Describe Your PARA:[নিজেকে খুঁজে পাই]

ও মামা তুমি কেমন আছো?
আমারে চিনছো নাকি? তোমারে অনেক বছর ধরেই পাড়াতে দেখিনাই।

CollageMaker_20200625_094224661.jpg

আমি তোমারে ভুলি নাই যে, শৈশবকাল থেকেই আমি এই পাড়াতে আছি।পাড়ার মানুষদের কি আর ভুলে থাকা যায়। সব স্মৃতি যে জড়িয়ে আছে তোমাদের সাথে। মনে নাই মায়ের সাথে যখন বাজারে যেতাম তোমার বাড়ির কলিং বেলটি বাজিয়ে লুকিয়ে পড়তাম। তুমি একদিন অনেক বোকাবুকি করছিলা তোমাদের বাড়ির কলিং বেল বাজাতাম বলে। সেদিন আমি কাঁদতে -কাঁদতে বাড়িতে গেছিলাম। আজও ভুলি নাই সেই কথা।

IMG_20200625_073137.jpg

এতেই কি আর শেষ,
প্রায় ২০ বছর হয়ে গেল এ পাড়াতে থাকার। এখন আর আগের মতো দুষ্টু নই আমি। এইতো বর্ষাকাল এসেই গেলো কিন্তু পড়ার সবাই এখন আর আগের মতো মাছ ধরে না। চারপাশে এতো বাড়ি -ঘর, পুকুর ছাড়া মাছ ধরার জায়গায় নেই। কয়েক বছর আগে সবাই জাল,বর্সি কেউ বা মশারী দিয়ে মাছ ধরছিলো। আর আমি দৌড়ে গিয়ে দেখতাম কে বেশি মাছ ধরতে পেরেছে। দিনরাত ওখানেই থাকতাম। আর আবির ফাহিমরা কলাগাছ কেটে ভেলা বানিয়ে ছিলো। ওপাড়ে পার করতে ৫ টাকা করে নিছিলো। ভালোই টাকা পাইছিলো। এই বর্ষায় মনে হয় না কেউ মাছ ধরবে।

আগের মতো দিন গুলো কি আর ফিরে পাওয়া যায়।সবাই ঘরবন্দি থাকতেই পছন্দ করে। এখন আর গল্পের আসর পথে ঘাটে দেখা যায় না। এবার আম্পান ঘূর্নি ঝড়ে রহিম চাচার সব ধান তলিয়ে গেছে।
বাড়ির সবাই খুব কষ্টেই আছে। মনে হয় না রহিম চাচা আর ধান আবাদ করবে। ফসল নষ্ট হওয়ার শোকে জমি ওপাড়ার রহিতের কাছে বিক্রি করে দিছে। সেই টাকা দিয়েই রহিম চাচা হাটে সবজির দোকান দিছে।

কয়েদিন আগে বুনি আসছিলো আমাদের বাড়িতে ওদের গাছের আম দিতে। যখনই ওদের গাছের আম পারে তখনই পাড়ার প্রত্যেকের বাড়ি গিয়ে আম দিয়ে আসে। এদিক দিয়ে পাড়ার মানুষের মন মানসিকতা বড়ই ভালো। এইতো রমজানেই সবাই সবার বাড়িতে গিয়ে ইফতার দিয়ে এসেছিলো। কি আর বললো লতা দিদির ছেলে লিখন আর লিমন রাস্তায় হাটছিলো তখনই লিমনের পায়ে কাঁচের টুকরো দিয়ে পা কেটে যায়।লিমনরে হাসপাতালে নিয়ে গেছিলো। ৩ দিন ওখানেই ছিলো। লিমন এবার এস.এস সি পরিক্ষায় ৫+ পেয়েছে।
ওর মা সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়ে ছিলো।

ঠিক আগের মতো এবারো ২১শে ফেব্রুয়ারির দিন বড় মাঠে খেলাধুলার প্রতিযোগীতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলো। ৯ টা থেকেই পাড়ার সবাই বড় মাঠে উপস্থিত ছিল। ছোট ছেলে -মেয়েরা দৌড়, রশি খেলায় অংশগ্রহণ করেছিলো। বিচারক হিসেবে ২ জন পাড়ার মুরব্বিকে রেখেছিলো। তারপরই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনেকেই বক্তৃতা দিয়েছিলো আর তাদের মধ্যে একজন বলেছিলো বছর শেষ হওয়ার আগেই রাস্তার কাজ শেষ করা হবে। একথা শুনে সবাই হাত তালি দিলো। প্রায় ২ বছর ধরে রাস্তা ঠিক করার কাজ চলছিলো। অবশেষে এই কথা শুনে সবাই খুশি হয়েছে। তারপর ছোট ছোট মেয়েরা দেশের গান,নাচ পরিবেশ করেছে। এভাবেই দিনটি সবাই একসাথে উপভোগ করেছে।

এখনও অনেক বাড়ির ছাদে, আর দেয়ালে আর্জেন্টিনার আর ব্রাজিলের পতাকা ঝুলতে দেখা যায়।
ফুটবল খেলার আমি কিছুই বুঝি না। কিন্তু খেলা শুরু হলেই পাড়ার মানুষেরা আনন্দে মেতে উঠে। কেউ বলে ব্রাজিল জিতবে আর কেউ বা বলে আর্জেন্টিনা জিতবে।যেই দলই জিতুক রাতে উল্লাসের মিছিল চোখে পড়বেই। পাড়ার প্রত্যেকেই একে অপরের সুখে দুঃখে পাশে থাকে।পাড়ার গল্প বলে কি শেষ করা যায়।অনেক নতুন মানুষের মুখ দেখতে পাওয়া যায় আর অন্যদিকে চেনা মানুষদের আমরা হারিয়ে ফেলছি।

আর কয় বছরই বা এই পাড়াতে থাকতে পারবো তা আমার জানা নেই।কিন্ত শৈশব কাল থেকে এখন পর্যন্ত এই পাড়ার আনাচে -কানাচে আমার স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
সেগুলো ভুলে যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়।আমার ইচ্ছে শেষকাল অব্দি আমি যেন এ পাড়ার মানুষদের সাথে থাকতে পাড়ি।

আমি নিহা। @BD community আয়োজিত কনটেষ্টে অংশগ্রহণ করতে পেরে খুব ভালোই লাগছে। তাই গল্পের মাধ্যমে আমি আমার পাড়ার বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

20200608_115836-3.gif

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
11 Comments
Ecency