। কে কার আগে পড়ে যাওয়া নারকেলের দখল নিতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে।

তবে আরো একটা মজার ব্যাপার শেয়ার করা যেতে পারে। মাঠের পাশে একটা কুকুরের দিকে চোখ পড়েছিল। চুপচাপ এক কোনায় শুয়ে ছিল। ডোরাকাটা দাগের এই কুকুরটি হুট করে কারো চোখে পড়লে ভয় পেতে পারে যে কেউ। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো এরকম ডোরাকাটা কুকুর এই প্রথম দেখলাম। প্রথম দেখায় অবশ্য মনে হয়েছিল কেউ হয়তো মজা করে এরকম রঙ এঁকে দিয়েছে ওর পুরো শরীর জুড়ে। স্থানীয় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, তারা বলল যে কেউ নাকি এমনটা করে নি। যদিও আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না।

img_0.08170568456148196

আগেরবার যখন এই গ্রামে এসেছিলাম, তখন বৃষ্টি হয়েছিল খুব। এবার অবশ্য আবহাওয়া কিছুটা ভিন্ন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহরের দিকে অনেক বেশি গরম হলেও গ্রামের ভেতর ঢুকার পর শীতল একটা আবহাওয়ার স্বাদ পাওয়া গিয়েছিল। রাস্তার পাশে ছোট একটা বাঁশের মাচা পেয়ে আমরা সেই মাচাতে বসে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়েছিলাম। যেহেতু সামনের দিকটা একেবারেই ফাঁকা ছিল, তাই অনেক বাতাস পাওয়া যাচ্ছিল। সত্যি বলতে অসাধারন কিছু সময়।

img_0.8691241476969646

আমরা প্রায় ঘন্টাখানেকের মতো সেখানে বসে টুকটাক আড্ডা দিয়েছিলাম। সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাতটার দিকে আমরা শহরের উদ্দেশ্যে ফিরে চলি। এবারও হেঁটে হেঁটেই শহর পর্যন্ত ফিরে আসি। কারণ বিকেলের দিকে বের হওয়ার মূল উদ্দেশ্যই ছিল কয়েক কিলোমিটার হাঁটাহাটি করা। সেই উদ্দেশ্য তো সফল হয়েছেই, পাশাপাশি সুন্দর কিছু দৃশ্যও অবলোকন পেরেছি আমরা।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
4 Comments
Ecency