ভিক্টোরিয়া কলেজ : শতবর্ষের ঐতিহ্য!

কুমিল্লা একসময় ত্রিপুরার অংশ ছিল। এরপর তা চলে যায় ব্রিটিশদের হাতে৷ শিক্ষা দীক্ষা কিংবা যে কোনো ক্ষেত্রেই তৎকালীন বৃটিশ ভারতে কুমিল্লার বেশ ভালই নামডাক ছিল। ইতিহাসের পাতায় খানিকটা খুঁজলেই উপরিউক্ত কথার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যাবে৷ কুমিল্লা শহরের চারপাশে নানা রকমের প্রাচীন স্থাপনা, জমিদার বাড়ি, দিঘী এখনোও ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কুমিল্লার বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া কলেজ তেমনই একটি প্রাচীন স্থাপনা৷

img_0.14149567631897594

১৮৯৯ সালে রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় রানী ভিক্টোরিয়ার নামে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ঠিকাদারি পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং শিক্ষা-অনুরাগী ছিলেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছেন। কলেজ প্রতিষ্ঠার আগে অবশ্য একই নামে একটি স্কুল নির্মান করেছিলেন তিনি ১৮৬৬ সালে। শুরুতে অবশ্য সেই স্কুলের নাম ছিল রায় এন্ট্রাস স্কুল। পরবর্তীতে বিষয়টি বিষয়টি ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তাকে শিক্ষানুরাগী হিসেবে পুরষ্কৃত করার জন্য মনোনীত করা হয়। ঐ অনুষ্ঠানে তাকে ”রায় বাহাদুর” উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এই কারণেই ১৮৮৬ সালে তার প্রতিষ্ঠিত রায় এন্ট্রাস স্কুল এর নাম পরিবর্তন করে মহারানী ভিক্টোরিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করার জন্য কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল নামকরণ করেন।

যায় হোক, এ তো গেল ইতিহাসের কথা। এবার বর্তমানে ফিরে আসা যাক৷ আমার কলেজ ও অনার্স জীবন এই ভিক্টোরিয়া কলেজেই কাটিয়েছি৷ সব মিলিয়ে প্রায় ৭ বছরের মতো এই কলেজে আমার জীবন পার হয়েছে৷ কত শত স্মৃতি যে পুরো কলেজ ক্যাম্পাস জুড়ে মিশে আছে, যা বলে শেষ করা যাবে না৷

img_0.9210602676866957

প্রথম যেদিন এই কলেজের ক্যাম্পাসে পা রেখেছিলাম, সে দিনটার কথা আমার এখনোও স্পষ্ট মনে আছে৷ বান্দরবানের ছোট এক মফস্বল শহর থেকে বের হয়ে সেদিনই প্রথম এরকম বড় কোনো শহরের প্রথমবারের মতো এসেছিলাম। চোখে মুখে ছিল রাজ্যের বিস্ময়৷ হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর পদচারনায় মূখর এই কলেজটিতে পড়তে পারব নাকি পারব না, সেই আশংকা তো ছিলই৷ তবুও মনের মাঝে ক্ষীণ একটা আশা ছিল।

আমার আশা অবশ্য শেষ পর্যন্ত বিফলে যায় নি৷ এই কলেজের সাথেই জড়িয়ে পড়েছিলাম পুরোদমে৷ এই ফাঁকে একটা কথা বলে রাখি৷ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ক্যাম্পাস দুইটি৷ একটি কান্দিরপাড়ে, অন্যটি ধর্মপুরে৷ কলেজের কান্দিরপাড়ের শাখায় শুধুমাত্র স্কুল ও ইন্টার পর্যন্ত ক্লাস করানো হয়৷ আর ধর্মপুরে অনার্স ও মাস্টার্স দুইটাই। সে হিসেবে কান্দিরপাড়ের চেয়ে অনার্স শাখাটির আয়তন অনেক বড়। তবে ইন্টার শাখাটি অনেক পুরানো৷ সেই তুলনায় অনার্স শাখা অপেক্ষাকৃত নতুনই বলা চলে।

img_0.28421937654881724

আমাদের কুমিল্লার আশেপাশে নিরিবিলি সময় কাটানোর সুযোগ ও স্থান, খুবই অপ্রতুল৷ কুমিল্লা শহরটা আয়তনে ছোট হলেও মানুষের সংখ্যা বেশি৷ ঘিঞ্জি মার্কা একটা পরিবেশ তৈরি হয়ে গিয়েছে গত কয়েক দশক ধরে৷ ফলে শহরের ভেতর খোলামেলা জায়গা খুব কমই আছে৷ ভিক্টোরিয়া কলেজের ধর্মপুর শাখার ক্যাম্পাসটি ঠিক তেমনই একটি খোলামেলা স্থান।

img_0.6534326202036267

আমি সুযোগ পেলে প্রায়ই এই ক্যাম্পাসে চলে আসি৷ একা একা হাফাহাটি করি৷ খারাপ লাগে না৷ এলাকার মানুষেরাও প্রতিদিন বিকেলে এখানে সময় কাটাতে আসেন৷ জায়গাটা সবার জন্যই উন্মুক্ত৷ তবে মেইন শহর থেকে খানিকটা দূরে হওয়ার কারণে এখানে খুব বেশি একটা মানুষের জমায়েত হয় না৷ ফলে ক্যাম্পাসটি তার নিজের সৌন্দর্য্য ধরে রাখতে পেরেছে সাবলীল ভাবে।

img_0.7004239224174226

img_0.623117639787128

আজ বিকেলে আমি ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। কোনো কাজে অবশ্য না। এমনিতেই হাটাহাটি করার জন্য৷ হাঁটতে ভালই লাগে আমার। পাশাপাশি নিজের স্মৃতি বিজড়িত কোনো এলাকায় একা একা চুপচাপ সময় কাটাতে কার না ভাল লাগে? আমার তো অবশ্যই ভাল লাগে। আর ঠিক এই উদ্দেশ্যেই ক্যাম্পাসে যাওয়া৷

প্রায় ঘন্টাখানেকের মতো পুরো ক্যাম্পাসের অলিতে গলিতে হেঁটে বেড়িয়েছি। খারাপ লাগে নি৷ মনে হচ্ছিল আবারও সেই পুরানো কলেজ জীবনে ফিরে যেতে৷ কিন্তু সেই সুযোগ তো আর নেই৷ তবে একটা কথা মনে মনে ভেবে খুব হাসি পাচ্ছিল। আবারও যদি কখনো কলেজ জীবনে ফিরে যেতে পারতাম, তবে হয়তো আগের মতোই ফাঁকিবাজি করে সময় পার করে ফেলতাম।

img_0.04323631825526465

যায় হোক, সবমিলিয়ে বিকেলটা বেশ ভালই কেটেছে৷ কাল গ্রামে চলে যেতে হবে ইদ উপলক্ষে। ৩-৪ দিন সময় তো গ্রামে থাকা হবেই৷ এই ঘিঞ্জি মার্কা শহরটাকে সে পর্যন্ত মিস করব।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
2 Comments
Ecency